• facebook
  • twitter
Monday, 16 June, 2025

বিভেদের রাজনীতির ফল

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার জন্য কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি বারেবারে আর্জি জানাচ্ছে। সেই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীকে থাকতে হবে।

ফাইল চিত্র

কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুতর ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে তা স্বীকার করেননি। কিন্তু বর্তমানে সরকারের পদক্ষেপে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সাত বছর পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্ষদ (এনএসএবি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর প্রাক্তন প্রধান অলোক যোশীকে করা হয়েছে এনএসএবি’র চেয়ারম্যান।

মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, যারা এতদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে, সেগুলির ক্ষমতা খর্ব করে বা বাতিল করে নতুন করে তৈরি করা হয়। তেমনই এনএসএবি’র গুরুত্বও খর্ব করে দেওয়া হয়। তার বদলে মোদী-শাহর ঘনিষ্ঠ দোভালকেই সর্বময় কর্তা বানানো হয়। মোদী মিডিয়া বিভিন্ন সময়ে দোভালকে প্রায় ‘জেমস বন্ড’-এর মতো উচ্চতায় নিয়ে যায়। নতুন করে এনএসএবি গঠন করে প্রাক্তন ‘র’ প্রধানকে দায়িত্ব দেওয়ার মধ্যে দোভালের ক্ষমতা ছাঁটাই বলে মনে করা হচ্ছে। যেদিন ৩৭০ ধারা বাতিল করা হয় লোকসভায়, সেদিন অবরুদ্ধ কাশ্মীরের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিরিয়ানি খেয়েছিলেন অজিত দোভাল। কাশ্মীর যে সম্পূর্ণ ‘স্বাভাবিক’, সেটাই প্রমাণ করা ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। গত পাঁচ বছরে সেই ‘স্বাভাবিক’ কাশ্মীরে লাগাতার বেড়েছে সন্ত্রাসবাদী হামলা। নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান থেকে সাধারণ মানুষ— প্রাণ গিয়েছে সকলের, ধর্ম নির্বিশেষে।

২০১৮ সালের পর পুনর্গঠিত হলো এনএসএবি। ছয় সদস্যের জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদে অবসরপ্রাপ্ত সেনা এবং আইপিএস আধিকারিকরা রয়েছেন। সেই সঙ্গে রয়েছেন প্রাক্তন কূটনীতিক বি বেঙ্কটেশ বর্মা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে তাঁর নেতৃত্বে নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রমুখ। যদিও বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলন করে বা বিবৃতি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। মনে করা হচ্ছে, তিন বহিনীর প্রধানদের সঙ্গে পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির বৈঠক হলো।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার জন্য কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি বারেবারে আর্জি জানাচ্ছে। সেই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীকে থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী কী পদক্ষেপ নিতে চলেছেন, তা ওই অদিবেশনে বলার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এত বড় বিপর্যয় নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ মোদী ও শাসক দল বিজেপির সমালোচনা করে বলেছেন, ২০০৮ সালে মুম্বইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনার দু’দিন পরেই গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরাসরি মুম্বইয়ে চলে যান। সেখানেই দাদাগিরির ভঙ্গিমায় সাংবাদিক সম্মেলন করে তৎকালীন রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেন। সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারকে দুর্বল, অনাগ্রহী এবং অক্ষম বলে বর্ণনা করেছিল। এটা ইতিহাস। দেশের বিপদের সময় বিজেপি এই ধরনের কুৎসিত রাজনীতি করেছে। কংগ্রেস সেটা করবে না বলে জানিয়ে দিয়ে জয়রাম রমেশ বলেন, সংকটকালে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে চাই ঐক্যবদ্ধভাবে। কিন্তু মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি প্রয়োজন পড়লেই বিভেদের রাজনীতি করে। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে তাদের একটুও বাধে না।

এই প্রেক্ষিতে আমেরিকা ও চিনের পক্ষ থেকে ভারত-পাক উভয় দেশকেই সংযত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। দুই দেশকেই ‘দায়িত্বশীল সমাধান’ খুঁজতে বলেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। আন্তর্জাতিক স্তর থেকে কূটনৈতিক চাপ বাড়ানো হচ্ছে, যাতে পরিস্থিতি আরও জটিল বা সংঘর্ষপূর্ণ না হয়ে ওঠে।