• facebook
  • twitter
Saturday, 19 July, 2025

সোনমের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে সঙ্গী তিন পুরুষ পর্যটকের রহস্য লুকিয়ে!

সোনমের বাবার আরও অভিযোগ, মেঘালয় পুলিশ ২-৪ দিনের মধ্যে পুরো প্রমাণ লোপাট করে দেবে। কোনও অজানা ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে ফাইল বন্ধ করে দেবে।

ফাইল চিত্র

মধু চন্দ্রিমায় গিয়ে নিখোঁজ সোনমের খোঁজে চলছে জোরদার তল্লাশি। কিন্তু এখনও এই রহস্যের কিনারা করতে পারেননি তদন্তকারীরা। অথচ নিখোঁজ হওয়ার আগে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের নবদম্পতি রাজা রঘুবংশী ও সোনমের সঙ্গে আরও তিন পুরুষ পর্যটককে দেখা গিয়েছিল। এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন স্থানীয় এক ট্যুর গাইড। তাঁর নাম অ্যালবার্ট পেড। সোনমের খোঁজে যখন জোর তল্লাশি চলছে, তখন ওই ট্যুর গাইড একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার কাছে এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন।

প্রশ্ন উঠছে, ওই তিন জন পুরুষ কি আদৌ কোনও পর্যটক ছিলেন, না কি অন্য কেউ? গাইড অ্যালবার্টের বয়ান অনুযায়ী, পুলিশ ওই তিন পর্যটকের খোঁজ চালাচ্ছে। ভা ওয়ানসাই নামে ওই গাইডও সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

প্রসঙ্গত গত মে মাসের শেষের দিকে স্ত্রী সোনমকে নিয়ে মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমায় গিয়েছিলেন ইন্দোরের যুবক রাজা রঘুবংশী। তাঁরা পূর্ব খাসি জেলার নোংরিয়াত গ্রামে একটি হোমস্টেতে উঠেছিলেন। গত ২৩ মে তাঁরা চেরাপুঞ্জি যান। সেখানে ওসারা পাহাড়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে নিখোঁজ হয়ে যান নব দম্পতি রাজা রঘুবংশী ও তাঁর স্ত্রী সোনম। গত সোমবার রাজার মৃতদেহ উদ্ধার হলেও সোনমের এখনও কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি।

তদন্তকারীদের অনুমান, দুপুর ২টো থেকে আড়াইটের মধ্যে দম্পতির উপর হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। লুটপাটে বাধা দেওয়ায় রাজাকে খুন করে তারা। আর সোনমকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। যেখান থেকে নিখোঁজ হয়ে যান দম্পতি, সেই জায়গা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই বাংলাদেশ সীমান্ত। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দুষ্কৃতীরা সোনমকে অপহরণ করে বাংলাদেশে নিয়ে গিয়েছে। যদিও এর তথ্যপ্রমাণ এখনও পুলিশের হাতে আসেনি। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে মেঘালয় পুলিশ। সোনম এবং রাজার পরিবারও এই নিখোঁজ রহস্যের নেপথ্যে মানবপাচার চক্রের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছে।

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রদেশের ইনদওরের দম্পতি নিখোঁজ হওয়ার পরেই একটি হুমকিবার্তা পেয়েছিলেন তাঁদের এক আত্মীয়। আর এই হুমকিবার্তাকে কেন্দ্র করেই রহস্য ঘনাচ্ছে। সেই হুমকি বার্তাতে বলা হয়েছিল, এমন জায়গায় গায়েব করে দেওয়া হবে যে, কেউ আর খুঁজেই পাবে না।

