• facebook
  • twitter
Friday, 13 June, 2025

মোদীকে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনায় বসার প্রস্তাব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বৃহস্পতিবার জম্মু-কাশ্মীরে গিয়ে স্পষ্ট করে দেন, ইসলামাবাদের দাবি মতো কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ক‌োনও আলোচনা হবে না।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। দাবি করেছে পাকিস্তানের এক সংবাদমাধ্যম। শরিফ বলেছেন, দুই দেশ বসে আলোচনা করুক। এর আগে কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের আলোচনায় বসার বিষয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন ভারত স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছিল, কাশ্মীর নিয়ে আলোচনায় তৃতীয় কোনও পক্ষের হস্তক্ষেপ মানা হবে না। এবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতকে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। পাশাপাশি, সিন্ধু চুক্তি নিয়েও আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন শরিফ, এমন দাবিও করা হয়েছে ওই সংবাদমাধ্যমে।

‘ডন’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, বুধবার পাকিস্তানের শিয়ালকোটের পাসরুর ক্যান্টনমেন্টে গিয়েছিলেন শাহবাজ। সেখানে গিয়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন তিনি। পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতের সঙ্গে সংঘাতে তাদের জয় হয়েছে। যদিও ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তানের এটা ‘পুরনো অভ্যাস’। হারলেও তারা নিজেদের ঢাক পেটায়। শাহবাজ যদিও বুধবার পাসরুর ক্যান্টনমেন্টে গিয়ে নিজের পুরনো দাবিতেই অনড় থেকেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে তাঁরা যে ‘অপারেশন বুনিয়ান-আন-মারসুস’ করেছেন, তা সফল হয়েছে। সেই প্রসঙ্গেই তিনি কাশ্মীর বিষয়ে ভারতকে আলোচনায় বসার ডাক দিয়েছেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে ‘ডন’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী মোদীর উদ্দেশে বলেছেন, ‘চলুন, এই আগুন আমরা প্রশমিত করি। একসঙ্গে বসে কাশ্মীর এবং জল নিয়ে আলোচনা করি।’ এর পরেই সেনাছাউনিতে দাঁড়িয়ে শাহবাজ নাম না করেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ এবং আলোচনা, উভয়ের জন্যই প্রস্তুত। এবার অভিমত আপনার।’

অন্যদিকে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক মঙ্গলবারই জানিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তান সীমান্তে সন্ত্রাসে বন্ধ না করলে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিতই থাকবে। সেই বিষয়েও এদিন কথা বলেছেন শাহবাজ। শাহবাজ বলেছেন, ‘আমাদের নির্দেশ দেবেন না। আমাদের জল বন্ধের চেষ্টাও করবেন না। হ্যাঁ, জল এবং রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না। আমাদের নীলম-ঝিলম জলপ্রকল্পেও আপনারা আঘাত হেনেছেন। আঘাত তীব্র হলে আমরা আপনাদের বড় বাঁধগুলি ধ্বংস করতে পারতাম।’ প্রসঙ্গত, পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরের দিনই সিন্ধুচুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা করেছিল ভারত। যুদ্ধবিরতির পরেও ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক স্পষ্টই জানিয়েছে যে, যতক্ষণ না পাকিস্তান সীমান্তে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ করছে, ততক্ষণ এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।

প্রসঙ্গত, ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা লক্ষ্য করে ড্রোন হামলার চেষ্টা করে পাকিস্তান। ভারত সেই চেষ্টা ব্যর্থ করেছে। যদিও তারপরেও পাকিস্তান দাবি করে গিয়েছে, তারা নিজেদের ‘অভিযানে সফল’।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প নিজের সমাজ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন, ‘কাশ্মীর সমস্যা’র সমাধানের যাতে একটি রাস্তা বেরিয়ে আসে, তার জন্য ভারত-পাক উভয় দেশের সঙ্গেই কাজ করতে আগ্রহী তিনি।

ট্রাম্প নিজের সমাজ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন, ‘কাশ্মীর সমস্যা’র সমাধানের যাতে একটি রাস্তা বেরিয়ে আসে, তার জন্য ভারত-পাক উভয় দেশের সঙ্গেই কাজ করতে আগ্রহী তিনি। তিনি এ-ও দাবি করেছিলেন যে, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমিত করতে আমেরিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। ভারত ট্রাম্পের প্রস্তাব পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে ট্রাম্পের মধ্যস্থতা করার দাবিও মানেনি ভারত। পাকিস্তান যদিও ‘মধ্যস্থতা’-র জন্য আমেরিকাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বৃহস্পতিবার জম্মু-কাশ্মীরে গিয়ে স্পষ্ট করে দেন, ইসলামাবাদের দাবি মতো কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে ক‌োনও আলোচনা হবে না। তিনি বলেন, ‘কথা হবে সন্ত্রাসবাদ আর পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে।’ যুদ্ধবিরতির পর এদিন কাশ্মীরের শ্রীনগরে বাদামি বাগ সেনাছাউনিতে গিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

পাশাপাশি, সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের কাকুতি-মিনতিতে ভারত তার অবস্থান পালটাবে না বলে এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর কথায়, কাশ্মীর নিয়ে একটাই বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। সেটা হল পাক অধিকৃত কাশ্মীর খালি করা। এই আবহে এবার পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় সেদিকে তাকিয়ে কূটনৈতিক মহল।