ভারতে প্রত্যর্পণ ঠেকাতে আদালতের দ্বারস্থ হলেন ২৬/১১ মুম্বই হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত তাহাউর রানা। আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। এর আগে আমেরিকার নিম্ন ও ফেডারেল আদালতে রানার আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছিল। নাইনথ সার্কিটের ইউএস কোর্ট অব অ্যাপিলস ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রান্তকারীকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছিল। ভারতে প্রত্যর্পণ আটকানোর শেষ আইনি প্রচেষ্টা হিসেবে তাই এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন রানা। আবেদনপত্রে তিনি লিখেছেন, আমি পাকিস্তানি এবং মুসলিম। তাই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমার উপর অত্যাচার চালাবেন বলে আশঙ্কা করছি।
২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী তাহাউর হুসেন রানা। দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তাহাউর রানাকে প্রত্যর্পণের চেষ্টা চালাচ্ছিল ভারত। এর আগে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের অনুমতি দিয়েছিল আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট। আপাতত আমেরিকার জেলে রয়েছেন তাহাউর রানা। জেল সূত্রে খবর, বয়সের জেরে নানারকম শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন রানা। মার্কিন শীর্ষ আদালতকেও তিনি জানিয়েছেন, হৃদজনিত কিছু সমস্যা-সহ পারকিনসনসের মতো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি।
পাকিস্তানের নাগরিক এই তাহাউর রানা পাক সেনার চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন। পরে কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার পর সেখানে চলে যান। তদন্তে উঠে এসেছে, পাকিস্তান-জাত মার্কিন জঙ্গি ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গী ছিল তাহাউর রানা। লস্কর জঙ্গিদের সাহায্য করেছিল তাঁরা। সূত্রের খবর, রানা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ভারতে বিচার হলে তাঁকে প্রাণদণ্ডের মুখে পড়তে হতে পারে। সেই কারণেই আইনের ফাঁকফোকরকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যর্পণ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।
মুম্বই হামলায় নিহতদের তালিকায় ৬ মার্কিন নাগরিকও ছিলেন। ওই হামলার নেপথ্যে থাকা রানাকে ভারতে আনার লক্ষ্যে আমেরিকার কাছে আবেদন করেছিল নয়াদিল্লি। ভারতের যুক্তি ছিল, মুম্বই সন্ত্রাস হানায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ভারতের মাটিতে তাঁর বিচার হওয়া প্রয়োজন। ভারতের দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল তাহাউর রানা। কিন্তু কোনও আদালতেই খুব একটা সুবিধে করতে পারেননি তিনি। আর তাই আর কোনও উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তাহাউর রানা। প্রসঙ্গত, গত মাসেই মোদী যখন আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন, তখন তাহাউরের প্রত্যাপর্ণ নিয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন খোদ ট্রাম্পও। তাঁকে ‘ভেরি ডেঞ্জারাস ম্যান’ বলেও উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ভারতের অভিযোগ, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর পাকিস্তান থেকে আগত ১০ লস্কর-ই-তইবা জঙ্গিরা মুম্বইয়ে হামলা চালিয়েছিল।
সেই হামলার পরিকল্পনায় রানা প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন রানা। প্রায় দেড় দশক আগে রানাকে প্রত্যর্পণের জন্য আমেরিকার কাছে আবেদন জানিয়েছিল ভারত। তাতে অবশ্য খুব একটা লাভ হয়নি নয়াদিল্লির। পরবর্তী কালে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে যান। ২০২০ সালের জুন মাসে মুম্বই নাশকতার ঘটনাতেই ফের রানাকে গ্রেপ্তার করেছিল আমেরিকার পুলিশ। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে মুম্বইয়ে পাক জঙ্গি হামলায় ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
