ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে পাকিস্তানে। বলা হয়েছে, তাঁদের এদেশে থাকার আর অনুমতি নেই। জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা এই পরিবারটি দ্বারস্থ হয়েছে শীর্ষ আদালতের। পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে তাদের আধার কার্ড রয়েছে, রয়েছে ভারতীয় পাসপোর্টও। ভাইবোনেরাও পড়াশুনো করেছেন জম্মু-কাশ্মীরেই। তবু এই পরিবারটিকে জোর করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে পাকিস্তানে। জম্মু ও কাশ্মীরের বাসিন্দা আহমেদ তারিক ভাটের আবেদনের ভিত্তিতে আপাতত তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের পাকিস্তানে পাঠানোর উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসের পর গত ২৫ এপ্রিল পাকিস্তানের নাগরিকদের তাঁদের নিজের দেশে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তারই জের এসে পড়েছে এই পরিবারের উপর।
শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং এনকে সিংয়ের বেঞ্চ শুক্রবার বলেছে, আবেদনকারী ভাট এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নথিপত্র খতিয়ে দেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। তবে সময়সীমা এখনই ঠিক করা হচ্ছে না। আদালতের চূড়ান্ত রায়ে আপত্তি থাকলে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ হাইকোর্টে আবেদন জানানোর অনুমতিও দিয়েছে বেঞ্চ।
আধার, ভোটার এবং প্যান কার্ড থাকা সত্ত্বেও বেআইনি ভাবে ভারতে বাস করার অভিযোগে এ দেশ থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে বলে দাবি কাশ্মীরের শ্রীনগরে বসবাসকারী এক পরিবারের। এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে আদালতের নির্দেশে স্বস্তি মিলেছে পরিবারটির। কেন্দ্রকে এই সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে দেখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এখনই ওই পরিবারের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করা যাবে না। তবে এই নির্দেশকে কোনও নজির হিসেবেও বিবেচনা উচিত হবে না বলে জানিয়েছে আদালত। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, মামলাটিতে যে সব তথ্য উঠে এসেছে, তার প্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ।
আবেদনকারী ভাট বলেছেন, ১৯৯৭ সালে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মীরপুর থেকে তাঁর বাবা চলে এসেছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরে। ২০০০ সালে পরিবারের বাকি সদস্যেরা চলে আসেন।কিন্তু ২৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নোটিশ পাঠায় বিদেশী নথিভুক্তি দপ্তর। ২৯ এপ্রিল পরিবারের সদস্যদের জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিদেশী নথিভুক্তি দপ্তর বা এফআরও’র যুক্তি, পাকিস্তানের যে ভিসা নিয়ে এদেশে এসেছিল ভাটের পরিবার, তার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে।
ভাট আদালতে জানান যে তাঁর বাবা, মা, বোন এবং ছোট ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ। ৩০ এপ্রিল নিয়ে যাওয়া হয় ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে।
পহেলগামের হত্যালীলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করে দিয়েছে ভারত। সব পাকিস্তানি নাগরিককে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে এ দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। মেডিক্যাল ভিসার ক্ষেত্রে আরও দু’দিন ছাড় দেওয়া হয়। সেই সময়সীমাও ইতিমধ্যে পেরিয়ে গিয়েছে।
এই অবস্থায় শ্রীনগরের ছয় সদস্যের ওই কাশ্মীরি পরিবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। ওই পরিবারের এক জন বেঙ্গালুরুতে কর্মরত। পরিবারের বাকি সদস্যেরা থাকেন শ্রীনগরেই। আইনি খবর পরিবেশনকারী ওয়েবসাইট ‘বার অ্যান্ড বে়ঞ্চ’ অনুসারে, সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই মামলায় মানবিক দিক ছাড়াও আরও বেশ কিছু বিষয় যাচাই করে দেখা প্রয়োজন রয়েছে।