শিবু সোরেনকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে নয়াদিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার হাসপাতালে গিয়ে প্রয়াত শিবু সোরেনের পরিজনদের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী দেখা করেন। হেমন্ত সোরেনকে সমবেদনা জানান তিনি। মোদীর সামনে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় হেমন্তকে। তাঁকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দেন প্রধানমন্ত্রী। শিবু সোরেনকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও হাসপাতালে যান। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও গঙ্গারাম হাসপাতালে গিয়েছিলেন
ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) প্রধান শিবু সোরেন সোমবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন তিনি। শনিবার সকালে তাঁর পুত্র তথা ঝাড়খণ্ডের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টের মাধ্যমে বাবার মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করেন। রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন শিবু সোরেন। ইউপিএ সরকারের আমলে কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন এই বর্ষীয়ান নেতা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুতে ঝাড়খণ্ডজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
Advertisement
ঝাড়খণ্ডের রাজনীতিতে প্রথম থেকে ‘গুরুজি’ নামেই পরিচিত ছিলেন শিবু। মূলত তাঁর আন্দোলনেই ২০০০ সালে বিহার ভেঙে আলাদা রাজ্যের স্বীকৃতি পায় ঝাড়খণ্ড। ২০০৫ সালে প্রথমবারের জন্য ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন শিবু। সেবার অবশ্য মাত্র ১০ দিন এই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ২০০৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এবং ২০০৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন শিবু সোরেন। প্রসঙ্গত, ১৯৮০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শিবু সোরেনের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিকভাবে জনগণের কাছে পৌঁছায় জেএমএম। সাঁওতাল পরগনা অঞ্চলের ১৮টি আসনের মধ্যে ৭টিতে জয়লাভ করে তারা।
Advertisement
গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় শিবু সোরেনকে। তারপর থেকে হাসপাতালেই ছিলেন তিনি। মাস দেড়েক আগে তাঁর স্ট্রোক হয়েছিল। গত এক মাস ধরে শিবুকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা ৫৬ মিনিটে শিবু সোরেনের মৃত্যু হয়েছে। বাবার মৃত্যুর খবর জানিয়ে তাঁর ছেলে হেমন্ত সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘শ্রদ্ধেয় দিশোম গুরুজি আমাদের সকলকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আজ আমি শূন্য হয়ে গেলাম।’
শিবু সোরেনের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিশিষ্টরা। এক্স হ্যান্ডলে মোদী লিখেছেন, ‘শিবু সোরেন তৃণমূল স্তরের নেতা ছিলেন। জনগণের প্রতি অটল নিষ্ঠা ছিল তাঁর। তিনি, বিশেষ করে উপজাতি সম্প্রদায়, দরিদ্র ও নিপীড়িতদের ক্ষমতায়নের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমি মর্মাহত। তাঁর পরিবার এবং ভক্তদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে কথা বলেছি এবং সমবেদনা প্রকাশ করেছি। ওম শান্তি।’
মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় শোকপ্রকাশ করে এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা এবং আমার আদিবাসী ভাইবোনদের গুরু দিশোম (মহান নেতা) শিবু সোরেনের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর পরিবার ও অনুরাগীদের সমবেদনা জানাচ্ছি। আমি তাঁকে খুবই শ্রদ্ধা করতাম। ঝাড়খণ্ডের ইতিহাসের একটি অধ্যায় আজ শেষ হল।’
এক্স হ্যান্ডলে শোকপ্রকাশ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। অভিষেক লিখেছেন, ‘শিবু সোরেনের মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। তিনি একজন উচ্চাভিলাষী ব্যক্তিত্ব, যাঁর কণ্ঠস্বর আদিবাসীদের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শক্তি যুগিয়েছে এবং যাঁর সংগ্রাম ঝাড়খণ্ডের আত্মাকে রূপ দিয়েছে। তাঁর অনুপস্থিতি এমন এক শূন্যতা তৈরি করে, যা পূরণ করা অসম্ভব। তাঁর পরিবার ও অনুগামীদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। ওম শান্তি।’
লোকসভা বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রবীণ জেএমএম নেতা শিবু সোরেনের মৃত্যুর খবর শুনে আমি গভীরভাবে শোকাহত। আদিবাসী সমাজের একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, শিবু সোরেন সারা জীবন তাদের অধিকার এবং স্বার্থের জন্য লড়াই করেছিলেন। ঝাড়খণ্ড সৃষ্টিতে তাঁর ভূমিকা সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি হেমন্ত সোরেন সহ সমগ্র সোরেন পরিবারের পাশাপাশি গুরুজির সমস্ত সমর্থকদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।’
Advertisement



