সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরে বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু চেনাব রেলব্রিজ উদ্বোধনের পর নাম ছড়িয়েছে মোদী সরকারের। এই অসাধ্য সাধন করার জন্য গোটা দেশ যখন মোদী ভজনায় ব্যস্ত, তখন এই সেতু তৈরির নেপথ্যে থাকা অন্যতম মুখ প্রফেসর জি মাধবী লতা প্রচারের আড়ালেই থাকতে চাইছেন। তিনি বলছেন, ‘অনুগ্রহ করে আমাকে অহেতুক বিখ্যাত করবেন না।’ এই সেতু নির্মাণের নেপথ্যে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের শ্রদ্ধা জানিয়ে লতা বলেন— ‘আমি তো নিমিত্ত মাত্র। বাকিরাও সমান কৃতিত্বের অধিকারী।’
কিন্তু একক কৃতিত্ব হিসেবে তাঁর নাম নিয়ে চর্চা শুরু হতেই বেজায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন জি মাধবী লতা। তাঁকে যখন ‘দ্য ওম্যান বিহাইন্ড দ্য মিশন’ এবং ‘মিরাকেল ওয়ার্কার’ বলে একাধিক সংবাদপত্র প্রচার করছে, তখন লতা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, তাঁকে যেন খামোখা বিখ্যাত না করা হয়। তাঁর কথায়, “আমি তো হাজার হাজার মানুষের মধ্যে একজন মাত্র। এই সেতু নির্মাণে যাঁদের অবদান রয়েছে, সবাই প্রশংসার দাবিদার।”
এ ব্যাপারে লতা লিঙ্কডইনের একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘অনেক বাবা লিখেছেন, তাঁরা চান তাঁদের মেয়েরা আমার মতো হোক। অনেক ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে জানিয়েছে, তারা এখন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। এসব শুনে খুব ভাল লাগছে। তবে সমস্ত কৃতিত্বই ভারতীয় রেল এবং আফকনসের। অসম্ভবকে সম্ভব করেছে ওরাই।’
জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের এইচএজি অধ্যাপিকা ড: জি মাধবী লতা। তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এই চেনাব সেতু প্রকল্পের নির্মাতা সংস্থা আফকনস-এর ভূগর্ভস্থ প্রকৌশল বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তিনিই স্লোপ স্টেবিলেশন থেকে শুরু করে পাহাড়ি অঞ্চলে ভিত নির্মাণের নকশা তৈরির মতো কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।
সম্প্রতি লতা একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে স্পেনে গিয়েছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, “চেনাব সেতু আমার জীবনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ও আনন্দের প্রকল্প। কিন্তু এটা শুধু আমার একার গল্প নয়। হাজার হাজার ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার, শ্রমিক, প্রযুক্তিবিদের সম্মিলিত জয়।”
উল্লেখ্য, উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল প্রকল্পের অংশ হিসেবে তৈরি হয়েছে চেনাব রেল সেতু। কঠিন ভূপ্রকৃতি, ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল আর অনিশ্চিত মাটির গঠন— সব মিলিয়ে এই প্রোজেক্ট ছিল অত্যন্ত জটিল। সেখানে ভূমিখণ্ডে ফাটল, গোপন গহ্বরের মতো সমস্যার মুখে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল নির্মাণকারী দলকে। চন্দ্রভাগা নদীর ৩৫৯ মিটার ওপর দিয়ে যাওয়া এই চেনাব সেতুটি আজ শুধু ভারতের নয়, গোটা বিশ্বের কাছে প্রযুক্তির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।