ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস তথা ডিজিএমও-র সোমবার প্রথমবারের মতো সরাসরি কথোপকথন হয়েছে হটলাইনের মাধ্যমে। মনে করা হচ্ছে, মূলত সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা হ্রাস করা এবং যুদ্ধবিরতির মতো বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয় ভারতের ডিজিএমও রাজীব ঘাই এবং পাকিস্তানের ডিজিএমও কাসিফ আবদুল্লার মধ্যে। সূত্রের খবর, এই দুই সামরিক কর্মকর্তা ১০ মে উভয় পক্ষের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল তা পর্যালোচনা করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ রেখা তথা এলওসি এবং অন্যান্য সেক্টরে সামরিক পদক্ষেপ এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়।
প্রাথমিকভাবে এই হটলাইন কথোপকথনের জন্য দুপুর ১২টায় সময় নির্ধারিত করা হলেও অজানা কারণে সেই বৈঠকের সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়। বৈঠক শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে এবং শেষ হয় বিকেল ৫টা নাগাদ। তবে এই আলোচনায় কী কী বিষয় নিয়ে কথা হয়, বা কোনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রের খবর, গুলিবর্ষণ এবং সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করার জন্য বেশ কিছু পারস্পরিক সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে নতুন করে কোনও কথা হয়নি, যদিও পাকিস্তান জলচুক্তির বিষয়টিকে আলোচনার অংশ হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিল।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণার পরই ভারত জানিয়ে দিয়েছিল, সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে ভারত যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে কোনও বদল ঘটবে না। তাই এদিন পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বিষয়টি উত্থাপন করতে চাইলে ভারত তা নিয়ে আলোচনা করতে চায়নি। কারণ আগেই ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছিল, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে কূটনৈতিক স্তরে যে যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছিল, তা অপরিবর্তিত থাকবে।
গত মাসে পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ভারত ৭ মে ‘অপারেশন সিন্দুর’ অভিযান শুরু করে। গত শনিবার, উভয় দেশ স্থল, আকাশ ও সমুদ্রে সমস্ত সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করার জন্য একটি সমঝোতায় আসে এবং যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। ভারতের তরফে জানান হয়েছিল, শনিবার বিকেল ৩টে ৩৫ মিনিটে পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন্স ভারতের ডিজিএমও-কে ফোন করেন। সেই ফোনালাপে উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জানায়।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানের তরফে এই দাবি নস্যাৎ করা হয়। বলা হয়, পাকিস্তান এমন কোনও আর্জি জানায়নি। যদিও সংঘর্ষবিরতি চুক্তি হলেও তা ৩ ঘণ্টার মধ্যেই লঙ্ঘন করে পাকিস্তান। সীমান্ত বরাবর গুলি-মর্টার ছুড়তে শুরু করে। পাল্টা জবাবও দেয় ভারতীয় বাহিনী। তবে শনিবার রাতের পর আপাতত আর হামলার ঘটনা ঘটেনি এলওসিতে।
সোমবার ভারতীয় সেনার ডিজিএমও রাজীব ঘাই আরও একবার স্পষ্ট করেছেন, ‘৭ মে শুধুমাত্র জঙ্গিদের ডেরায় হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হল, পাক সেনা জঙ্গিদের হয়ে লড়াই করেছে। আমরা তার জবাব দিয়েছি। আমাদের কোনও সেনাঘাঁটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সব হামলা যাতে প্রতিহত করা যায় সেই ভাবেই গোটা ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। ভারতের দুর্ভেদ্য এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে দাঁত ফোটাতে পারেনি শত্রুপক্ষ।’
প্রতিরক্ষা বিষয়ক এই সাংবাদিক বৈঠকে রাজীব ঘাই বলেন, যুদ্ধে ৩৫ থেকে ৪০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে এবং দিল্লি তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করেছে। সেনা আধিকারিকরা আরও বলেন যে, ভারতের সমস্ত ঘাঁটি ও সামরিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে চালু রয়েছে এবং প্রয়োজন হলে যে কোনও মিশন চালানোর জন্য তাঁরা প্রস্তুত।