• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

প্লাস্টিকের জন্য গঙ্গার জীববৈচিত্র্য বিপন্ন, রিপোর্ট প্রকাশ কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের

বন্যপ্রাণ গবেষণা বিষয়ক কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া’-র সমীক্ষায় সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশিত

দূষণে বিপন্ন গঙ্গার জীববৈচিত্র! বন্যপ্রাণ গবেষণা বিষয়ক কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া’-র সমীক্ষায় সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ‘প্যাকেজিং প্লাস্টিক’-জাত বর্জ্যের দূষণে কয়েকটি জলজ প্রাণী-প্রজাতির অস্তিত্ব সংকটে বলে খবর।

ডব্লিউআইআই-এর একটি গবেষক দল ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার লালবাথানি এবং রাধানগরের মধ্যবর্তী ৭৬ কিলোমিটারের গঙ্গা অববাহিকায় সমীক্ষা চালায়। এই অঞ্চলের ঠিক উত্তরেই বিহারের কাহালগাঁও থেকে সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সংরক্ষিত অঞ্চল ‘বিক্রমশীলা গ্যাঞ্জেটিক ডলফিন স্যাঙ্কচুয়ারি’ নামে পরিচিত। গাঙ্গেয় শুশুকদের সংরক্ষণের উদ্দেশে ভারতের প্রথম গড়ে তোলা হয়েছিল এই সংরক্ষিত অঞ্চলটিকে। প্যাকেজিং প্লাস্টিক-জাত বর্জ্যের জন্য গঙ্গার মধ্য অববাহিকা দূষিত হচ্ছে বলে রিপোর্টে প্রকাশ।

Advertisement

বিক্রমশীলা গ্যাঞ্জেটিক ডলফিন স্যাঙ্কচুয়ারির পাশাপাশি লালাবাথানি-রাধানগর অঞ্চলের গঙ্গাতেও শুশুক,মসৃণ ত্বকের ভোঁদড়, ঘড়িয়াল ও নানা প্রজাতির বিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপের বাস। ৭৬ কিলোমিটারের মধ্যে ৩৪ কিলোমিটারই জীববৈচিত্র্যের নিরিখে ‘সমৃ্দ্ধ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্লাস্টিকের ব্যাগ, পলিথিনের প্যাকেট, বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর মোড়ক প্রভৃতিকে দূষণের জন্য দায়ী করা হয়েছে।

Advertisement

৫২ শতাংশেরও বেশি দূষণ এই দ্রব্যগুলো থেকে হয় বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শক্ত প্লাস্টিকের টুকরো। যা গঙ্গা দূষণের জন্য ২৩ শতাংশের মতো দায়ী। তামাকজাত পদার্থ পাঁচ শতাংশ এবং ভাঙা কাপ-প্লেট-চামচের মতো গৃহস্থালি বর্জ্য সাড়ে চার শতাংশ দূষণ ঘটাচ্ছে বলে রিপোর্টে প্রকাশ। বিভিন্ন গোত্রের ব্যাক্টেরিয়া জলজ বাস্তুতন্ত্র এবং জীববৈচিত্রের মূল ভিত্তি। নদীর তলদেশবাসী সেই সব ব্যাক্টেরিয়া সামগ্রিক ভাবে বাস্তুতন্ত্রের হাল ধরে থাকে বলে জানাচ্ছেন জীব বিজ্ঞানীরা।

দূষিত বর্জ্য নদীর তলদেশে জমলে ব্যাক্টেরিয়া-জগত সবার প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর তার প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে গোটা জীবজগতের উপরে। বস্তুত, ব্যাক্টেরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে জীববৈচিত্র ও বাস্তুতন্ত্রের ভিতটাই নড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জলজ মেরুদণ্ডী-অমেরুদণ্ডী প্রাণী। নদীতে দূষণ বাড়লে তার থাবা থেকে রেহাই পায় না তীরবর্তী এলাকার মানুষও। লালবাথানি-রাধানগর অঞ্চলে দূষণের ফলে জীববৈচিত্রের ক্ষতির ৩৭,৭৩০টি নমুনা সংগ্রহ করেছেন ডব্লিউআইআই-এর গবেষকরা।

পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রায় ২৫২৫ কিলোমিটার বয়ে চলেছে গঙ্গা। গঙ্গাকে পরিশুদ্ধ রাখতে ১৯৮৪ সালে কেন্দ্রের নির্দেশে তৈরি হয়েছিল গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান। ২০১১ সালে সেটির পরিবর্তে তৈরি হয় ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’। জাতীয়, রাজ্য এবং জেলা স্তরে পৃথক পৃথক কমিটি গড়ে গঙ্গাদূষণ আটকানো এবং নদীতে জলের প্রবাহ অক্ষুণ্ণ রাখাই ছিল উদ্দেশ্য। তাতেও গঙ্গা দূষণ রোধ করা সম্ভব হয়নি।

জাতীয় পরিবেশ আদালতে এ নিয়ে একটি মামলা দায়ের হয়। সেই মামলায় গঙ্গাতীরবর্তী পুরসভাগুলিকে তরল বর্জ্য ‘সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’-এর মাধ্যমে পরিশোধনের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্লাস্টিক বর্জ্য পৃথকীকরণে নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। তারপরেও অধিকাংশ পুরসভা বর্জ্য পরিশোধনে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে খবর। অশোধিত অবস্থায় বর্জ্য পদার্থ গঙ্গায় ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

Advertisement