পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে নির্দেশ দেবেন না। জানাল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ। সম্প্রতি রাজ্যের একাংশে হিংসার ঘটনায় রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন চেয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের মন্তব্য, ‘আপনারা কি চান যে এই আবেদন কার্যকর করার জন্য আমরা রাষ্ট্রপতিকে লিখিত নির্দেশ দিই ? এমনিতেই আমাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠছে।’
সোমবার মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবিতে হওয়া এক মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে বিচারপতি বিআর গাভাই এবং অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ। নতুন ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গে হিংসার ঘটনা ঘটছে। এই নিয়ে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন আইনজীবী বিষ্ণুশঙ্কর জৈন। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি গাভাইয়ের বেঞ্চে মামলাটি শুনানির জন্য ওঠে। হিংসা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অবিলম্বে শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপের আবেদন করে মামলা করেছিলেন আইনজীবী। তিনি দাবি করেছিলেন ৩৫৫ ধারা জারি করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হোক। বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের এজলাসে এ দিন শুনানি শুরু হয়।
এ দিন আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈন সুপ্রিম কোর্টে বলেন যে রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে প্যারামিলিটারি বাহিনী মোতায়েন থাকা দরকার। তিনি আর্জি জানান যে তিন প্রাক্তন বিচারপতির প্যানেল তৈরি করে যেন তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। মুর্শিদাবাদের হিংসায় হিন্দুদের ঘরছাড়াদের নিয়েও রিপোর্টের দাবি করেন। এর জবাবেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বেঞ্চ এই মন্তব্য করে। বেঞ্চের তরফে এই মন্তব্য যে বিজেপি নেতাদের একাংশের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে, তা স্পষ্ট।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে তামিলনাড়ুর ১০টি বিল অনুমোদন করে, যেগুলো দীর্ঘদিন রাজ্যপালের কাছে ছিল। সেইসঙ্গে, আদালত প্রথমবারের মতো নির্দেশ দেয় যে, রাজ্যপালের পাঠানো বিলগুলোর বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, কোনও রাজ্যের বিধানসভায় পাশ হয়ে যাওয়া বিল অনির্দিষ্ট কালের জন্য রাজ্যপাল আটকে রাখতে পারেন না। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চের মন্তব্য, ‘এটা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া দরকার, কোনও সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনও কাজ না করলে আদালত সেখানে হস্তক্ষেপে বিরত থাকবে না।’ এর পরে সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতিকেও সময় বেঁধে দিয়ে জানায়, যে কোনও বিল নিয়ে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁকে।
সাধারণভাবে, কোনও রাজ্যের আইনসভায় বিল পাশ হলে তা সম্মতির জন্য রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়। রাজ্যপাল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, রাজ্যপালের কাছ থেকে এই ধরনের বিল এলে রাষ্ট্রপতি অনির্দিষ্ট কালের জন্য তা ফেলে রাখতে পারবেন না।
এই রায় নিয়ে শাসকদল বিজেপির একাধিক নেতা এবং দেশের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় কড়া সমালোচনা করেন। এই পর্যবেক্ষণের সমালোচনা করে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় বলেছিলেন যে শীর্ষ আদালত তার ক্ষমতা লঙ্ঘন করছে এবং আইন বিভাগে হস্তক্ষেপ করছে। অন্যদিকে, বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে বলেছেন, যদি সুপ্রিম কোর্ট আইন তৈরি করে, তবে সংসদের আর কী প্রয়োজন? তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।
যদিও বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট নিয়ে নেতাদের মন্তব্য তাঁদের ‘ব্যক্তিগত মতামত’। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা নিজের এক্স-এ পোস্ট করে লেখেন, ‘বিজেপি এই ধরনের মন্তব্য খারিজ করল।’ এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের সোমবারের মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।