ভারতীয় পণ্যের উপর ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ বেআইনি, এই শুল্ক প্রত্যাহার করা হোক। মার্কিন সংসদের নিম্নকক্ষে এই দাবি জানিয়ে তিনটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতি হচ্ছে আমেরিকার। রাশিয়া থেকে তেল কেনায় গত ২৭ আগস্ট ভারতের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্পের প্রশাসন। আগে এই শুল্কের হার ছিল ২৫ শতাংশ, আরও ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোয় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। এর ফলে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য ক্ষেত্রে।
বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে হাউস অফ রিপ্রেজ়েন্টেটিভস-এ প্রস্তাব পেশ করেছেন তিন জন সদস্য। এঁরা হলেন, দেবোরা রস, মার্ক ভিসে এবং রাজা কৃষ্ণমূর্তি। রাজা কৃষ্ণমূর্তি ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাঁদের মতে, এভাবে শুল্ক চাপানো আইনবিরুদ্ধ তো বটেই, পাশাপাশি এতে ক্ষতি হচ্ছে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও। ভারত ছাড়াও ব্রাজিলের পণ্যের উপরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। সংসদের এই সদস্যরা সেই শুল্কও বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছেন। তার জন্য একটি পৃথক প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যে বিশেষ ক্ষমতার বলে শুল্ক আরোপ করতে পারেন তাও প্রত্যাহারের প্রয়োজন রয়েছে। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না।
Advertisement
কৃষ্ণমূূর্তি মনে করেন, এই শুল্কের খারাপ প্রভাব পড়বে আমেরিকার অর্থনীতির উপর। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। মার্কিন কর্মচারীদের ক্ষতি হচ্ছে। ফল হচ্ছে বিপরীত। আগেও গত অক্টোবর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। এবার প্রস্তাব পেশ করা হল।
উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ফলে সবথেকে ক্ষতি হচ্ছে উত্তর ক্যারোলিনা প্রদেশে, এমনটাই জানিয়েছেন নিম্নকক্ষের সদস্য দেবোরা রস। তিনি বলেন, উত্তর ক্যারোলিনার অর্থনীতির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। সেখানকার অর্থনীতি ভারতের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। বাণিজ্যের পাশাপাশি প্রচুর ভারতীয় ব্যবসায়ীর বিনিয়োগও রয়েছে উত্তর ক্যারোলিনায়। ভারতের বিভিন্ন সংস্থা এই এলাকায় প্রযুক্তি থেকে শুরু করে আরও নানা ক্ষেত্রে এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছে। চাকরি পেয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এই শুল্ক আরোপের ফলে উত্তর ক্যারোলিনার প্রতিটি মানুষকে অতিরিক্ত করের বোঝা টানতে বাধ্য করা হচ্ছে।
Advertisement
এই প্রস্তাব পেশের কয়েকদিন আগেই ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি ভারত থেকে আমদানি করা চাল এবং কানাডা থেকে আমদানি করা সারের উপর নতুন শুল্ক আরোপ করতে পারেন। তিনি যুক্তি দেখান, ভারত, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা চাল মার্কিন কৃষকদের ক্ষতি করছে। সেই কারণে অতিরিক্ত হারে শুল্প আরোপের কথা ভাবা হচ্ছে। হোয়াইট হাউসে মার্কিন কৃষকদের জন্য ১২ বিলিয়ন ডলারের নতুন সাহায্য ঘোষণার সময় এই ইঙ্গিত দেন ট্রাম্প।
মার্কিন কংগ্রেসে বেশ কিছুদিন ধরেই ট্রাম্পের শুল্কের বিরোধিতা করে আসছেন ডেমোক্র্যাট সদস্যরা। রস, ভিসে এবং কৃষ্ণমূর্তি ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরোধিতা করে অক্টোবরে ১৯ জন আইন প্রণেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ট্রাম্পকে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক উন্নত করতে এবং ক্ষতিকারক বাণিজ্য ব্যবস্থা বাতিল করার আবেদন জানিয়েছিলেন। এরপরেও কোনও পদক্ষেপ না করায় এবার সংসদের নিম্নকক্ষে ভারতের উপর শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে প্রস্তাব জমা দেওয়া হল।
Advertisement



