মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাধিক তুঘলকি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমেরিকার বিভিন্ন শহর ও কাউন্টি সেন্টারে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছেন ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির সাংসদরা। গত মাসখানেক ধরে ট্রাম্প-মাস্ক জুটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন শহরে বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ হয়েছে। ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যেও অনেকে তাঁর নানা আত্মঘাতী নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গত ১৯ এপ্রিল আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনে তুমুল বিক্ষোভ চোখে পড়েছে। ওয়াশিংটন মুনমেন্ট পেরিয়ে হাজার হাজার মানুষের মিছিল সরাসরি হোয়াইট হাউসের বাইরে এসে দাঁড়ায়। ‘ট্রাম্প তুমি লজ্জা পাও’ বলে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে থেকেই গর্জে ওঠেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, ট্রাম্পের জনবিরোধী নীতির জেরে আমেরিকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা দিনদিন বাড়ছে। ভোটের প্রচারে অর্থনীতির হাল ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও ক্ষমতায় এসে ট্রাম্পের একের পর এক সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ নাজেহাল। করদাতাদের টাকার অপচয় বন্ধ করার নামে বেআইনিভাবে কয়েক লক্ষ সরকারি কর্মচারীকে ছাঁটাই করে, একাধিক সরকারি ও সাংবিধানিক দপ্তর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের জন্য যাবতীয় সুযোগসুবিধা ও কল্যাণমূলক প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবায় সরকারি ভরতুকি বন্ধ হয়েছে। শিক্ষা দপ্তর তুলে দেওয়ার মাধ্যমে ছাত্রবৃত্তি বন্ধ করে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির হাতে ছাত্রঋণের নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উগ্র অভিবাসন বিরোধী নীতির জোরে দেশছাড়া হওয়ার’ আশঙ্কা করছেন হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। আমদানি শুল্ক বাড়ানোর ফলে ভয়াবহ সংকটের আশঙ্কা করছেন হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। সঙ্গে বেড়েছে খাবার, জরুরি ওষুধপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করার আশ্বাস দিয়ে আমেরিকার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত অংশের ভোট পেয়েছিলেন ট্রাম্প। ইদানিংকালে মুদ্রাস্ফীতির হারে বৃদ্ধি, জিনিসপত্রের দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, শেয়ার বাজারে ব্যাপক ধাক্কা ও ডলারের মূল্যে পতনের জেরে মন্দা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে এগিয়েছে। উল্টোদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের দেদার সংকোচন এবং সরকারি পরিষেবা আগাগোড়া বাতিল করায় বাজারে একচেটিয়া দখল বাড়াচ্ছেন ট্রাম্প ও মাস্কের ঘনিষ্ঠ ধনকুবেররা।
মার্কিন নাগরিকদের বিক্ষোভে অন্যান্য দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি আমেরিকা থেকে এল সালভাদোর সদ্য প্রত্যর্পণের শিকার আলব্রেগো গর্সিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিও ওঠে। দিন কয়েক আগেই তাঁকে মাদকচক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ওদেশে ফেরত পাঠায় ট্রাম্প প্রশাসন। তাঁর প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়াকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে আমেরিকার আদালত। তবে ট্রাম্প প্রশাসন নিজেদের সিদ্ধান্তকেই সঠিক বলে দাবি করে আদালতের নির্দেশও কার্যকর করছে না।
আমেরিকায় ট্রাম্প ও তাঁর বিশেষ উপদেষ্টা এলন মাস্ক ও প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ পরিমণ্ডলের বিরুদ্ধে গণক্ষোভ ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। অভিজাততন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এই আন্দোলনে উল্লেখযোগ্যভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিভিন্ন বাম ও মধ্য-বাম সংগঠন, নাগরিক অধিকার মঞ্চ, ট্রেড ইউনিয়ন সহ প্রাক্তন সেনা কর্মী, ছাত্র-ছাত্রী, মহিলা ও লিঙ্গ সংখ্যালঘুদের সংগঠনগুলি। আমেরিকার বিভিন্ন শহরে সব মিলিয়ে মোট ৭০০টি জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। পূর্ব উপকূলে নিউইয়র্কের ম্যানহাটন থেকে পশ্চিম উপকূলে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলস, আবার উত্তর মেরু ঘেঁষা আলাস্কার অ্যাঙ্কারেজ থেকে দক্ষিণ উপকূলে ফ্লোরিডার মায়ামি, বিভিন্ন প্রাদেশিক রাজধানী, বাণিজ্যিক কেন্দ্রে, কাউন্টি সেন্টার থেকে শহরেও স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভে মানুষের ঢল রীতিমতো নজর কেড়েছে।
ট্রাম্প-মাস্কের দোস্তির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এই বিক্ষোভে উৎসাহিত হয়ে ভারতেও মোদী-আদানির অশুভ জোটের বিরুদ্ধে মানুষ সংঘবদ্ধ হচ্ছে। যে কোনওদিন তা ক্ষোভের আকারে ফেটে পড়বে বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করে।