• facebook
  • twitter
Sunday, 4 May, 2025

বিজেপিকে রুখতে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা খোলা চিঠিই তৃণমূলের সেরা হাতিয়ার

দয়া করে ওদের কথায় বিশ্বাস করবেন না। আমরা সকলে মিলেমিশে থাকতে চাই। ওরা সঙ্কীর্ণ নির্বাচনী রাজনীতির কথা ভেবে আমাদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে চায়।

নিজস্ব চিত্র

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি রাজ্যবাসীর উদ্দেশে চার পাতার একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। রাজ্য ও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই চিঠিটি লেখা হয়েছে। সেখানে বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-কে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। বিজেপি ও আরএসএস-কে রুখতে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা সেই খোলা চিঠিই হাতিয়ার হতে চলেছে তৃণমূলের কাছে। এভাবে দলনেত্রীর দেখানো পথেই তাঁরা রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলকে আক্রমণ করতে চলেছেন। এই চিঠিকে আবার তৃণমূলের অনেক জনপ্রতিনিধি দলনেত্রীর সতর্কবার্তা বলেই মনে করছেন।

জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা একটি খোলা চিঠি। যদিও সেটি প্রকাশ্যে আসার আগেই দলের সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের কাছে তা পাঠানো হয়েছিল। তার প্রায় প্রতিটা ছত্রে বিজেপির ‘সাম্প্রদায়িক’ রাজনীতিকে নিশানা করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে যে ভাষায় সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন, ঠিক সেই ভাষা ও লাইনেই বিজেপিকে আক্রমণ শানাতে হবে।

এমনকি চিঠিটি লিফলেট আকারে এলাকায় এলাকায় মানুষের মধ্যে বিলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এভাবে তৃণমূল সুপ্রিমোর বক্তব্য রাজ্যের সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, পাড়ায় পাড়ায়, মোড়ে মোড়ে এবং হাটে-বাজারে দলীয় পথসভার মাধ্যমে চিঠিতে লেখা মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সারাংশকে মানুষের সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু মমতার লেখা এই খোলা চিঠিতে ঠিক কী বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে? এ বিষয়ে জানা গিয়েছে, খোলা চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘রাজ্যে যে মিথ্যার প্রচার চলছে, তার মূলে রয়েছে আরএসএস।’ তিনি মুর্শিদাবাদে ঘটে যাওয়া হিংসার ঘটনা নিয়ে অভিযোগ করেছেন, প্ররোচনার কারণে ঘটে যাওয়া দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাকে ব্যবহার করে বিভেদের রাজনীতির খেলা খেলতে চাইছে বিজেপি এবং আরএসএস। সেই বিভাজনের কৌশল যেন কোনও ভাবেই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে না পারে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।

এব্যাপারে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এক তৃণমূল বিধায়কের কথায়, মুর্শিদাবাদের ঘটনা যেন জনমানসে নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, দিদি সে কথাই খোলা চিঠির মাধ্যমে বুঝিয়েছেন। দলের নির্দেশমতো তাঁরা এখন থেকেই নিজের নিজের এলাকায় কাজ করতে শুরু করে দিয়েছেন বলে জানান। কারণ, বিজেপি চাইছে এই বিভাজনের রাজনীতিকে হাতিয়ার করে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যেতে। যেহেতু দল থেকে দিদির চিঠি দিয়ে প্রচার শুরু করতে বলেছে, তাতে কাজ অনেকটা সহজ হবে বলে করেন ওই তৃণমূল নেতা।

তৃণমূলের এক রাজ্যনেতার কথায়, চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, সকলে শান্ত থাকুন, সাম্প্রদায়িক অশান্তি রোখা হবেই। এই অশান্তির নেপথ্যে যাঁরা জড়িত রয়েছে, তাদের কড়া হাতে দমন করা হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, রাজ্যের সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। তাই আগামীতে তাঁরা সম্প্রীতির বার্তা নিয়েই রাজ্যের সর্বস্তরের এবং সব ধর্মের মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছেন।

এদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। মমতাকে উদ্দেশ্য করে তাঁদের পাল্টা দাবি, তাঁর প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্য প্রধান বিরোধী দল এবং একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর সকল নাগরিকের প্রতি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল।’

উল্লেখ্য, চিঠির একটি অংশে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে নিশানা করেছেন মমতা। মমতা লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ অন্যান্য রাজ্যের মতো নয়। এখানে সংবিধান-বিরোধী ব্যবস্থা কায়েম নেই। বাস্তবিকই বাংলা সব অর্থেই অগ্রণী রাজ্য।’ এপ্রসঙ্গে তিনি উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, মণিপুরের অশান্তির ঘটনার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন। তাই তৃণমূল নেতারা তাঁদের বক্তব্যে বিজেপি শাসিত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রসঙ্গ তুলে ধরবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন করেছেন, ‘দয়া করে ওদের কথায় বিশ্বাস করবেন না। আমরা সকলে মিলেমিশে থাকতে চাই। ওরা সঙ্কীর্ণ নির্বাচনী রাজনীতির কথা ভেবে আমাদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে চায়।’