• facebook
  • twitter
Monday, 21 April, 2025

এক ডুবে ১০ হাজার

যোগী আদিত্যনাথের দাবি, কুম্ভমেলার ব্যবস্থাদি নিয়ে বিভিন্ন মহলে যে সমালোচনা হয়েছে, তা ঠিক নয়।

ফাইল চিত্র

আপনি কি পুণ্যস্নান করতে চান? এক ডুব দিলে লাগবে ১০ হাজার টাকা! এইভাবে প্রয়াগরাজের সঙ্গমে পুণ্যস্নানের ব্যবস্থা করে দেওয়ায় ভাগ্য ফিরল বেকার যুবক এবং বাইক চালকদের। মকর সংক্রান্তি থেকে আরম্ভ করে শিবরাত্রি পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীরা সঙ্গমে স্নান সারলেন। সেই সঙ্গে কলসিতে পুণ্য জল ভরে তাঁরা বাড়ি ফিরলেন। আপনি/আপনারা পুণ্যস্নান করতে চান? উত্তর এল হ্যাঁ। তাহলে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা অথবা সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকা লাগবে। একটার বেশি ডুব দিলে, তার জন্য বাড়তি টাকা। এইভাবে হাজার হাজার বেকার যুবকরা স্নানার্থীদের ধরে স্নানের ব্যবস্থা করে দিয়ে বিপুল অর্থ রোজগার করলেন। এই মানুষরা স্নানকারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে সঙ্গমের নির্দিষ্ট স্থানে স্নান করিয়ে আনল। কিন্তু এত টাকা যাঁরা নিয়ে আসেননি, তাঁদের কপালে ঘটল বিড়ম্বনা। ভিড় পাতলা হওয়ার অপেক্ষায় তাঁদের থাকতে হল ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

বাইক চালকদের কামাই সবচেয়ে বেশি। তারা তিনজনের কম পুণ্যস্নানের জন্য যাত্রী বাইকে তুলত না। জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা। তাছাড়া যে পুণ্যার্থী বেশি টাকা দিতে রাজি, তাকে সঙ্গমের যেখানে বিশুদ্ধ জল, সেখানে নিয়ে গিয়ে স্নান করার ব্যবস্থা করে দেওয়া। সেই জল পাত্রে ভরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করা। তাহলে সেই মকর সংক্রান্তির দিন থেকে শিবরাত্রি পর্যন্ত পুণ্যার্থীদের স্নানকাজ সম্পন্ন করে দেওয়া বাবদ বেকার যুবক ও বাইক চালকরা বিপুল টাকা উপার্জন করলেন। এই কাজে প্রশাসন যুবক ও বাইক চালকদের কোনও বাধা দেয়নি। বরং ভিড় যাতে পাতলা হয়, তার জন্য তারা যে কাজ করল, তার জন্য খুশি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।

শিবরাত্রির পর থেকে স্নানের পুণ্যলগ্ন শেষ হয়ে যাবে— তাই এই যুবকরা স্নানের কাজে সাহায্য করার জন্য দর হাঁকালো আরও বেশি। উপার্জনও মোটা অঙ্কের টাকা। ‘আহা, এমন স্নানের পুণ্য লগ্ন যদি ঘন ঘন আসত’— একজন যুবক যাঁর কামাই প্রায় এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল। প্রয়াগরাজের রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ে শুধু ভিড় আর ভিড়। পুণ্যার্থীরা চলছে সঙ্গমে পুণ্যস্নান করতে। জীবনের সবচাইতে বড় সাধ মেটানোর লক্ষ্যে তাদের প্রয়াগরাজে আসা। তাঁরা লোকমুখে শুনেছেন সঙ্গমের জল দূষণে ভরা— শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। কিন্তু তাতে কী? সঙ্গমের যেরকম জলই থাক না কেন, যতই বিষাক্ত হোক না কেন— তাতে তাঁদের কিছু যায় আসে না। স্নান করাই পুণ্যলাভ। তাই তাঁরা এসেছেন।

উত্তরপ্রদেশ সরকার একটি ঘোষণায় বলেছে, মকর সংক্রান্তি থেকে আরম্ভ করে এ পর্যন্ত প্রায় ৬১ কোটি মানুষ স্নান সেরেছেন। একমাত্র বিঘ্ন ঘটেছে মৌনী অমাবস্যার রাতে, যেদিন পুণ্যলগ্নে স্নান করার জন্য হুড়োহুড়ি শুরু হয় পুণ্যার্থীদের মধ্যে। তখন পদপিষ্ট হয়ে মারা যান ৩০ জন পুণ্যার্থী। আহত হন বেশকিছু। কয়েকটি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। তাতে বেশ কিছু তাঁবু পুড়ে গেছে। এর বাইরে এত লোকের সমাগম হলেও, অন্য কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনা প্রয়াগে ঘটেনি।

শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে সঙ্গমস্থানে এসে পৌঁছেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি বলেছেন, ৫০ কোটি পুণ্যার্থীর সমাগম হবে, সেই হিসেব করে সব ব্যবস্থাদি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আরও ১৫ কোটি বেশি পুণ্যার্থী এসেছেন স্নান করতে। এত লোক সমাগম যেখানে, সেখানে দু-একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতেই পারে। তিনি আবার দাবি করেছেন, সঙ্গমের জল বিশুদ্ধ, দূষণহীন। তিনি প্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কয়েক দফায় সঙ্গমের জল নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন— তাতে প্রমাণ মিলেছে জল বিশুদ্ধ। এখানে স্নান করলে পুণ্যার্থীদের স্বাস্থ্যের কোনও ক্ষতি হবে না। এদিকে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বলেছে, সঙ্গমের জলে দূষণের মাত্রা বেশি। সেখানে স্নান করলে শারীরিক ক্ষতি হতে পারে। তবে পুণ্যার্থীদের বিশ্বাস, জল যত দূষিতই হোক, এখানে স্নান করা মানেই পুণ্যার্জন।

যোগী আদিত্যনাথের দাবি, কুম্ভমেলার ব্যবস্থাদি নিয়ে বিভিন্ন মহলে যে সমালোচনা হয়েছে, তা ঠিক নয়। বেশি পুণ্যার্থীর সমাগম হবে ভেবেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সুযোগসুবিধা মতো এসে পুণ্যস্নান করে গেছেন। তিনিও ব্যবস্থাদি দেখে খুশি। খুশি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। তবে বিজেপি নেতাদের একাংশ বলেছেন, যোগী আদিত্যনাথের আগে থেকেই সতর্ক হয়ো উচিত ছিল। ঠিক ঠিক ব্যবস্থা থাকলে মৌনী অমাবস্যার রাতের সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। এবারের কুম্ভ মেলা একটা শিক্ষা হয়ে রইল।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, তিনি কুম্ভ মেলাকে সম্মান করেন। কিন্তু এবার পদপিষ্ট হয়ে যে ৩০ জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হল, তা মর্মান্তিক। উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গাসাগর মেলাতেই দেড় থেকে দুই কোটি ভক্তের সমাগম হয়েছিল। কিন্তু কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।