• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ব্রিটেনে অনুপ্রবেশ রুখতে ভারতের আধার কার্ডের অনুকরণে ‘ব্রিট কার্ড’

তবে আধারের মতো বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহৃত হবে না এই কার্ডে। মূলত ব্রিটেনের বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের রুখতেই এই কার্ড চালু করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার

সম্প্রতি ভারত সফরে এসেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার। সেই সময় ভারতের ডিজিটাল বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র আধার কার্ডের প্রশংসা করেছিলেন। এবার ব্রিটেনেও এই ধরনের পরিষেবা চালু করতে চলেছেন ব্রিটেন প্রধানমন্ত্রী। যার নাম হবে ‘ব্রিট কার্ড’। তবে আধারের মতো বায়োমেট্রিক তথ্য ব্যবহৃত হবে না এই কার্ডে। মূলত ব্রিটেনের বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের রুখতেই এই কার্ড চালু করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার।

একটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভারতে এসে ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান নন্দন নিলেকানির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন স্টার্মার। তাঁর কাছ থেকে আধার কার্ড ও সেই সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য জেনেছিলেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে ব্রিটেনের সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই কার্ড চালুর ক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতার সাহায্য নেবে ব্রিটেন। কিন্তু তা আদপে আধার কার্ডের মতো হবে না।

Advertisement

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে আধারের সমালোচনা করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ভারতের সমালোচকরা তথ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা এবং পরিচয়পত্রের অভাবে সাধারণ মানুষের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। আধার কার্ড ভারতীয় অর্থনীতির প্রশাসনিক ব্যয় এবং দুর্নীতির কারণে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির হাত থেকেও বাঁচিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisement

আধারের সমালোচনার জবাবে ব্রিটেন সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভারতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রস্তাব আনা হলেও এর নকশা ভিন্ন হবে। এতে বায়োমেট্রিক তধ্য অন্তর্ভুত থাকবে না। তথ্য সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে অবৈধ কাজ মোকাবিলা করার জন্য শুধুমাত্র কর্মসংস্থানের জন্য আইডি হিসাবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সমালোচকরা গোপনীয়তা, তথ্য সুরক্ষা এবং সরকারের অতিরিক্ত নজরদারি সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।ভারতে বর্তমানে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন নাগরিক আধার কার্ডের আওতায় রয়েছেন। ব্যাঙ্কিং, কল্যাণমূলক প্রকল্প, ও সরকারি পরিষেবায় ১২-সংখ্যার বায়োমেট্রিক আইডি নম্বর ব্যবহৃত হয়। যদিও তথ্য ফাঁস, বঞ্চনা ও গোপনীয়তা নিয়ে অভিযোগও কম নয়।

স্টার্মার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমাদের দেশে স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে নানা সরকারি কাজে নাগরিকদের কাগজপত্র জোগাড়ে যে ঝামেলা পোহাতে হয়, তা শেষ করতে পারে এই আইডি ব্যবস্থা। ভারতে এর সাফল্য প্রমাণিত।‘ তবে সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর থেকেই ডিজিটাল পরিচয়পত্র নিয়ে ব্রিটিশদের আস্থা কমেছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার, হ্যাকিং এবং সরকারী নজরদারি বাড়বে।

অবৈধ অনুপ্রবেশ রুখতে ‘ব্রিট কার্ড’ ব্যবহার করা হবে। অবৈধভাবে কাজ করা বিদেশি শ্রমিকদের শনাক্ত করাই এই প্রকল্পের প্রথম ধাপ হবে বলে জানিয়েছেন কিয়ের স্টার্মার। তাঁর মন্তব্য, ‘যে দেশগুলি নিজের নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষা করে, তারাই প্রকৃত অর্থে আত্মমর্যাদাশীল।‘

তবে লেবার পার্টির একাংশ এবং বিরোধীরা এই পদক্ষেপ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, এই পরিকল্পনা গোপনীয়তা লঙ্ঘন করবে এবং নাগরিক অধিকারের পরিসর সংকুচিত করবে। এখনও পর্যন্ত ‘ব্রিট কার্ড’-এর প্রযুক্তি সরবরাহের জন্য কোনও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়নি বলে খবর। গোপনীয়তা, সাইবার নিরাপত্তা এবং নাগরিক স্বাধীনতা-এই তিন প্রশ্ন উঠছে ব্রিট কার্ড নিয়ে। ভারতের আধার  প্রশাসনিক সাফল্য পেলেও,  ব্রিটেনে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা সময়ই বলবে।

 

Advertisement