• facebook
  • twitter
Tuesday, 15 July, 2025

ট্রাম্পের সময়সীমাই মেনে নেবেন মোদী : রাহুল গান্ধী

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক নিয়ে ভারতের উপর যে সময়সীমা চাপিয়ে দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছেন রাহুল গান্ধী।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক নিয়ে ভারতের উপর যে সময়সীমা চাপিয়ে দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল শুক্রবার জানিয়েছেন, কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে আমেরিকার সঙ্গে নয়া বাণিজ্য চুক্তি সই করবে না দিল্লি। বরং ভারত তার নিজের শর্তেই এই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। শনিবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে গয়ালের সেই দাবি শেয়ার করে রাহুল লিখেছেন, ‘গয়াল যতই বুক ঠুকে বলুন না কেন, কিন্তু আমার কথা মনে রাখুন, মোদী অনুগতের মতো ট্রাম্পের দেওয়া সময়সীমা মেনে নেবেন।’

ভারত থেকে আমেরিকায় রপ্তানি হওয়া একাধিক পণ্যের উপর ২৬ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছিল ট্রাম্প সরকার। ৯ জুলাই সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ট্রাম্প জানান, বোঝাপড়া না হলে এই শুল্ক চলতে থাকবে। অর্থাত হিসেব মতো ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সময়সীমা শেষ হতে আর মাত্র ৩ দিন বাকি। শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের দেওয়া এই ডেডলাইনের কাছে শেষ পর্যন্ত মাথা নত করে নেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। রাহুল গান্ধীর এই পোস্ট ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।

আমেরিকার স্পষ্ট বার্তা, আগামী ৯ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁদের শর্তেই চুক্তি করতে হবে দিল্লিকে। নয়তো কোনও চুক্তিতে তারা স্বাক্ষর করবে না। চুক্তির বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে উভয় পক্ষেরই আপত্তি মধ্যেই কিছু আপত্তির কথা আগেই খবরে উঠে এসেছে। এরই মধ্যে শুক্রবার বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল জানিয়েছেন, কোনও ডেডলাইন মেনে ভারত বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে না। তিনি বলেন, ‘ভারতের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকাই একমাত্র শর্ত। জাতীয় স্বার্থ সবসময়ই অগ্রাধিকার পাবে। ‘

প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতের পণ্যে শুল্কের পরিমাণ ধার্য করা হয় ২৬ শতাংশ। কিন্তু নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হওয়ার আগেই ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ ঘোষণা করেন ট্রাম্প (ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামজাত পণ্যে ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক বহাল )। ৯০ দিনের ওই সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ৯ জুলাই। ফলে তার আগেই ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতের তরফে আপাতত যেসব আপত্তি রয়েছে, তার মধ্যে প্রধান কৃষিজ পণ্যে শুল্ক ছাড়। অন্যদিকে আমেরিকার মাছ, ভুট্টা, সয়াবিন ইত্যাদির আমদানিতে ছাড় দিতে নারাজ ভারত। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, ভারত যেন আমেরিকার দুগ্ধ শিল্পের জন্য বাজার আরও উন্মুক্ত করে। কিন্তু ভারতে ৮ কোটিরও বেশি মানুষ এই ক্ষেত্রে কাজ করেন। ফলে এক্ষেত্রে ছাড় দিতে নারাজ ভারত সরকার। অন্যদিকে ভারত চাইছে, রপ্তানির ক্ষেত্রে বস্ত্র, রত্ন ও গয়না, চামড়া এবং রাসায়নিক পণ্যে মার্কিন বাজারে প্রবেশ করতে।

এই টানাপোড়েন মেটাতে বাণিজ্য মন্ত্রকের বিশেষ সচিব রাজেশ আগরওয়ালের নেতৃত্বে আমেরিকায় যায় ভারতীয় প্রতিনিধিদল। বাণিজ্য চুক্তির খসড়া নিয়ে আলোচনার পরে চলতি সপ্তাহেই দেশে ফিরে এসেছেপ্রতিনিধিদল। তার পরেই চুক্তি নিয়ে মন্তব্য শোনা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রীর মুখে। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই আভাস দিয়েছেন, ৯ জুলাইয়ের পর ওই সময়সীমা আর বৃদ্ধি করতে চান না তিনি। এই আবহে ‘সময়সীমা’ এবং ‘শর্ত’ নিয়ে পীযূষের মন্তব্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে মতানৈক্য থেকেই গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক আবার কার্যকর হলে ভারতের রপ্তানি ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাময়িকভাবে কিছু ছাড় দিয়ে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তির দিকে এগোতে পারে ভারত। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কতটা দেশের স্বার্থে, নাকি রাজনৈতিক চাপের ফলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে অনেকের মতে, রাহুল কোনও ভুল বলছেন না। বরং রাহুলের বার্তা ভবিষ্যতের এক সম্ভাব্য বাস্তবতার দিকেই ইঙ্গিত করছে।