• facebook
  • twitter
Wednesday, 26 March, 2025

হৃদযন্ত্র ও চোখের উপর ডায়াবিটিসের প্রভাব

উচ্চরক্তচাপের পারিবারিক প্রাদুর্ভাব থাকলে বা হৃদযন্ত্রের রক্ত চলাচল বিঘ্নিত থাকলে (করোনারি হার্ট) আরও সাবধান থাকা উচিত।

ডায়াবিটিক রুগীদের হৃদযন্ত্র ও চক্ষু সম্বন্ধে কতকগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কথা বলতে চাই। কারণ হৃদযন্ত্র বা চক্ষুর মধ্যে যে-কোনও যন্ত্র বিকল হলেই বিপদ। চক্ষু দু’টি গেলে তো দুর্দশার চরম অবস্থা।

হৃদযন্ত্রের অসুখগুলির মধ্যে প্রধান হল-
ক) হৃদযন্ত্রের বিঘ্নিত রক্ত সরবরাহজনিত অসুখ (করোনারি হার্ট ডিজিজ)
খ) উচ্চ রক্তচাপজনিত অসুখ

এছাড়া ডায়াবিটিকদের ক্ষেত্রে-
গ) পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ হতে পারে। এই রোগে বারবার পায়ে যন্ত্রণা এবং ক্ষেত্র বিশেষে পায়ের আঙ্গুল থেকে পচন শুরু হয়।
কীভাবে ডায়াবিটিস রোগ হৃদযন্ত্রের অসুখ সৃষ্টি করে, তা সঠিক বলা শক্ত। তবে দেখা যায় যে, ডায়াবিটিস রোগীদেরই করোনারি হার্ট ডিজিজ এবং উচ্চরক্তচাপ বেশি হয়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাধিক্য কীভাবে হৃদযন্ত্রের রক্ত সরবরাহকারী শিরাকে প্রভাবিত করে, তা নিয়ে বর্তমানে বহু পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। ডায়াবিটিকদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ও প্লাজমা লিপিডের মাত্রা বেশি হয়। করোনারি ডিজিজেও তাই। শতকরা ২০ জন ডায়াবিটিক রোগীর ইসিজি-তে, কিছু কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়।

এদের সকলের অবশ্য বুকে ব্যথা বা করোনারি ডিজিজের উপসর্গ থাকে না। শতকরা ২০ জনের হয়তো উপসর্গ থাকে। কাজেই ডায়াবিটিক রোগীদের বিশেষভাবে রক্তচাপ পরীক্ষা ও ইসিজি পরীক্ষা করা দরকার। মিলিটারি চাকরির ক্ষেত্রে একবার ডায়াবিটিক ধরা পড়লে, বছরে অন্তত দুবার ইসিজি ও বুকের এক্সরে করা দরকার। সাপ্তাহিক বা দৈনিক প্রস্রাব পরীক্ষা ছাড়াও, নিয়মিত ও প্রয়োজনমতো রক্তে শর্করার পরিমাণ দেখে নেওয়া হয়। রোগীদের প্রস্রাব পরীক্ষা করার পদ্ধতি শেখানো হয়, যাতে তাঁরা নিজেরাই পরীক্ষা করতে পারেন। সেগুলি মাসে মাসে ডাক্তারকে দেখাতে হয়। তিন মাস বা ছ’মাস অন্তর মেডিকেল বিশষজ্ঞ ও চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়। ডায়াবিটিস-এ চক্ষুর বহু প্রকার জটিল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন চোখে জীবাণু সংক্রামণ , চক্ষুর ট্যারা অবস্থা (চক্ষুগোলকের বহিরিস্থিত মাংসপেশীর অক্ষমতাবস্থার ফলে), চোখের পাতার বাইরের অংশে হলদে দাগ ডায়াবিটিস জনিত ছানি, ভিট্রিয়সের অস্বচ্ছতা ইত্যাদি।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, এই সব জটিলতাগুলি অত্যন্ত বিপজ্জনক। যদি ভালোভাবে ডায়াবিটিস রোগীদের চিকিৎসা হয়, যদি তাঁরা নিয়মিত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করেন, নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করেন, নিয়মিত ডাক্তার এবং প্রয়োজনমতো বিশেষজ্ঞদের কাছে যান- তাহলে তাঁরা বহুদিন সুস্থ থাকতে পারবেন।

উচ্চরক্তচাপের পারিবারিক প্রাদুর্ভাব থাকলে বা হৃদযন্ত্রের রক্ত চলাচল বিঘ্নিত থাকলে (করোনারি হার্ট) আরও সাবধান থাকা উচিত। নিয়মিত বিনামূল্যে প্রস্রাব ও রক্তে চিনির পরিমাপের পরীক্ষার বন্দোবস্ত নিতান্ত প্রয়োজন। তা না হলে ডায়াবিটিকদের জীবন দুর্বিষহ হতে থাকবে।

ডায়াবিটিসে ব্যবহৃত ওষুধ সরবরাহেরও অনেক অসুবিধা রয়েছে। অনেক সময় ইনসুলিন পাওয়া যায় না। দামও যথেষ্ট। সারাজীবন যে-ওষুধ খেতে হবে, গরিব রোগীদের জন্য সেগুলি সুলভে বা বিনামূল্যে বিতরণ করার প্রচেষ্টার দরকার। গরম আবহাওয়ায় ইনসুলিন বেশি দিন ফ্রিজারের বাইরে রাখলে, তার শক্তি ক্ষয় হয়। সে জন্য খেয়াল রাখুন, বাড়িতে বেশি দিন রেখে দিলে এটি খারাপ হয়ে যেতে পারে।