আমেরিকা চিনের শুল্কযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করল। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এবার চিনা পণ্যের আমদানির উপর ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করল। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস একটি ফ্যাক্ট শিট প্রকাশ করে চিনা পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বেজিংয়ের সাম্প্রতিক রপ্তানি বিধিনিষেধ এবং শুল্ক ক্ষেত্রে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসাবে এই পাল্টা পদক্ষেপ করা হয়েছে।
বিশেষত, চিনা বিমান সংস্থাগুলির নতুন বোয়িং জেট অর্ডারের উপর নিষেধাজ্ঞা-সহ বেজিংয়ের একাধিক ক্ষেত্রে আগ্রাসী পদক্ষেপের প্রতিশোধ হিসাবে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।এর আগে গত ১১ এপ্রিল চিন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছিল। এরপর ট্রাম্প চিনা আমদানির ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা করেছিলেন। আর এবার চিনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়তে বাড়তে ২৪৫ শতাংশের গণ্ডি ছুঁয়ে ফেলল।
শুল্কযুদ্ধের এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে ফের চিনকে সমঝোতার পথে হাঁটার বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এখন যা করার চিনকেই করতে হবে। আমেরিকা কোনও অবস্থাতেই মাথা নত করবে না। আমেরিকা-চিন শুল্কযুদ্ধের আবহে এক সাংবাদিক বৈঠকে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উদ্ধৃত করে এই মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ মার্কিন প্রেসিডেন্ট চিন সম্পর্কে তাঁর অবস্থান ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বল এখন চিনের কোর্টে। ওদের আমাদের সঙ্গে সমঝোতা করা উচিত, আমাদের নয়।’ প্রেস সচিব আরও বলেন, চিন আকারে অনেক বড় হলেও বিশ্বের অন্য কোনও দেশের থেকে আলাদা নয়। তাই তাদের উপর শুল্ক চাপানোর ক্ষেত্রে কোনও বিশেষ ছাড় দেবে না আমেরিকা।
চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিনা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর থেকে এই দ্বন্দ্বের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়।চিন মার্কিন আমদানির উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর পাশাপাশি উচ্চমাত্রার প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূল খনিজ সম্পদের রপ্তানি আরও কঠোর করেছে। মার্কিন প্রশাসনের অভিযোগ, গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম এবং অ্যান্টিমনিসহ গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ প্রযুক্তির উপকরণের সরবরাহ সীমাবদ্ধ করেছে চিন। সামরিক, মহাকাশ এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এগুলি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ছয়টি ভারী বিরল ধাতু এবং বিরল চুম্বকের রপ্তানি স্থগিত করেছিল চিন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন, ‘চিন যুদ্ধ করতে চায় না, কিন্তু যুদ্ধ করতে ভয় পায় না।লিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই এই সমস্যার সমাধান করতে চায়… তাহলে তাদের উচিত হুমকি দেওয়া বন্ধ করা এবং চিনের সঙ্গে সমতা, সম্মান ও পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে কথা বলা।’ মার্কিন শুল্ক আরোপের আগেই আমেরিকাকে তোপ দেগে চিন বলেছিল, ‘ভুলের উপর ভুল করছে আমেরিকা। আরও এক বার আমেরিকার ব্ল্যাকমেল করার চরিত্র প্রকাশ্যে চলে এল।’ চিনের সাফ কথা, ‘যদি আমেরিকা এই ভাবেই চলার কথা ভাবে, তবে চিনও শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।’
এদিকে মার্কিন শুল্কের অপব্যবহার রুখতে ভারতের সাহায্য চেয়েছিল চিন। একসঙ্গে মার্কিন শুল্ক সংক্রান্ত ভয়কে প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে দিল্লিকে বার্তাও দিয়েছিল বেজিং। ভারতে অবস্থিত চিনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইউ জিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছিলেন, চিন-ভারত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পারস্পরিক সমঝোতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের অপব্যবহারে দেশগুলো তাদের উন্নয়নের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে বিশ্বের দুই বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশের একত্রিত হওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের ৫৭টি দেশের ওপর শুল্ক চাপিয়ে নিজের দেশকেও মন্দার দিকে ঠেলে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর জেরে গত সপ্তাহের শেষে মার্কিন শেয়ার বাজারে ধস নামে। সেই সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বলেছিলেন, ‘এটাই বড়লোক হওয়ার সময়।’ তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘আমার শুল্ক নীতিতে কোনও বদল হবে না।’ পরে প্রায় সব দেশের ওপরেই অতিরিক্ত শুল্ক আপাতত ৯০ দিনের জন্যে স্থগিত করেন ট্রাম্প। যদিও চিনের ওপর শুল্ক বাড়িয়েই চলেছেন ট্রাম্প।
চিনের বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আমেরিকার উচিত নতুন শুল্কনীতি থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে আসা। বাড়তি শুল্ক ‘পুরোপুরি বাতিল’ করার আহ্বানও জানানো হয়েছে। তবে আমেরিকার বিরুদ্ধে শুল্কযুদ্ধে চিনও যে পিছু হটবে না, তাও স্পষ্ট করেছে বেজিং। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জিয়ান জানান, তাঁর দেশ বসে থাকবে না। চিনের নাগরিকদের বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে দেবে না তাঁর প্রশাসন। উভয় পক্ষের এই কঠোর অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, আমেরিকা-চিন শুল্কযুদ্ধ এখন তার সবচেয়ে অস্থির পর্যায়ে প্রবেশ করতে চলেছে।