মাওলাখাইটের গাইড অ্যালবার্ট পেডের মতে, ২৩ মে সকাল ১০টা নাগাদ এই দম্পতিকে নোংরিয়াত থেকে মাওলাখাইটে ৩,০০০-এরও বেশি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে দেখেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন পুরুষ পর্যটক। তিনি জানিয়েছেন, ‘চারজন পুরুষ সামনে হেঁটে যাচ্ছিলেন আর মহিলাটি পিছনে। চারজন পুরুষ হিন্দিতে কথা বলছিলেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম না, তাঁরা কী বলছেন। কারণ আমি কেবল খাসি আর ইংরেজি জানি।’ ২২ মে নংরিয়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার পরিষেবা প্রদান করেছিলেন। কিন্তু তারা ভা ভানসাই নামে আরেকজন গাইডকে নিয়োগ করে শিপারা হোমস্টেতে রাত কাটান এবং পরের দিন গাইড ছাড়াই ফিরে আসেন।

জানা গিয়েছে, রাজা এবং সোনম শিলং থেকে স্কুটিতে মাওলাখিয়াত গ্রামে গিয়েছিলেন। সেই গ্রামেরই টুরিস্ট গাইড অ্যালবার্ট পেড। তিনি সংবাদ সংস্থার কাছে দাবি করেছেন, তিনি ইন্দোরের ওই নবদম্পতির মুখ ভাল ভাবে চিনে রেখেছিলেন। নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন তিনিই সোনমদের নোংরিয়াত ঘুরিয়ে দেখানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। কিন্তু সোনমরা অন্য এক গাইডের সঙ্গে যান।

অ্যালবার্ট আরও জানিয়েছেন, ওই দম্পতি নোংরিয়াতে যাওয়ার জন্য ২২ মে গাইড খুঁজতে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁকে না নিয়ে ভা ওয়ানসাই নামে ওই গাইডকে ভাড়া করেন। তার পর শিপারার একটি হোমস্টেতে রাত কাটান। ২৩ মে তিনি যখন মাওলিয়াখাতে যান, সেখানে ওই দম্পতির স্কুটি দেখতে পাননি বলে দাবি করেন অ্যালবার্ট। ঘটনাচক্রে, ওই দিনই নিখোঁজ হয়ে যান রাজা ও সোনম। তাঁদের ভাড়া করা স্কুটিটি মাওয়াখিয়াতের কয়েক কিলোমিটার দূরে পার্কিংয়ের জায়গা থেকে উদ্ধার হয়।

এদিকে সোনমের বাবা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে অনুরোধ করেছেন সোনমের খোঁজে সিবিআইকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পাঠানো হোক। তার আরও প্রশ্ন, গাড়ির দ্বিতীয় চাবি কোথা থেকে এসেছে গাড়িওয়ালার থেকে কেন জিজ্ঞাসা করা হয়নি। পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘রাজা এবং সোনমের কাছে এই লোকেরা অনেকবার গেছে। পুলিশ তাদের ধরলে সব কিছু জানা যাবে। তিনি বলেছেন যে জামাই রাজার হত্যাকারীদের ফাঁসির শাস্তি দেওয়া হোক। আমার সন্তানদের জীবিত রেখে তাদের সবকিছু লুটে নিত। কিন্তু তাদের জীবিত তো রেখে দিত। মেঘালয়ে ভগবানের ভরসায় ট্যুরিস্টরা যায়। সরকার ট্যুরিজমের প্রচার করে, কিন্তু নিরাপত্তা দিতে পারে না’।

সোনমের বাবার আরও অভিযোগ, মেঘালয় পুলিশ ২-৪ দিনের মধ্যে পুরো প্রমাণ লোপাট করে দেবে। কোনও অজানা ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে ফাইল বন্ধ করে দেবে। আমার ছেলেকে হোটেল থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ডিআইজি-র থেকে ছেলের নিরাপত্তা চেয়েছে। সেখানকার পুলিশ চাপের মধ্যে কাজ করছে। তিনি জানিয়েছেন, রাজা এবং সোনমের গাড়ির পাশে ৩-৪টি গাড়ি এসে থেমেছিল, তারা কারা ছিল? জিপিএস ম্যাপে দেখা যাচ্ছে যে, রাজা এবং সোনমের পাশে অন্য কোনও গাড়ি এসে থেমেছিল। গাইডদের থেকে এখনও পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ হয়নি। সেখানকার পুলিশ প্রমাণ লুকানোর চেষ্টা করছে।