• facebook
  • twitter
Saturday, 19 July, 2025

ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট চেয়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বিএনপি-র

ইউনূসের পক্ষ থেকে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, 'দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর তিনটি কাজের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছিল– সংস্কার, বিচার, নির্বাচন। সেসব কাজ শেষের পরই নির্বাচন হতে পারবে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই কথা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। এদিন তাঁর ভাষণে ভোটের নির্দিষ্ট দিন জানা না গেলেও ন্যাশনালিস্ট পার্টি বা বিএনপি সহ বাংলাদেশের বহু রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনে চেয়ে দেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। ফলে ইউনূসের নতুন ঘোষণায় ভোটের দাবিতে অশান্তি কিছুটা কমলেও অনিশ্চয়তার মেঘ এখনও পুরোপুরি কাটেনি।

বিএনপি চাইছে, প্রথমে নির্বাচন হোক। তারা এখনই ভোট চাইছে, কারণ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বর্তমানে নিষিদ্ধ, আর এই মুহূর্তে জনসমর্থন বিএনপির দিকে। তারা আশঙ্কা করছে, সময় পেরোলে এই জোয়ার কমে যেতে পারে। তাই ইউনূসের ঘোষণা মানতে নারাজ বিএনপি। তারা পরিষ্কার জানিয়েছে, তাদের দাবিমতো ডিসেম্বরেই নির্বাচন করতে হবে। তা নাহলে তারা আন্দোলনে নামবে। এমনকি রাস্তা অবরোধেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে খালেদা জিয়ার দল।

এ ব্যাপারে বিএনপি-র তরফে একটি দলীয় বৈঠক করা হয়। সেই বৈঠকের পর তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার বিরাট ত্যাগের মাধ্যমে এই বিজয় অর্জিত হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব মানুষকে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ করেছে। এই পরিস্থিতিতে রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা এবং আবহাওয়ার পরিস্থিতি বিবেচনা করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে এদিনে বৈঠকে।’

ঢাকার এক মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দুর্বল নির্বাচনী আইন এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা ইউনূসের পক্ষে কঠিন হতে পারে।’

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর মহম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর শাসনকালে দেশজুড়ে বিভ্রান্তি, বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তা অব্যাহত রয়েছে। তাঁর ভাষণে এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণার পরও রাজনৈতিক চাপ থেমে নেই। কারণ ইউনূস তাঁর ভাষণে স্পষ্টভাবে বলেননি, আগামী কয়েক মাসে কীভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলবে। নির্বাচন নিয়ে তাঁর অনুপস্থিত রোডম্যাপ ও প্রস্তুতির অভাব নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু কাছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’য় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ডিসেম্বরেই ভোট চেয়েছিল। আবার ন্যাশনাল সিটিজেনস পার্টি (এনসিপি) ভোট চেয়েছিল জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হলে। তাদের এপ্রিল মাসেও ভোট গ্রহণে কোনও আপত্তি নেই।

যদিও ইউনূসের পক্ষ থেকে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, ‘দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর তিনটি কাজের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছিল– সংস্কার, বিচার, নির্বাচন। সেসব কাজ শেষের পরই নির্বাচন হতে পারবে। এবিষয়ে দেশবাসীকে দিশা দেবে নির্বাচন কমিশন।’

অন্যদিকে এই যুক্তি মানতে চাইছে না খালেদার দল। তাদের সাফ কথা, নির্বাচনকে অতদূর টেনে নিয়ে যাওয়ার অর্থই হয় না। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের অর্থই আবহাওয়া সেখানে প্রতিকূল ভূমিকা পালন করবে। তার উপরে সে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয়ে যাবে রমজান। এই পরিস্থিতিতে ডিসেম্বরেই নির্বাচন করার সপক্ষে ইউনুস যা যুক্তি দেখাচ্ছেন তা ভিত্তিহীন।

উল্লেখ্য, ইউনূস ও তাঁর উপদেষ্টারা আগের বিবৃতিতে বলেছিলেন, ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬-এর মধ্যে যেকোনও সময় নির্বাচন হতে পারে। এখন সেই সময় এপ্রিলে নির্ধারণ করায় হাতে প্রায় ৯ মাস সময় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রশাসনিক স্তরে বহু রদবদল করতে হবে, যা সহজ কাজ নয়। বিশেষত যখন নির্বাচন কমিশন থেকে ‘বিএনপি ঘনিষ্ঠদের’ সরানোর দাবি তুলেছে ছাত্র নেতাদের দ্বারা গঠিত এনসিপি।