ইউনূস সরকার বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় আসার পর দেশের অর্থনীতির হাঁড়ির হাল প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। ক্রমশ ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছে সেদেশের সরকার। আর সেই কথা এতদিন সরকারিভাবে স্বীকার করা না হলেও এবার একপ্রকার মেনেই নিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রাজস্ব দপ্তর। দেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুর রহমান খানের কথায় সেই বিষয়টিই স্পষ্ট হয়েছে। সোমবার ঢাকায় একটি আলোচনা চক্রে বক্তৃতা দেওয়ার সময় কার্যত তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছি। এ সত্য স্বীকার না করলে সামনে এগোনো সম্ভব নয়।’
জানা গিয়েছে, এই আলোচনা চক্রে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং অন্যান্য দপ্তরের সচিব ও আধিকারিকরা। এই আলোচনা চক্রেই বাংলাদেশের কর ও জিডিপির অনুপাত নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন দেশের রাজস্ব বোর্ডের প্রধান। যথেষ্ট উদ্বেগের সঙ্গে আবদুর রহমান খান বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও আমাদের কর-জিডিপি’র অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এখন তা ৭ শতাংশের কাছে ওঠানামা করছে।’ এরপর এই সমস্যার সমাধানের জন্য তিনি কারণগুলি চিহ্নিত করার প্রয়োজন রয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, জিডিপি খাতে রাজস্ব আদায় সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্য দেশের কর-জিডিপি কমে যাওয়াকে জাতীয় ঋণের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
Advertisement
প্রসঙ্গত, গত রবিবার বিশ্ব ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে একটি রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করা হয়েছে। সেই রিপোর্টের তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে দেশের অর্থনৈতিক দপ্তরের কর্তাদের। কারণ ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
Advertisement
শুধু তাই নয়, হাসিনা সরকার ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর দেশের অর্থনৈতিক হাল যে ক্রমশ তলানিতে এসে ঠেকেছে তাও প্রকাশ্যে এসেছে এই রিপোর্টে। কারণ বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য অনুসারে, পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০২০ সালে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭,৩৫৫ কোটি ডলার। কিন্তু হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত ২০২৪ সালের শেষে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রকাশিত রিপোর্টে দেশের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১০,৪৪৮ কোটি ডলার, যা আগের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ বেশি।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ক্রমবর্ধমান ঋণের ঘাটতি পূরণে বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে না পারলে বাংলাদেশ সরকার প্রবল অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়বে। দেশে নেমে আসবে চরম দারিদ্রতা।
Advertisement



