• facebook
  • twitter
Sunday, 7 December, 2025

অন্তঃসত্ত্বা সোনালির জন্য হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা রাজ্যের

স্বামী-সহ চারজন এখনও বাংলাদেশে

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

দীর্ঘ আট মাসের অপেক্ষার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় অবশেষে দেশে ফিরলেন অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি। পরের দিন মালদহের মহদিপুর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশের পর দর্জিপাড়ার প্রতিবেশীরা তাঁকে ঘিরে ধরতেই কান্না থামাতে পারেননি সোনালি। শনিবার নিজের গ্রামে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র সরকার ও প্রশাসনের নৃশংসতায় তাঁদের ওপর দিয়ে ঘটে যাওয়া অন্যায় দুর্বিপাকের কথা মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এরপর তাঁকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেখানে তার জন্য সব ধরনের চিকিৎসা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি ডা. পলাশ দাস জানান, ‘সোনালি বিবির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো ধরনের অসুবিধা যাতে না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।’ হাসপাতালের বিছানায় বসেই সোনালি বলেন, ‘যাঁর জন্য আমি বেঁচে ফিরেছি, সেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, আমার সন্তানের নাম যেন তিনিই রাখেন। আমি তাঁর কাছে ঋণী ও কৃতজ্ঞ।’

Advertisement

প্রসঙ্গত, ঘটনার সূত্রপাত ২০২৫ সালের শুরুতে। সোনালি ও তাঁর পরিবার মিলিয়ে মোট ছয়জন শুধু বাংলায় কথা বলায় দিল্লি পুলিশের বিষ নজরে পড়েন। পুলিশ তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেয় এবং অসম সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলে তাঁদের বন্দি করে রাখা হয়। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনিক তথা আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলাকালীন বাংলাদেশ আদালতেও তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয়।

Advertisement

তবে সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান এখনও হয়নি। প্রায় আট মাস পর সোনালি ও তার নাবালক পুত্রকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও, স্বামী দানেশ শেখ এবং পরিবারের চারজন এখনও বাংলাদেশে আটক রয়েছেন। সোনালির বাবা ভুদু  শেখ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘বাকি চারজন কখন ফিরবেন, তা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।’

শুক্রবার মালদহ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা শেষে শনিবার দুপুরে সরকারি খরচে অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে বীরভূমের পাইকরে নিয়ে আসা হয়। স্থানীয় মানুষ অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই সোনালিকে সংবর্ধনা জানান। পরে তাকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে বসেই সোনালি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। আমার সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে— নাম যেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দেন।’

হাসপাতালে সোনালির সঙ্গে ছিলেন বাবা ভুদু শেখ ও মা জ্যোৎস্নাহারা বিবি। এছাড়া সাংসদ সামিরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন, যিনি শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিষয়টি তদারকি করেছিলেন।

মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘ন্যায়কে ঢেকে রাখা যায় না। কলকাতা হাই কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা সঠিকভাবে মানা হয়নি। সব প্রমাণ দেখানোর পরেও তাঁকে ফেলে আসা হয় বাংলাদেশে। কেন্দ্র চোখে কালো চশমা এঁটেছিল। শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলায়, এমন হেনস্তা মানা যায় না।’ মন্ত্রী শশী পাঁজা আরও বলেন, ‘কেন্দ্র সব নিয়মকে উপেক্ষা করে এই পরিবারকে হেনস্থা করেছে। শুধু কষ্টই নয়, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারও সহ্য করতে হয়েছে।’

দিল্লি পুলিশের আচরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সোনালি বলেন, ‘আট মাস বাংলাদেশে ছিলাম। দিল্লি পুলিশ আমাদের ওপর অমানবিক আচরণ করেছিল। আমরা অনেক অনুরোধ করেছি। তবুও বিএসএফ দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। আর কখনও দিল্লি যাব না। অথচ বাংলাদেশ পুলিশ কোনও অত্যাচার করেনি।’

এখনও স্বামী দানেশ শেখ এবং চারজন সদস্য বাংলাদেশে আটকে থাকায় তাঁদের ফিরিয়ে আনা নিয়ে পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে চিন্তাভাবনা চলছে। কেন্দ্র বা বাংলাদেশ সরকার এখনও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।

Advertisement