পুলিশের তদন্তের গাফিলতির জেরে এক যুগ জেলে কাটালেন তিন অভিযুক্ত। ১১ বছর জেলের ঘানি টানার পর আদালত তাঁদের বেকসুর খালাসের নির্দেশ দিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ পুলিশের তদন্তে এতটাই ফাঁক-ফোকর ছিল যে, কাউকেই দোষী প্রমাণ করা যায় না। আদালতের এই অবাক করা রায় নিয়ে তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ফাস্ট ট্র্যাক আদালত তদন্তের পর তিনজনকেই দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করে। পরে ২০১৯ সালে অভিযুক্তরা সেই রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে আর্জি জানান। সোমবার, দীর্ঘ শুনানি শেষে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শব্বার রশিদীর ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে জানায়, ‘তদন্তে বহু ফাঁক-ফোকর রয়েছে, সাক্ষ্যপ্রমাণ যথেষ্ট নয়। এমন তদন্তের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।’
এরপরই আদালত তিন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেয়। সাজা ঘোষণার পর থেকে একটানা এগারো বছর জেল খেটেছেন তাঁরা। আদালতের রায়ের পর প্রশ্ন তুলেছেন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা, ‘যদি নির্দোষই হন, তবে এই এগারো বছর কে ফিরিয়ে দেবে?” এই রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে পুলিশ ও সরকার। তবে একাংশ মনে করছেন, এই মামলাটির নতুন করে তদন্তের দাবি জানাবে জয়ন্তী দেবের পরিবার।
আদালত সূত্রের খবর, ঘটনাটি ২০১৪ সালের ২০ মে। গরমের ছুটির মাঝামাঝি। শিয়ালদহ স্টেশনের ব্যস্ত পার্কিং লটে পড়ে ছিল দড়ি বাঁধা একটি লেপ, একটি বড় ট্রলি ব্যাগ আর একটি স্কুল ব্যাগ। এই ঘটনায় সন্দেহ হওয়ায় তৎক্ষণাৎ খবর দেওয়া হয় জিআরপিএফকে। ব্যাগ খোলার পর চমকে যায় গোটা শহর। উদ্ধার হয় এক মহিলার খণ্ডবিখণ্ড মৃতদেহ। পরে জানা যায়, মৃত ওই মহিলার নাম জয়ন্তী দেব। স্বামী সুরজিৎ দেবকে এই খুনের মূল চক্রী হিসেবে দাবি করে পুলিশ। সঙ্গে তাঁর বান্ধবী লিপিকা পোদ্দার এবং সঞ্জয় বিশ্বাস নামে আরও এক যুবককে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগ, পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে খুন করে দেহ টুকরো টুকরো করে পার্কিং লটে ফেলে দেওয়া হয়েছে।