• facebook
  • twitter
Sunday, 27 April, 2025

কংগ্রেসের ঘাড়ে দোষ

প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর মুখ খুললেন

প্রতীকী চিত্র

অ-বিজেপি ২৬টি বিরোধী দল এখন মরিয়া হয়ে লেগেছে বিজেপিকে দিল্লির মসনদচ্যুত করা। এই দলগুলির একজন শীর্ষনেতা বলেছেন, এবার এই জোট ঐক্যবদ্ধ থাকবে— কোনওভাবে মতান্তর হলেও তা মিটিয়ে নেওয়া হবে, কিন্তু জোট ভাঙবে না। আগামী ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এই জোট বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ে এই শাসক দলকে পরাস্ত করে দিল্লির মসনদ দখল করবে এবং ১৪২ কোটির ভারতে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে। কংগ্রেসের যুব নেতা রাহুল গান্ধি সংসদে ফিরে আসার পর, সংসদে যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক কাজের দৃষ্টান্ত রাখছেন, তেমনই সাংসদ হিসেবে ফিরে আসায় জোটের শক্তিও ক্রমে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিরোধী দলের সাংসদরা শেষ পর্যন্ত জিতলেন। নতুন সংসদ ভবনে বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার দিন থেকেই মণিপুরে হিংসা, সংঘর্ষ, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চলছিল। তা নিয়ে মণিপুরে বিজেপি শাসিত সরকারের মন্তব্য কী তা জানার জন্য বিরোধী সাংসদরা তাঁর বিবৃতি দাবি করে আসছিলেন। এই দাবির পক্ষে বিরোধীরা সংসদের উভয় কক্ষে এমন উত্তাল হয়েছিলেন যে অধ্যক্ষরা প্রায় প্রতিদিন সভা মুলতুবি করে দিতে বাধ্য হন। এই কয়েকদিন ধরে উভয় সভার কাজ দারুণভাবে ব্যাহত হয়েছে— কোনও কাজ হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে বিরোধী সাংসদরা কোনও কোনও দিন দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দাবি না মানার জন্য বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর মুখ খুললেন। কিন্তু সব শেষে যখন প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা দিতে উঠলেন, তখন লোকসভার বিরোধী সদস্যরা খুব বেশি সংখ্যায় উপস্থিত ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্ব ভারতের এই ছোট্ট রাজ্যে যে হিংসা, সংঘর্ষ চলছে, তার দায় পুরোটাই তিনি কংগ্রেসের ওপর চাপিয়ে দিলেন। তাঁর অভিযোগ কংগ্রেসই নির্বাচনে হেরে গিয়ে মণিপুরে যে হিংসার তাণ্ডব চলছে, তার মদত দিচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার সর্বতোভাবে চেষ্টা করছে মণিপুরে শান্তি ও সংহতি ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু কংগ্রেসের উস্কানিতে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে মণিপুরে বিজেপি সরকার শান্তি ফিরিয়ে আনার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। তিনি এ ব্যাপারে সবপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছেন। কারণ মণিপুরের সাধারণ নাগরিকরা যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, মণিপুর সরকারের সেটাই লক্ষ্য। মণিপুরের উন্নতি যাতে ব্যাহত না হয়, তা দেখা সবারই উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মণিপুরের মা-বোনেদের আশ্বস্ত করতে চাই মণিপুরে অচিরেই শান্তি ফিরিয়ে আনা হবে। সেখানে যাতে তাঁরা নিরাপদে বাস করতে পারেন এবং মণিপুরের উন্নয়ন হয়, তার জন্য সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে যেসব অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে, তার মূলে কংগ্রেস। এই দিন প্রধানমন্ত্রী সরকারের পক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যয় করেন।

অপর দিকে রাহুল গান্ধি মণিপুরের অশান্তি নিয়ে বিজেপি সরকারকে সম্পূর্ণভাবে দায়ী করেন। তিনি বলেন, আজ কয়েক মাস হল মণিপুরে অশান্তি চলছে, কিন্তু বিজেপি শাসিত মণিপুরে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মোদি সরকার কোনও চেষ্টা করেনি। অপর বিরোধী সাংসদরাও মোদি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন মণিপুরের অশান্তি নিয়ে। বিরোধী পক্ষের বক্তব্য, আজ প্রায় বাধ্য হয়েই প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে মুখ খুললেন। এই রাজ্যে সমস্যার মূল কারণ এবং সেই সমস্যা সমাধানে তাঁর সরকার কী করতে চায়, তা নিয়ে তেমন কিছু তাঁর মুখে শোনা গেল না। মণিপুরে শান্তি ফিরিয়ে আনার কী ব্যবস্থা তাঁর মুখে শোনা গেল না। গত তিন মাস হল মণিপুরে অশান্তি চলছে, অথচ সরকার চুপচাপ রয়েছে।

শেষ পর্যন্ত অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর প্রধানমন্ত্রী মণিপুর নিয়ে তাঁর বক্তব্য রাখলেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে খুশি হতে পারলেন না বিরোধী সাংসদরা। তিনি মণিপুরে অশান্তির জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করলেন ঠিকই, কিন্তু নিজের দলের গঠিত সরকারের ব্যর্থতা সম্বন্ধে কিছু বললেন না। সুতরাং বিরোধী সাংসদরা মোদীর মণিপুর নিয়ে যা বললেন, তাতে খুশি হতে পারলেন না।
অনাস্থা প্রস্তাব টিকবে না লোকসভায়, তা জেনেও বিরোধীরা এই প্রস্তাব এনেছিলেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতি স্মরণ করে। আশা করা যায়, এখন সংসদের অধিবেশন ভালোভাবেই চলবে। দেশের উন্নয়ন নিয়ে নানাবিধ আলোচনা হবে। বিরোধীদের সহযোগিতা মিলবে।