শনিবার থেকেই রাজধানী দিল্লির আকাশ ঢেকে গিয়েছে ঘন কুয়াশায়। রবিবার সকাল থেকেই দৃশ্যমানতা নেমে আসে বিপজ্জনক স্তরে। বায়ু দূষণ ও কুয়াশার যুগলবন্দিতে নাজেহাল জনজীবন। আবহাওয়াবিদদের মতে, চলতি দশকের অন্যতম খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকা। এরই প্রভাব পড়েছে পার্শ্ববর্তী হরিয়ানাতেও। রবিবার সকালে ঘন কুয়াশার জেরে একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে।
সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে রোহতক জেলার খারকরা গ্রামের কাছে ট্রান্স-হরিয়ানা এক্সপ্রেসওয়েতে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সকাল প্রায় আটটা নাগাদ আম্বালা থেকে নারনৌলগামী এই মহাসড়কে প্রথমে একটি বাসের সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে। চারদিক ঢেকে থাকা ঘন কুয়াশার জেরে সামনে কী ঘটতে চলেছে, তা বোঝার আগেই একের পর এক গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে প্রায় দশ থেকে বারোটি যানবাহন একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান দু’জন। আহতদের উদ্ধার করে রোহতকের পিজিআই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার জেরে দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকে ওই মহাসড়কে।
Advertisement
একই দিনে ঝজ্জর জেলাতেও ঘটে আরেকটি দুর্ঘটনা। রেওয়ারি সড়কে কুলানা ও গুরুয়াদা গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় ঘন কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাক দেখতে না পেয়ে যাত্রীবাহী বাস সজোরে ধাক্কা মারে। বাসটিতে প্রায় পঞ্চাশ জন যাত্রী ছিলেন। চালক গুরুতর জখম হন এবং কয়েক জন যাত্রী সামান্য আহত হন। রাজস্থানের খাটু শ্যাম থেকে হরিয়ানার বাহাদুরগড় যাচ্ছিল বাসটি। আহত চালককে ঝজ্জরের পিজিআই হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
Advertisement
তবে কুয়াশার এই দাপট শুধু হরিয়ানাতেই থেমে নেই। পাঞ্জাবের একটি এলাকায় ঘন কুয়াশার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাড়ি খালে পড়ে যায়। তাতে মৃত্যু হয়েছে দু’জন স্কুল শিক্ষকের। সম্পর্কে তাঁরা স্বামী ও স্ত্রী বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয়দের মতে, ভোরের দিকে দৃশ্যমানতা এতটাই কম ছিল যে কয়েক হাত দূরের রাস্তাও দেখা যাচ্ছিল না।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, হরিয়ানা ও সংলগ্ন উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে। আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও নামতে পারে। পাশাপাশি ভোর ও সকালের দিকে ঘন কুয়াশা থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গাড়ি চালানোর সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবু পরপর দুর্ঘটনার ঘটনায় প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কুয়াশাপ্রবণ এলাকাগুলিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ও নজরদারি আরও জোরদার করা হলে প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হত। উত্তর ভারতের এই ভয়াবহ শীত ও কুয়াশা যে সাধারণ মানুষের জীবনে বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা রবিবারের ঘটনাগুলি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
Advertisement



