• facebook
  • twitter
Friday, 23 May, 2025

সুপ্রিম কোর্টের ২১ জন বিচারপতির সম্পত্তির হিসেব প্রকাশ্যে 

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, বিচারপতি গাভাইয়ের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে ১৯ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫৮৪ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে নগদ অর্থও।

ফাইল চিত্র

সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফেরাতে এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস অটুট রাখতে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল আগেই। এবার তা ফলপ্রসূ করা হল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সম্পত্তির হিসেব প্রকাশ্যে আনতে শুরু করল শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে বিচারপতি রয়েছেন ৩৩ জন। এঁদের মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি বিআর গাভাই-সহ ২১ জন বিচারপতির সম্পত্তির হিসাব সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। ওই বিচারপতিদের বাড়ি, জমি থেকে শুরু করে ফিক্সড ডিপোজিট-সহ ব্যাঙ্কে কত টাকা রয়েছে, বিমা কত টাকার রয়েছে, শেয়ার বাজার কিংবা মিউচুয়াল ফান্ডে তাঁদের কোনও বিনিয়োগ রয়েছে কি না, এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া, সোনা-রুপোর গয়না, গাড়ি বা অন্য কোনও মূল্যবান সম্পত্তির তথ্য, এমনকি পারিবারিক সম্পত্তির তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে।    

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আয়োজিত এক বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার থেকে সুপ্রিম কোর্টেরবিচারপতিরা নিজেদের সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশ্যে আনছেন। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হল ১ মাসের মধ্যেই। ভারতের বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে বহুদিন ধরেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষত সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাসভবন থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধারের ঘটনায় সেই প্রশ্ন আরও ঘনীভূত হয়।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নামে রয়েছে একটি মারুতি সুইফট গাড়ি। স্থায়ী আমানত-সহ তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে প্রায় ৫৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্টে রয়েছে ১ কোটি ৬ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা এবং জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্টে রয়েছে ১ কোটি ৭৭ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় তাঁর নামে ফ্ল্যাট ও বাড়ি রয়েছে – যার বিস্তারিত তথ্যও প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি খান্নার দিল্লিতে একটি তিন বেড রুমের এবং একটি চার বেড রুমের ফ্ল্যাট রয়েছে।

হবু প্রধান বিচারপতি বি আই গাভাইও নিজের সম্পত্তির বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেছেন। প্রধান বিচারপতি খান্নার পরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হতে চলেছেন বিচারপতি গাভাই। মহারাষ্ট্রে পৈতৃক সম্পত্তি, বান্দ্রার ফ্ল্যাট, নগদ অর্থ থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক ডিপোজিট সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যই জানিয়েছেন তিনি। বিচারপতি গাভাইয়ের মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে পৈতৃক বাড়ি রয়েছে। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি সেটি পেয়েছেন। এ ছাড়া মুম্বইয়ের বান্দ্রায় এবং দিল্লিতেও তাঁর ফ্ল্যাট রয়েছে। মহারাষ্ট্রের অমরাবতী এবং নাগপুর মিলিয়ে তিনটি চাষের জমিও রয়েছে তাঁর। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, বিচারপতি গাভাইয়ের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে ১৯ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫৮৪ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে নগদ অর্থও। তাঁর পিপিএফ অ্যাকাউন্টে ৬ লক্ষ ৫৯ হাজার ৬৯২ টাকা এবং জিপিএফ অ্যাকাউন্টে ৩৫ লক্ষ ৮৬ হাজার ৭৩৬ টাকা রয়েছে। 

ভারতের বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বাসভবন থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধারের ঘটনার পর বিচারপতিদের প্রতি মানুষের মনে প্রশ্ন ঘনীভূত হয়। তাই বিচারব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস অটুট রাখতে এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত।

তবে এই প্রথম নয়, এর আগে দুইবার সুপ্রিম কোর্টের তরফে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। প্রথমবার ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জেএস বর্মার নেতৃত্বে একটি বৈঠকে বিচারপতিদের স্বেচ্ছায় সম্পত্তির হিসাব জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০০৯ সালে আরও একবার একই ধরনের প্রস্তাব সামনে আসে। তবে বিচারপতিরা চাইলে প্রকাশ করতে পারতেন, বাধ্যতামূলক ছিল না। কিন্তু এবারের সিদ্ধান্ত আরও সুসংহত ভাবে করা হয়েছে।এর ফলে বিচারপতিদের স্বচ্ছতা ও সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শেষ পাওয়া খবরে মোট ২১ জন জন বিচারপতির সম্পত্তির তথ্য সুপ্রিম কোর্ট প্রকাশ করেছে। শীর্ষ আদালতে বর্তমানে বাঙালি বিচারপতি রয়েছেন ২ জন। তাঁদের সম্পত্তির হিসাব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেনি।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যখন নিজেদের আর্থিক বিবরণ জনগণের সামনে তুলে ধরেন, তখন তা শুধু একটি আইনি প্রক্রিয়া নয়, বরং গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতারও পরিচয় দেয়। এর ফলে বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত  ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য উচ্চ আদালতগুলিকে উৎসাহিত করবে, তাতে সন্দেহ নেই।