পহেলগামে হামলা ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তানের জঙ্গি মদতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরে মত গঠনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চ পর্যায়ের সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে ভারত। কেন্দ্রের শাসকদল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাংসদরা ছাড়াও সেই প্রতিনিধিদলে রয়েছে ভারতের বেশ কয়েকজন কূটনীতিকও। এভাবে কেন্দ্র সরকার পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বকে সজাগ করতে যখন ব্যস্ত, তখন সংসদে বিশেষ অধিবেশন ডেকে দেশকে সজাগ করার আর্জি জানালেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের বিষয়ে যাতে দেশবাসী জানতে পারেন, সেই লক্ষ্যে সংসদের বিশেষ অধিবেশন খুবই প্রয়োজন বলে তৃণমূল সুপ্রিমো দাবি করেছেন।
এব্যাপারে শুক্রবার এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেছেন মমতা। সেই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সংঘাত এবং তার পরবর্তী ঘটনাপরম্পরার বিষয়ে দেশবাসীর জানার অধিকার রয়েছে— অন্য কারও আগে। আমি কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, প্রতিনিধিদল নিরাপদে দেশে ফিরে আসার পরে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হোক।’
মমতা আরও লিখেছেন, ‘বিশ্ব দরবারে ভারতের বহুদলীয় প্রতিনিধিদল যে ভাবে সন্ত্রাসবাদের স্বরূপ তুলে ধরছে, তা দেখে আমি খুশি। আমি আগেই বলেছি, জাতীয় স্বার্থ, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকার যে অবস্থান নেবে, দল হিসাবে তৃণমূল সরকারকে সমর্থন করবে।’
তবে এই ‘অন্য কেউ’ বলতে মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন সে সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি। যদিও তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডেল পোস্টটি ইংরেজিতে করেছেন এবং লিখেছেন ‘বিফোর এনিওয়ান এল্স’, তাই রাজনৈতিক মহলের অভিমত, ভারত-পাক সংঘাতের আবহে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রনেতাদের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
এদিকে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখন এই সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলে রয়েছেন। তিনি এখন ভারতের বহু দলীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে জাপানে আছেন। তিনি জাপান-সহ পাঁচটি দেশের সফরে রয়েছেন। সেই সময়ে কেন্দ্রকে আর্জি জানানো মমতার এই পোস্টকে এক্স হ্যান্ডেলে পুনরায় পোস্ট করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৫ জন পর্যটক সহ মোট ২৬জন নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়। পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের নৃশংসতায় সারাদেশ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এরপরই ভারত সরকার প্রত্যাঘাতের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দুই সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান। প্রথমে ভারতীয় বায়ুসেনা বিভাগ অতর্কিতে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়। তাতে বহু জঙ্গির মৃত্যু হয়। কিন্তু সেই প্রত্যাঘাতের পাল্টা হিসেবে পাক সেনা বাহিনী ভারতের একাধিক জায়গায় হামলা চালাতেই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পাল্টা প্রত্যাঘাতে পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে ভারতীয় বায়ুসেনা ও নৌবাহিনী। এরপরই বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট হওয়ার জন্য কংগ্রেস সাংসদ ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী প্রথম সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানিয়েছিলেন। কংগ্রেস ছাড়াও শরদ পওয়ারের এনসিপি, আরজেডি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা (ইউবিটি)-র পাশাপাশি সিপিআই, সিপিএমের মতো বিজেপি-বিরোধী দলগুলিও সংসদের বিশেষ অধিবেশনের দাবি জানান। এবার সেই একই দাবি তুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।