বৈসরণের উপত্যকায় কেন সেনা মোতায়েন ছিল না, তা নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তরে দায়সারা জবাব দিল কেন্দ্রের মোদী সরকার। কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং স্বীকার করেছেন, নিরাপত্তায় গাফিলতি ছিল। কিন্তু কেন এই গাফিলতি? সেখানে কেন সেনা মোতায়েন করা হয়নি? এই প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা ট্যুর গাইডদের উপরে দায় চাপিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রশাসনকে না জানিয়েই ওই রুটে পর্যটকদের নিয়ে গিয়েছিলেন ট্যুর গাইডেরা। বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু বলেন, মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটিতে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা সব দলকে জানানো হয়েছে। পাকিস্তান এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে সমস্ত দল ঐক্যবদ্ধ।
প্রসঙ্গত পহেলগাঁওয়ের বৈসরণ পর্যটন কেন্দ্র ভারতের ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ বলেও পরিচিত। গোটা দেশ তথা পৃথিবীর ভ্রমণ পিপাসুদের নজরে এই মনোমুগ্ধকর উপত্যকা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন কয়েকহাজার মানুষের সমাগম ঘটে। জায়গাটির অবস্থান অনেক উঁচুতে হলেও পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সেখানে পর্যাপ্ত রক্ষী মোতায়েন থাকাটা প্রশাসনের কাছে অবশ্যই কাম্য। কারণ যেহেতু গত প্রায় তিন দশক ধরে কাশ্মীর উপদ্রুত এলাকা, সেজন্য বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গি হামলা লেগেই থাকে। অথচ ঘটনার দিন সেখানে কোনও নিরাপত্তার বালাই ছিল না। হয়তো সন্ত্রাসবাদীরা এটা রেইকি করার সময় ভালোভাবে লক্ষ্য করে। আর সেই সুযোগটাকেই তারা পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগিয়েছে।
পহেলগামের ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার সর্বদল বৈঠক ডাকে কেন্দ্র সরকার। সূত্রের খবর, বৈঠকের শুরুতেই সংসদের প্রধান বিরোধী দলগুলির মধ্যে তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পহেলগাঁওয়ের নিরাপত্তার গাফিলতি নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন। তখন অমিত শাহ সেই অভিযোগ মেনে নিয়েও তাঁকে শোনা যায়, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা হয়েছে বলেই তো তিনি সমস্ত নেতাকে বৈঠকে ডেকেছেন! না হলে তো ডাকতেন না!
এই বৈঠকে বৈসরনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সংসদের বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গেও। এর জবাবে কেন্দ্র জানিয়েছে, সাধারণত অমরনাথ যাত্রার আগে বৈসরন এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। সেখানে পর্যাপ্ত সেনা মোতায়েন থাকে। ওই সময়েই পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় বৈসরন পর্যটন কেন্দ্র। কারণ, তীর্থযাত্রীদের অনেকেই সেখানে থাকেন। কিন্তু এ বার বৈসরনের নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখার আগেই গত ২০ এপ্রিল থেকে সেখানে পর্যটকদের নিয়ে যেতে শুরু করে দিয়েছিল ট্যুর গাইডরা। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কিছুই জানত না। সেই কারণেই বৈসরনে সেনা মোতায়েন করা যায়নি। সর্বদল বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, ট্যুর গাইডদের কেন বিনা অনুমতিতে সেখানে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হল?
বৈঠকে পরে অবশ্য নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের সব ক’টি বড় রাজনৈতিক দল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। বৈঠক শেষে রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে কোনও অভিযানকে আমরা সমর্থন করি।’ কংগ্রেস সভাপতি খাড়গেও বলেন, ‘সমস্ত দল এই ঘটনার নিন্দা করেছে। জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি বজায় রাখার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।