• facebook
  • twitter
Saturday, 19 July, 2025

ট্রাম্পের ভারতেও আছি, পাকিস্তানেও আছি-নীতি নিয়ে অস্বস্তিতে নয়াদিল্লি

আমেরিকার ২৫০তম সেনা দিবসে আমন্ত্রিত অসিম মুনির

ফাইল চিত্র

মোদীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে পরিচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের দ্বিচারিতা অস্বস্তি বাড়িয়েছে দিল্লির। ট্রাম্পের এই দু’মুখো নীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। রাজনৈতিক অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে ভারতের অভ্যন্তরেও। আমেরিকার ২৫০তম সেনা দিবস উদযাপনে যোগ দিতে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির। শনিবার তিনি আমেরিকা পৌঁছবেন বলে জানা গিয়েছে। ওইদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৭৯তম জন্মদিন। হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে অংশ নেবেন পাক সেনাপ্রধান? আমেরিকার এই ভারতেও আছি, পাকিস্তানেও আছির মতো দু’মুখো নীতি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে ভারত যখন গোটা বিশ্বে সন্ত্রাসে পাক মদতের কথা তুলে ধরছে, তখন মুনিরকে আমেরিকার জামাই আদর দিল্লির কাছে বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সূত্রের খবর, এই সফরে মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের বড় কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন পাক সেনাপ্রধান। সাউথ ব্লকের উদ্বেগ বাড়িয়ে পাকিস্তান বা আমেরিকা মুখে কুলুপ এঁটেছে উচ্চ পর্যায়ের এই সামরিক যোগসাজস নিয়ে।

যদিও এক মার্কিন সেনাকর্তা জেনারেল মাইকেল ই কুরিল্লা আমেরিকার আইনসভা সেনেটের শুনানিতে সাফ জানিয়েছেন, ভারত ও পাকিস্তান, উভয় দেশকেই আমেরিকার প্রয়োজন রয়েছে। পহেলগামে নৃশংস হামলা চালিয়েছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। কিন্তু সেই পাকিস্তানকেই ‘জঙ্গিদমনের অনবদ্য সঙ্গী’র সার্টিফিকেট দিলেন মার্কিন সেনাকর্তা! কুরিল্লা পাকিস্তানের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তান বড় মাপের অংশীদার। এ প্রসঙ্গে কুরিল্লা আইসিস খোরাসান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছেন।

বুধবার মিখায়েল ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, “সন্ত্রাসদমনের যুদ্ধে পাকিস্তান যথেষ্ট সক্রিয়। সন্ত্রাসদমনের দুনিয়ায় ওরা আমাদের অনবদ্য সঙ্গী হিসাবে থেকেছে দীর্ঘদিন। আইএস জঙ্গিদের খোরাসান গোষ্ঠীর বহু সদস্যকে নিকেশ করেছে। আমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন পাকিস্তানের সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের দেওয়া গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করে আইএস খোরাসানের অন্তত পাঁচজন শীর্ষ নেতৃত্বকে আটক করেছে পাকিস্তান, যাদের মাথার দাম প্রচুর।”

পহেলগামে নৃশংস জঙ্গি হামলার পর থেকেই বারবার নয়াদিল্লি অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। দিনের পর দিন লস্কর-ই-তইবা, জইশ-ই-মহম্মদের মতো জঙ্গিদের আর্থিক সাহায্য করেছে পাক সরকার। এমনকি ভারতের অপারেশন সিঁদুরে মৃত জঙ্গি নেতাদের শেষকৃত্যে ইউনিফর্ম পরে হাজির ছিলেন পাক সেনাকর্তারা। জঙ্গিদের কফিনের উপরে পাকিস্তানের পতাকাও রাখা হয়েছিল। যাবতীয় প্রমাণ-সহ আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে ভারত। এমনকি সন্ত্রাসে পাক মদতের প্রমাণ দিতে একাধিক দেশে গিয়ে বার্তা দিয়েছেন সংসদের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল। শশী থারুরের নেতৃত্বে সাংসদদের দল পাঠানো হয়েছিল আমেরিকাতেও। কিন্তু সেই সফরের কয়েকদিনের মধ্যেই এমন কথা মার্কিন সেনাকর্তার মুখে। তা সত্ত্বেও মার্কিন সেনাকর্তার এমন অদ্ভূত মন্তব্য শুনে কার্যত হতবাক ভারত-সহ গোটা বিশ্ব।

ভারতীয় গোয়েন্দারা মনে করে, পহেলগাম হামলার পিছনে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ভূমিকা রয়েছে। সেই মুনিরকে আমেরিকার সেনা দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার ভারতকে স্পষ্ট বার্তা দিল বলে অনুমান করা হচ্ছে। অর্থাৎ ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে আমেরিকা পুরনো ভারসাম্যের নীতি থেকে বিন্দুমাত্র সরছে না। শাহবাজ শরিফের দেশের উপর প্রধানশত্রু চিনের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব কৌশলগত কারণে কোনওভাবে চায় না ওয়াশিংটন। ঠিক সেই কারণেই ধর্মেও আছি, আবার পাকিস্তানেও আছি নীতি নিয়েছে হোয়াইট হাউস।