ভোটদানের হার বেড়েছে ৮ শতাংশ, যা বিহারের নির্বাচনী ইতিহাসে নজিরবিহীন। এর আগে ১৯৯৮ সালের বিহার বিধানসভা ভোটে সার্বিকভাবে ভোটদানের হার ছিল ৬২.৫৭ শতাংশ। এতদিন পর্যন্ত সেই হারই ছিল সর্বাধিক। ২০০০ সালে ভোট পড়েছিল ৬২ শতাংশ। আগামী ১১ নভেম্বর বিহারের দ্বিতীয় দফার ভোটেও যদি এই হার বজায় থাকে তবে নতুন রেকর্ড তৈরি করবে বিহার।
বিহারে এই বিপুল ভোটদানের হার নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, যখনই বিহারে ভোটদানের হার বেড়েছে তখনই এই রাজ্যের ক্ষমতারও পরিবর্তন ঘটেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিহারে ভোটদানের হার ৫ শতাংশ বাড়লেই অবশ্যম্ভাবী হিসেবে সরকারেও বদল এসেছে।
১৯৬৭ সালে বিহারে ভোটদানের হার ৪৪.৫ শতাংশ থেকে ৫১.৫ শতাংশ হয়ে ভোটদানের হার বেড়েছিল ৭ শতাংশ। প্রথম কংগ্রেস হেরে যায় এবং অকংগ্রেসি জোট সরকার গঠন হয়। ১৯৮০ সালে ভোটের হার ৫০.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয় ৫৭.৩ শতাংশ। সেইবারও ভোটদানের হার বৃদ্ধি পেয়েছিল প্রায় ৭ শতাংশ। ফের ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস, জনতা সরকারের পতন হয়। ১৯৯০-এ ৫৬.৩ শতাংশ থেকে ভোটদানের হার বেড়ে হয় ৬২ শতাংশ। আবার কংগ্রেসের বদলে ক্ষমতায় আসে লালুপ্রসাদ যাদবের জনতা দল।
২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় প্রথম দফায় ভোট হয়েছে মধ্য ও দক্ষিণ বিহারের ১৮টি জেলার ১২১টি আসনে। ১ হাজার ৩১৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই ভোটারদের ভিড় লক্ষ্য করা গিয়েছে বিভিন্ন বুথগুলিতে। সকাল ৯টার মধ্যেই ভোট পড়ে যায় প্রায় ১৪ শতাংশ। এরপর যত বেলা বেড়েছে ততই বুথগুলিতে ঢল নেমেছে ভোটারদের। এবার বিধানসভা ভোটের প্রথম দফায় ভোটদানের হার বেড়েছে ৮ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে ভোটদানের হারে এই লম্ফন কী ফের সরকার বদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে ?
বিশ্লেষকদের মতে, কোনও রাজ্যে ভোটদানের হার বাড়লে সেই রাজ্যে সরকারবিরোধী পালে হাওয়া প্রবল এমনটাই দেখা গিয়েছে। বিশেষেত বিহারের ক্ষেত্রে বেশিরভাগই এই তত্ত্বের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। যদিও সর্বত্র এই বিশ্লেষণ ভোটের ফলাফলে নাও প্রতিফলিত হতে পারে। যেমন, ২০০৫ সালে ভোটের হার কমেছিল প্রায় ১৬ শতাংশ। কিন্তু তবুও সরকারে বদল ঘটে, প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন নীতীশ কুমার। তবে বিহার রাজ্যে এবার বিরোধীদের দাবি, এনডিএ-র ক্ষমতাচ্যুতি ঘটতে চলেছে, ভোটদানের বিপুল হার তারই ইঙ্গিত।
তবে বিশ্লেষকদের এই পূর্বাভাসে আমল দিতে রাজি নয় এনডিএ শিবির। তাদের দাবি, বিহারের মানুষের আবেগ আর ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটেছে ভোটবাক্সে।একাংশের মতে, ভোটদানের হারে এই বৃদ্ধির কারণ এসআইআর। কারণ বিশ্লেষকদের মতে, নির্ভুল ভোটার তালিকা ভোটের হার বাড়িয়ে দেয়। বিহারের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে।
বিহারের অর্ধেক আসনে এখনও ভোট বাকি। এখন দেখার দ্বিতীয় দফার এই ভোটে ভোটদানের হার কতটা দাঁড়ায়। বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, বিহারের গ্রামাঞ্চলে এবার মহিলাদের ভোটদানের হার অনেকটাই বেড়েছে। মনে করা হচ্ছে এই হারবৃদ্ধি নীতীশ কুমারের সামাজিক প্রকল্পগুলির প্রতি আস্থার ইঙ্গিত হতে পারে। অন্যদিকে তরুণ ভোটারদের মধ্যে তেজস্বীর প্রভাব জোরালো হতে পারে। আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় তথা শেষ দফার ভোট বিহারের ১২২টি আসনে। গণনা আগামী ১৪ নভেম্বর। তারপরেই নির্ধারিত হবে বিহারের ভাগ্য। যদিও এখন সরকার গঠনে আত্মবিশ্বাসী প্রধান প্রতিপক্ষ দুই শিবির।