স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টায় ভাটপাড়া

তিনদিন পরেও ভাটপাড়ার থমথমে পরিস্থিতি পরিবর্তনের কোনও লক্ষণই নেই। মাঝে মাঝে শােনা যাচ্ছে ভারি বুটের শব্দ। জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা।

Written by SNS Barrackpore | June 24, 2019 10:48 am

উত্তপ্ত ভাটপাড়ায় বিক্ষোভ রুখতে উপস্থিত ছিল র‍্যাফ, পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্স। (File Photo: IANS)

তিনদিন পরেও ভাটপাড়ার থমথমে পরিস্থিতি পরিবর্তনের কোনও লক্ষণই নেই। মাঝে মাঝে শােনা যাচ্ছে ভারি বুটের শব্দ। জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। স্থানীয় দুই যুবকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাটপাড়া-কাঁঁকিনাড়া।

স্থানীয়দের অভিযােগ, পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় ১৭ বছরের বাসিন্দা রােহিত ওরফে রামবাবু সাউ ও বছর চল্লিশের ধরমবীর সাউয়ের। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনদিন ধরে কার্যত অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি।

তারমধ্যে আগুনে ঘি ঢালছে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ব্যবসায়ীদের। প্রায় দেড় মাস ধরে দোকানপাট বন্ধ। দু’বেলা পেটে দেওয়ার মত কিছু নেই। এরমধ্যে আয়ের উৎস দোকানই খুলতে পারছেনা কাঁকিনাড়ার দোকানদাররা। যার ফলেই ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে ব্যবসায়ীদের মনে।

রবিবার এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সকালেই পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বারাকপুরে সাংসদ অর্জুন সিং। সূত্রের খবর, বৈঠকে সবরকমভাবে এলাকায় শান্তি ফেরানাের আবেদন জানানাে হয়। এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে যাতে কোনওভাবে গুজব না ছড়ায়, সেই বিষয়েও নজর রাখতে বলা হয়।

অর্জুন বলেন, এদিন কিছু দোকান পাট খুলেছে। আগামীদিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে বাস চালু করতে। তাহলেই ধীরে ধীরে শান্তির পথে ফেরা সম্ভব হবে।

প্রকাশ, মাসখানেক আগেও সর্বক্ষণ ভিড় লেগে থাকত ভাটপাড়া-কাঁঁকিনার বাজার এলাকায়। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতেন পাইকারি ক্রেতারা। কিন্তু, লােকসভা ভােটের পর থেকেই বদলাতে থাকে চিত্রটা। বাড়তে থাকে হিংসাত্মক ঘটনা। পুলিশি নিরাপত্তার আবাস পেয়ে গত বৃহস্পতিবার কয়েকটি দোকান খােলে। কিন্তু দুপুরেই ফের হিংসা ছড়ালে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ ফের আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারপর থেকেই শােনা যাচ্ছে শুধুমাত্র পুলিশ, র‍্যাফের ভারি বুটের আওয়াজ। লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির আশঙ্কায় মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের।

শেষপর্যন্ত এদিন অর্জুন সিং ও প্রশাসনের আশ্বাসের পর কিছু দোকান খুলেছে। তবে এখনও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি ভাটপাড়া-কাঁঁকিনার।

এরমধ্যেও পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, পুলিশ সাহায্য করবে বলেও করেনি। তাদের আরও দাবি ভয়ের চোটে বাইরে থেকে লােক আসছে না। ফলে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। শুধু ব্যবসায়ীরা নয়, আতঙ্কের রয়েছে সাধারণ মানুষ। নিরাপত্তার কারণে স্কুলগুলােতে ছেলেমেয়েদের পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা। পড়াশােনা কার্যত শিকেয় উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা প্রশাসনের কাছে দাবি করেছেন, যেকোনও মূল্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে।

লােকায় ১৪৪ ধারা জারি করে বিভিন্ন রাস্তায় চলছে পুলিশের নাকা চেকিং। তবুও মানুষের মন থেকে আতঙ্ক কাটছে না। সেই আতঙ্ক কাটিয়ে সাধারণ মানুষের মনােবল ফিরিয়ে আনতেই শনিবার পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব নিয়ে থেকেই এরিয়া ডমিনেশনের কাজ শুরু করেন মনােজ বার্মা। সাধারণ মানুষের মনােবল বাড়াতে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলেন পুলিশ আধিকারিকরা। সােমবার থেকে স্কুল খুলে যাবে।

এদিকে এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানির কোনও বিরাম নেই। এদিনও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অভিযােগ করেন, বিজেপি বহিরাগতদের ভাটপাড়ায় নিয়ে এসেছে। বিহার, ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশ থেকে লােক নিয়ে এসেছে গণ্ডগােল পাকানাের জন্য।

সাংসদ অর্জুন সিং পাল্টা জানান বহিরাগত থাকলে শাসক দলের পুলিশ কেন গ্রেফতার করছে না। এলাকার বাসিন্দারা পুলিশের উপর আস্থা হারিয়েছে। পুলিশকে নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে।