বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের গাত্রদাহ চরমে। সংশোধিত ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে মুর্শিদাবাদ এবং মালদহে কিছু হিংসার ঘটনা ঘটেছে। সরকার তা শক্ত হাতে দমনও করেছে। কিন্তু ইউনূসের প্রেস সচিব এই হিংসার ঘটনাবলীর তীব্র নিন্দা করে সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে। মুর্শিদাবাদ ও মালদহের ঘটনাবলীর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও যোগ নেই। ভারতে তথা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন মহল থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে, এই ঘটনাবলীর সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু দুষ্কৃতী ও জঙ্গিরা সীমান্ত পেরিয়ে এই গণ্ডগোলে যোগ দিয়েছে। এরফলে অশান্তি এবং হিংসার ঘটনা ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে কড়া পদক্ষেপ নিতে হয়। এখন এই দুই জেলার উপদ্রুত অঞ্চল শান্ত এবং জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। সুতরাং এই অভিযোগ আদৌ সত্য নয়। বরং সত্যের অপলাপ বলে ভারত মনে করে।
ঢাকার এই অভিযোগ সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে এবং তাঁদের নিরাপত্তা বিধান করা ভারত সরকারের দায়। বাংলাদেশ তদারকি সরকারের এই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। এখানে সংখ্যালঘু মুসলিমরা নিরাপদে আছেন এবং তাঁদের ওপর কোনও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশ সরকার বরং সংযত আচরণ করে সে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপরে ক্রমাগত যে নির্মম অত্যাচার হয়েই চলেছে, তা বন্ধ করুক। কারণ বাংলাদেশের হিন্দুরা এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরা বাংলাদেশেরই নাগরিক এবং তাঁদের নিরাপত্তা বিধান করা ওই দেশের সরকারের কর্তব্য। তা না করে তদারকি সরকার ভারতকে উপদেশ দিয়ে এদেশের সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিরাপত্তা বিধান করার কথা বলছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বাংলাদেশের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ভারতকে উপদেশ দেওয়ার মতো ধৃষ্টতা যেন বাংলাদেশের তদারকি সরকার না দেখায়। কারণ ওই দেশের গণ অভ্যুত্থানকালে অসংখ্য হিন্দু পরিবারের উপরে বর্বরোচিত আক্রমণ হয়েছে। তাঁদের ঘরবাড়ি অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এখনও সর্বহারা হয়ে পথে রয়েছেন। তাঁরা এখন নিরাশ্রয়— তাঁদের সর্বস্ব লুঠ হয়ে গেছে।
দিল্লির সাউথ ব্লকের এক মুখপাত্র বলেন, আশা করা গিয়েছিল বাংলাদেশে তদারকি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অবস্থার উন্নতি হবে এবং হিন্দুদের ওপর যে নির্মম অত্যাচার চলছে, তা বন্ধ হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় তদারকি সরকার ক্ষমতায় আসার পরও সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর আক্রমণ বাদ যায়নি এবং যাঁদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে তা পুননির্মাণের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। তাঁরা এখনও অবহেলিত বাংলাদেশের নাগরিক— ভিখিরির মতো তাঁদের জীবনযাত্রা। ভারত সরকার একাধিকবার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আক্রমণ বন্ধ করার। কারণ তা না করলে ‘দুই দেশের মধ্যে যে নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্ক বিরাজ করছে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই, তাতে ফাটল ধরবে। তা ভারত কখনও চায় না। ভারত চায় ঢাকা ও দিল্লির সম্পর্ক দিন দিন আরও নিবিড় ও গভীর হোক। ভারত সরকার বিদেশ মন্ত্রকের একজন উচ্চপদস্থ অফিসারকেও বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল সেদেশের তদারকি সরকারের সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে। প্রধান বিষয় ছিল বাংলাদেশ সরকার যেন উদ্যোগী হয়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান করে। তাঁরা যেন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সবরকম সুযোগসুবিধা পায়।
কিন্তু এই আলোচনার ফলও ভালো হয়নি। বাংলাদেশের সরকার নিজ দেশের নাগরিকদের রক্ষা না করে ভারতকে উপদেশ দিচ্ছে ভারতে মুসলমানদের উপর পীড়ন বন্ধ করে তাঁদের নিরাপত্তা দিতে। ঢাকার এই আযাচিত উপদেশ সেই প্রবাদের মতো শোনায়, ‘পাগলে কি না বলে…’। সম্প্রতি তাইল্যান্ডে বিমস্টেক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের প্রধান ইউনূসের বৈঠক হবে কি হবে না, বলতে গেলে শেষ পর্যন্ত বৈঠক হয়। ৩৮ মিনিটের দুই নেতার এই বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন দুই দেশের নিবিড় বন্ধুত্বের ওপর। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর প্রায়ই যে আক্রমণ চলছে, তাঁরা কিন্তু সেই দেশেরই বৈধ নাগরিক। তাঁদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করা বাংলাদেশ সরকারের প্রধান দায়।
ইউনূস অবশ্য প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদেই আছেন। সরকার তাঁদের ব্যাপারে সজাগ। ইউনূসের এই মন্তব্যের পরও বোঝা যায় না বাংলাদেশের বর্তমান তদারকি সরকার সজাগ না ঘুমিয়ে আছে। কারণ সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ থামেনি। বাংলাদেশের মৌলবাদীরা, জামায়াত ইসলামি, পাকিস্তানপন্থীরা এবং কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের খপ্পরে এখন ইউনূসের সরকার। তারা চায় না হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বন্ধ হোক ও ভারত ও বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক অটুট থাকুক।