২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর রানাকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের অনুমতি দিল আদালত। সোমবার দিল্লির পাটিয়ালা হাউস কোর্ট তাঁর আবেদন মঞ্জুর করেছে। আদালত জানিয়েছে, কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তিহার থেকে জেল কর্তৃপক্ষের যাবতীয় নিয়ম মেনে রানা একবারই তাঁর পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারবেন। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ এক বার ফোনের বিষয়ে আপত্তি করেনি। পাশাপাশি, আগামী ১০ দিনের মধ্যে জেল কর্তৃপক্ষকে মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রীর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দ্বিতীয় রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
দিনকয়েক আগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রানা। এর আগেও রানা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার আবেদন জানালেও এনআইএর তরফে সেই আবেদনের বিরোধিতা করা হয়। এনআইএ-র তরফে বলা হয়, বর্তমানে এই মামলাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তরে রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে রানা সংবেদনশীল তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারেন। রানার আইনজীবী আদালতে পাল্টা যুক্তি দেন, তাঁর মক্কেল বিদেশি নাগরিক। রানার পরিবারের সদস্যরা স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। আদালত শেষ পর্যন্ত অবশ্য আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে দেয়। তবে ফোনে কথা বলার আবেদন সোমবার মঞ্জুর করেছে দিল্লির আদালত।
তিহারে রানার স্বাস্থ্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। সোমবার আদালত জানিয়েছে, রানার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দ্বিতীয় একটি রিপোর্ট আগামী ১০ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে তিহার কর্তৃপক্ষকে। আদালত জানিয়েছে, আপাতত এক বার ফোন করতে পারবেন রানা। জেলের নিয়ম কঠোর ভাবে মানতে হবে তাঁকে। জেল কর্তৃপক্ষের নজরদারিতে পরিবারের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন। রানার সঙ্গে পরিবারের ফোনে কথোপকথনের বিষয়েও আদালত রিপোর্ট চেয়েছে। তিহার কর্তৃপক্ষ এই সংক্রান্ত রিপোর্ট দিলে রানা নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন কি না, আদালত তা বিবেচনা করে দেখবে।
গত ৬ জুন রানার বিচারবিভাগীয় হেফাজতের মেয়াদ বেড়েছে। দিল্লির এক আদালতে শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হাজির করানো হয় রানাকে। বিশেষ বিচারক চন্দ্রজিৎ সিং ৯ জুলাই পর্যন্ত তাহাউর রানার বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর রানা। দীর্ঘদিন আমেরিকার জেলে বন্দি ছিলেন ৬৪ বছরের পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক রানা। সম্প্রতি আমেরিকা থেকে তাঁকে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছে। আপাতত তিনি তিহারে আছেন। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ১০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের একটি দল আরব সাগর হয়ে মুম্বইয়ে ঢোকে। একটি রেলস্টেশন, দুটি বিলাসবহুল হোটেলে হামলা চালায় এই দলটি। প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে চলা এই হামলায় ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়।
২০০৮ সালের সেই মুম্বই হামলার অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রকারী ডেভিড কোলম্যান হেডলি ওরফে দাউদ গিলানির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন রানা। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক ডেভিড কোলম্যানের সঙ্গে এক ব্যবসার সূত্রে আলাপ হয় রানার। জঙ্গিরা কোন পথে এই দেশে ঢুকে হামলা চালাবে, তাঁর রোডম্যাপ তৈরি করেছিলেন তাহাউর। পরে আমেরিকায় গ্রেপ্তার হন তিনি। চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতে ভারত হাতে পায় রানাকে।