ঘরে বাইরে চরম সমস্যার সম্মুখীন পাকিস্তান। পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর শিয়রে দাঁড়িয়ে আছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। তার মধ্যেই দেশের প্রাদেশিক রাজ্য বালুচিস্তানের বিদ্রোধীরা একটি আস্ত শহর দখল করে নিয়েছে। শেহবাজ সরকারের ধারনা, পহেলগামের ঘটনার বদলা নিতে যেকোনও মুহূর্তে যুদ্ধে নামতে পারে ভারত। সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামরিক প্রস্তুতি দেখে সেই আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। আর এবার যুদ্ধে নামলেই ভারতের অন্যতম লক্ষ্য হবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর পুনরুদ্ধার করা। তাছাড়া যুদ্ধের সময় এইসব অঞ্চলের ওপরেই বেশি প্রভাব পড়বে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং যুদ্ধকালীন সময়ে খাদ্য মজুত করা শেহবাজ সরকারের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ অংশে গমের আটা মজুত করতে শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গঠন করা হয়েছে জরুরি তহবিল।
এব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী দেশের আইনসভায় জানিয়েছিলেন, সীমান্তে উত্তেজনার পরিস্থিতিতে বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনে এই তহবিলের অর্থ খরচ করা হবে। নীলম, ঝিলাম ভ্যালি, হাভেলি, পুঞ্চ, কোটলি এবং ভিমবেরের মতো জেলায় নিয়ন্ত্রণরেখা ঘেঁষা অঞ্চলের জন্য এই তহবিল প্রস্তুত করা হয়েছে। কিছু দিন আগে এই সমস্ত এলাকার সাধারণ মানুষকেও খাদ্য মজুতের পরামর্শ দিয়েছিল প্রশাসন।
যেসব এলাকায় সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা রয়েছে, ইতিমধ্যে সেইসব এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সব এলাকায় যুদ্ধকালীন সময়ের জন্য পর্যাপ্ত আটা মজুত করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। ইতিমধ্যে পাক সংবাদমাধ্যম ডন প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য উল্লেখ করেছে। সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, চিহ্নিত এলাকাগুলিতে অন্তত দু’মাসের খাদ্য মজুত করা হয়েছে। যদিও কী কারণে এই খাদ্য মজুতের তৎপরতা, তা প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট করে জানানো হয়নি।
সূত্রের খবর, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী চৌধরি আনোয়ারুল হকের নির্দেশে এই খাদ্য মজুতের কাজ শুরু হয়েছে। খাদ্য দপ্তরের প্রধান চৌধরি আকবর ইব্রাহিম ডনকে বলেছেন, ‘নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে অন্তত দু’মাসের আটা যাতে মজুত থাকে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি।’ ইব্রাহিম আরও জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে যাতে খাদ্যের সঙ্কট না-তৈরি হয়, সেজন্য খাদ্যভান্ডার নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা আছে কিংবা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, এমন জায়গায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত কয়েক দিন ধরে ভারত এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অতিসক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এজন্য অশান্ত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এলাকা। প্রতি রাতেই পাকিস্তানি সেনা সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ ভারতের। এমনকি ভারতীয় সেনা ঘাঁটি লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছে পাক সেনা বাহিনী। এই গুলি চালাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ছোট ধরনের অস্ত্র। তবে পাল্টা জবাব দিচ্ছে ভারত। শনিবার রাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এভাবে টানা ১০ দিন সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করল পাকিস্তান। অশান্তির আবহে নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন এলাকায় খাদ্য মজুত দুই দেশের যুদ্ধের জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এমনিতেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন অধিকাংশ এলাকা দুর্গম ও তুষারাবৃত। এইসব এলাকাগুলিতে বরাবরই আগাম খাদ্য মজুত করে স্থানীয় খাদ্য দপ্তর। ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতি ১৫ দিন অন্তর এই অংশে খাদ্য মজুত করা হয়। কিন্তু ডন জানিয়েছে, ওই এলাকাগুলির বাইরেও বিস্তীর্ণ অংশকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেখানে আটা মজুত করার কাজ চলছে।