• facebook
  • twitter
Wednesday, 26 March, 2025

শিরোধার্য

মমতা প্রশাসন চালাচ্ছেন নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়ে

নিজস্ব চিত্র

পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই দল এখন বড় দল। তার শাখাপ্রশাখা বিস্তৃত। এই দলের সভানেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন দলের হাল ধরে আছেন, তেমনই শাসনকার্য অতি দক্ষতার সঙ্গে পালন করছেন। এই দলের সাংসদ এবং সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বলেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস বড় দল—আর বড় দল হলে মতবিরোধ থাকবে, গোষ্ঠীকলহ মাথা চাড়া দেবে, নেতা-কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনাও ঘটবে— তা আবার মিটিয়েও নিতে হবে। দলে শৃঙ্খলা রক্ষার কমিটি রয়েছে। সুতরাং দলের কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কমিটির সুপারিশানুযায়ী তার বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। সম্প্রতি শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও হয়েছে। বড় দল হলে এই সব থাকবে। তা নিয়ে সমালোচনার কোনও জায়গা নেই। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন তৃণমূলের এই উঠতি সাংসদ।

তৃণমূল সাংসদ যা বলেছেন, তা যথার্থ। যেটা তিনি বলেননি, তা হল দলের সভানেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের পরিচালনা নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের যে উপদেশ দেবেন, তা শিরোধার্য। তা মেনে চলতে হবে। তিনিই শেষ কথা বলবেন। রাজ্য বিজেপিও বড় বিরোধী দল— এই দলেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট— শীর্ষনেতাদের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন অত্যন্ত শিথিল। তাছাড়া সাংগঠনিক শক্তি এত দুর্বল যে নির্বাচন এলে এই দলের শাসক তৃণমূলের সঙ্গে লড়া অত্যন্ত কঠিন। তাই ক্ষমতা লাভের জন্য দলের নেতারা তৃণমূল কংগ্রেসকে গালমন্দ করলেও— রাজ্যের মানুষ তা না মেনে মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই আছেন এবং থাকবেন অদূর ভবিষ্যতেও। ২০১১ সালের নির্বাচনে বামফ্রন্টের যখন পতন ঘটল, তখন রাজ্যে অরাজকতা চরমে উঠেছিল। দীর্ঘ বামেদের শাসনে মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে রাজ্যে শাসনে একটা পরিবর্তন চেয়েছিলেন। বাংলার মানুষের কাঙ্খিত সেই পরিবর্তন এনে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানা বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হয়ে। শুধু পরিবর্তনই এনে দিলেন না— উন্নয়নের ঢেউ তুললেন, সেই ঢেউ এখনও অব্যাহত গতিতে চলছে।

বামপন্থীদের শাসনে বাংলায় যে অরাজকতা চলছিল, তা দূর হল। তিনি প্রশাসনিক কাজে একটি নতুন ধারার প্রবর্তন করলেন। তা কী? প্রশাসনকে সচল রাখার জন্য তিনি জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক শুরু করলেন— যার অর্থ জেলা প্রশাসনের কর্তারা উন্নয়নের কাজ ফেলে রাখতে পারবেন না। তিন মাস অন্তর অন্তর তিনি জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করা আরম্ভ করবেন, যার জন্য উন্নয়নের কাজে একটি জোয়ার এল। কাজে গাফিলতির প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই প্রশাসনিক কাজের ধারা এখনও চলছে, যদিও তা আগের মতো তিনমাস অন্তর অন্তর হয় না। বিরোধীরা সমালোচনা শুরু করলেন। প্রশাসনিক বৈঠকে প্রচুর অর্থ খরচ হয়, তাতে রাজ্যের কোষাগারের ওপরও প্রভাব পড়েছে।

গত কয়েক বছরের তৃণমূলের শাসনে রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। প্রচুর সংখ্যায় নানা জনহিতকর প্রকল্প বাস্তবীকরণের জন্য রাজ্যের মানুষ উপকৃত। তাই প্রতিটি নির্বাচনেও দেখা যায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীদের জয়লাভ।

মমতা প্রশাসন চালাচ্ছেন নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়ে। তার মধ্যে প্রধান কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের অসহযোগিতা। রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দিতে চরম অনীহা। তার জন্য নানা অজুহাত। কেন্দ্রের প্রকল্পগুলি যা রাজ্যে চলছে তার জন্য যে অর্থ বরাদ্দ, তাতে ছাঁটাই। সুতরাং শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে বিপাকে ফেলার জন্য নানা কৌশল কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের। তার অর্থ তৃণমূলের শাসন আর্থিক দিক থেকে দুর্বল হলে বিজেপির সুবিধা। কারণ এই দলও ক্ষমতালোভী— পশ্চিমবঙ্গে এই দল শাসন কায়েম করতে চায়। কিন্তু বিজেপির সব কৌশল এবং কেন্দ্র রাজ্যের প্রাপ্য অর্থ থেকে বঞ্চিত রেখেও তৃণমূলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কখনওই পেরে উঠছে না। তাই রাজ্যে এই দল শাসন লাভে ব্যর্থ হচ্ছে প্রতিটি নির্বাচনে, সে লোকসভাই হোক অথবা বিধানসভায়ই হোক। কেন্দ্রের বিজেপি নেতারা— এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও লোকসভা বা বিধানসভার ভোটে দফায় দফায় এসে সভাসমিতে তৃণমূলের সমালোচনা করে মানুষকে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার অনুরোধ জানান। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিজেপির পরাজয় ঘটে তৃণমূলের কাছে। বিজেপি শুধুই ডবল ইঞ্জিনের স্বপ্নও দেখে যাচ্ছে।

গত ১৪ বছরের শাসনে পশ্চিমবঙ্গ এখন অন্যান্য অঙ্গ রাজ্যের তুলনায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে এগিয়ে আছে— শুধু মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্য প্রশাসনের হাল শক্ত হতে ধরায়। সব বিরোধী নতারা তাঁর সমালোচনা করেন, নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরেন, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অবিচল। ভালো কাজেরও সমালোচনা হয়, সেটা মেনেই। কিন্তু দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে, শাসক দলেও অনেক নেতাদের মধ্যে এখন শৃঙ্খলার অভাব দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ শাসক দলে থেকে, ক্ষমতা দেখিয়ে বিত্তশালী হয়ে উঠেছেন, কেউ প্রভূত সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তৃণমূল নেত্রী সব জানেন, তাই তিনি বলেছেন জোর গলায় যাঁরা অন্যায়ভাবে প্রভূত বিত্তের মালিক হয়েছেন, তাঁদের প্রতি তাঁর কোনও সহানুভূতি নেই। দলের শৃঙ্খলা কমিটি তা দেখবে। ব্যবস্থা নেবে।

তারপর তিনিই শেষ কথা বলবেন। তাই সব সমালোচনা অগ্রাহ্য করে রাজ্যের মানুষ ভোট এলে তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দেন মমতার মুখের দিকে চেয়ে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য যেসব কল্যাণকর প্রকল্প গ্রহণ করেছেন, তাতে রাজ্যের মানুষ উপকৃত। তাই মানুষ মমতার পাশে, তাঁর দলের পাশে। বিজেপি নেতারা রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য কত কিছুই না করছেন, কিন্তু রাজ্যের মানুষ তাতে বিভ্রান্ত না হয়ে মমতার পাশেই আছেন, থাকবেনও।