চরম অরাজকতার পরিস্থিতি গোটা বাংলাদেশ জুড়ে। ভেঙে পড়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা। বেড়ে চলেছে ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা। এই অরাজকতা এবং ধর্ষণের প্রতিবাদে দেশজুড়ে রাতভর বিক্ষোভে সামিল হন বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ও জনতা। রবিবার সকালেও ঢাকার রাস্তায় নেমেছে শিক্ষার্থীদের বিরাট মিছিল। এদিন ছাত্রীদের প্রতিবাদ মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার, দেশে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে— এমন একাধিক অভিযোগে সোচ্চার হয়ে ওঠেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত পড়ুয়ারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ক্যাম্পাসের ভিতরে ও বাইরে লাঠি হাতে মিছিল করছে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। দলের ভার্চুয়াল বৈঠকে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘বাংলাদেশে যেন ধর্ষণের উৎসব লেগে গিয়েছে।’
শনিবার গভীর রাত থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মধ্যরাতে হস্টেল থেকে বেরিয়ে পড়েন হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী। রাজপথের দখল নিয়ে ধর্ষকদের দ্রুত কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হন তাঁরা। পুলিশ-সহ নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অপদার্থতা ও গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। ফের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হন।
রবিবার পড়ুয়ারা অংশ নেন লাঠি মিছিলে। মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে, বাংলাদেশের মাটিতে কোনও ধর্ষকের স্থান নেই। দেশজুড়ে এই বিক্ষোভের আবহে স্বাভাবিকভাবেই চাপের মুখে ইউনূসের সরকার। রবিবার পরিস্থিতি এতটাই উত্তাল হয়ে ওঠে যে যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সারাদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার আগে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ঘোষণা করেন, ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করা হবে। ৯০ দিনের মধ্যে বিচার হবে। সরকার এজন্য দ্রুত আইন পরিবর্তন করবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের দিকে দিকে ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসছে। জমা হয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সোচ্চার হয়েছে বাংলাদেশের আমজনতা থেকে পড়ুয়ারা। সম্প্রতি মাগুরায় ৫ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে ফের উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। শিশুটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ঢাকার কেরানিগঞ্জে এক অন্তঃস্বত্ত্বা মহিলা গণধর্ষণের শিকার হন। অভিযুক্ত শহরের কুখ্যাত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য বলে জানা গিয়েছে।
ধর্ষণে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি এবং মহিলাদের নিরাপত্তার দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। ‘ইজ্জত যারা করল হরণ, তাদের চাই মৃত্যুবরণ’, ‘আমার বোন কবরে, ধর্ষক কেন বাহিরে’, ‘ধর্ষকের চামড়া, তুলে নেব আমরা’— এমন স্লোগান তুলতে থাকেন পড়ুয়ারা। অবরোধ করা হয় রাস্তাও। আন্দোলনকারীদের দাবি, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণেই এই পরিস্থিতি। ফলে সেদিকে আগে মনোযোগ দেওয়া উচিত সরকারের। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকে মিছিল শুরু হয়। সেই মিছিলেও পা মেলান অসংখ্য পড়ুয়া। পথে নেমেছেন শিক্ষকেরাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
তাতপর্যপূর্ণভাবে দেশ যখন ধর্ষণ ও মহিলাদের উপর যৌন নিপীড়নের ঘটনায় উত্তাল, তখন মুখে কুলুপ এঁটেছেন বাংলাদেশের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা। নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহর তরফ থেকে প্রতিক্রিয়া মেলেনি।