• facebook
  • twitter
Monday, 8 December, 2025

বিদেশ সফরেই অর্থব্যয়

একথা ঠিক, দেশের বাণিজ্য, কূটনীতি, বিদেশনীতির স্বার্থেই প্রধানমন্ত্রীরা বিদেশ সফর করে থাকেন। সেই সফরের পর কাজের কাজ কতটা হচ্ছে, সেটা অবশ্যই বিচার্য বিষয়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘন ঘন বিদেশ সফর নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। বিরোধীরা প্রায়শই এই নিয়ে খোঁচা দিয়ে থাকে শাসক দল বিজেপিকে। তার মধ্যেই ২০২১-এর মার্চ থেকে ২০২৩-এর এপ্রিল পর্যন্ত গত চার বছর এক মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফরের জন্য ৩৬২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য ডেরেক ও‘ব্রায়েন প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের খরচের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। তাতে বিদেশমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিং জানিয়েছেন, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মোদীর বিদেশ সফরের জন্য খরচ হয়েছে ২৯৫ কোটি টাকা। এই সময়ের মধ্যে ৩৮টি দেশে গিয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মোদীর বিদেশ সফরের হিসাবও দিয়েছে কেন্দ্র। দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা, ফ্রান্স সহ চলতি বছরের মোট ৫টি দেশ সফরের জন্য খরচ হয়েছে ৬৭ কোটি টাকারও বেশি।

তবে এই বছরে আরও কিছু দেশে সফরে গিয়েছিলেন মোদী। তার হিসাব অবশ্য কেন্দ্র দেয়নি। ফলে সব মিলিয়ে খরচ আরও বাড়বে।

Advertisement

কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরে মোদীর ফ্রান্স সফরের জন্য সবচেয়ে বেশি ২৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এরপরেই রয়েছে ২০২৩ সালে মোদীর আমেরিকা সফর। সেবার খরচ হয়েছিল ১২ কোটি টাকা। কেন্দ্রের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সাল থেকে মোদীর বিদেশ সফরের খরচ ক্রমাগত বেড়েছে। ২০২১ সালে তাঁর বিদেশ সফরের জন্য খরচ হয়েছিল প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ, আমেরিকা, ইতালি ও ব্রিটেন সফরে এই টাকা খরচ হয়েছিল। ২০২২ সালে মোদীর বিদেশ সফরে খরচ হয় প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে খরচ হয় ৯৩ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে ১৬টি দেশে গিয়েছিলেন মোদী। এর জন্য খরচ হয় প্রায় ১০৯ কোটি টাকা।

Advertisement

চলতি বছরে ফ্রান্স ছাড়াও আমেরিকা সফরের জন্য ১৬ কোটি টাকার বেশি, তাইল্যান্ড সফরের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া সৌদি আরব সফরে ১৫ কোটি টাকার বেশি ও শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য ৪ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক। পাশাপাশি, চলতি বছরেই প্রধানমন্ত্রী মরিশাস, সাইপ্রাস, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, ঘানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং নামিবিয়া সফরে গিয়েছিলেন। ওই দেশগুলিতে যাওয়া-আসার জন্য কেন্দ্রের কত টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসেব অবশ্য বিদেশ মন্ত্রক দেয়নি।

১১ বছর, ৭৮টি দেশ এবং ৯১টি সফর। এর মধ্যে চলতি বছরেই বিদেশের সংখ্যা ১৪। এই তালিকা হলো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফরের সালতামামি। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলেন, ‘উনি হলেন ভূ-পর্যটক। পায়ের তলায় সর্ষে লাগানো আছে। দেশের অভ্যন্তরে যে পরিস্থিতিই থাক না কেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের কোনও বিরতি নেই। কিন্তু এতো বিদেশ সফর করেও ভারতের বৈদেশিক কূটনীতি যে বিদেশে তেমন একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না, তা পহেলগাম কাণ্ডের পরই শোনা গিয়েছিল। কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গিদের নৃশংসস হত্যালীলা চালানোর পিছনে যে পাকিস্তান রয়্ছে, সেটি বোঝাতে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রীরা বারবার বিদেশ ছুটে গিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গি মদতের অভিযোগ তুলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের অবস্থান বোঝাতে সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিলেন। বিরোধী দলগুলিও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রের দিকে। সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল ৩৩টি দেশসফর করে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদী হামলার নিন্দা করলেও প্রায় কোনও দেশই সরাসরি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অন্তত জোরালোভাবে প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি। উল্টে এতো কাণ্ডের পরেও পাকিস্তানকে সমর্থন ও সাহায্য জুগিয়েছে কয়েকটি মহল। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের বৈদেশিক নীতি নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠলেও মোদীর বিদেশ সফরে কোনও বিরাম নেই। সরকারি কোষাগারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ ভ্রমণ চলছে—চলবে।
বিদেশ সফরে মোদী দেশের আগের সব প্রধানমন্ত্রীর রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। পরিসংখ্যান বলছে, ইন্দিরা গান্ধী ১৫ বছর ৬ মাস ২১ দিন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মোট ৫৩ বার বিদেশ সফর করে ৬৯টি দেশে গিয়েছিলেন। মোদীর দলের পূর্বসূরি অটলবিহারী বাজপেয়ী তাঁর রাজত্বের পাঁচ বছরে মাত্র ৩১টি দেশে গিয়েছিলেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ৭৩টি দেশ সফর করেছিলেন। এঁদের সফরের খরচও মোদীর খরচের ধারেকাছে নেই।

একথা ঠিক, দেশের বাণিজ্য, কূটনীতি, বিদেশনীতির স্বার্থেই প্রধানমন্ত্রীরা বিদেশ সফর করে থাকেন। সেই সফরের পর কাজের কাজ কতটা হচ্ছে, সেটা অবশ্যই বিচার্য বিষয়। এখানেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদীর বিদেশ সফর।

Advertisement