ফের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মুখ খুললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আপাতত যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেনের বিতর্কিত ডনবাস অঞ্চলটি রাশিয়া এবং ইউক্রেন নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিক, এমনই পরামর্শ তাঁর। এছাড়াও আর কোনও পথ খোলা নেই বলে রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা যেমন আছে তেমনই ভাগ করে ফেলা হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনি এটিকে এখন যেমন আছে তেমনই রেখে দিতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ আলোচনা তাঁরা পরে করতে পারেন।কিন্তু আপাতত, সংঘাতের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষেরই যুদ্ধ থামানো উচিত। তাঁদের উচিত বাড়ি ফিরে যাওয়া, লড়াই বন্ধ করা, মানুষ হত্যা বন্ধ করা।’
Advertisement
ভৌগোলিক দিক থেকে ডনবাস ইউক্রেনের অংশ। এই অঞ্চলের উপর দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষ্য রয়েছে রাশিয়ার। ২০১৪ থেকেই এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া। ডনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত এই ডনবাস। অর্থনৈতিক দিক থেকেও ডনবাস গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ইউক্রেনের জনপ্রিয় শিল্প-শক্তি কেন্দ্র।
Advertisement
২০২২-এ পুতিনের বাহিনী যখন ইউক্রেন আক্রমণ করে, তখন এই ডনবাস অঞ্চলের অধিকাংশ জায়গা দখল করে নেয়। এখনও ডনবাসের অধিকাংশ অঞ্চলই রাশিয়ার দখলে রয়েছে। ট্রাম্পের পরামর্শ, বর্তমানে যে অবস্থানে ডনবাস অঞ্চল রয়েছে, সেইভাবেই যদি ভাগ করে দেওয়া হয় তবে আপাতত যুদ্ধ মিটতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অধিকাংশ অঞ্চলই থাকবে রাশিয়ার ভাগে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তা মেনে নেবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সূত্রের খবর, সাংবাদিক বৈঠকের আগে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে দীর্ঘসময় ধরে ফোনালাপে কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেই কথোপকথনেই নাকি পুতিন প্রস্তাব দেন, ইউক্রেন যদি দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল ছেড়ে দেয়, তবে রাশিয়া খেরসন ও জাপোরিঝিয়া প্রদেশের কিছু অংশ থেকে সেনা সরিয়ে নেবে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, দুই দেশের মধ্যে এই ভূমি বিনিময়ের প্রস্তাবে নাকি সহমত হন ট্রাম্পও। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইউক্রেনকে চুক্তি মেনে নিতে জোর দেন বলেও জানা গেছে।
জেলেনস্কি অবশ্য এই বিষয়ে তাঁর অবস্থানে দৃঢ়। রবিবার এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ইউক্রেন কখনও সন্ত্রাসবাদীদের অপরাধের বিনিময়ে মাটি ছাড়বে না। আমরা আমাদের মিত্রদের উপর ভরসা রাখি, যাঁরা এই নীতিতেই অটল।’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এর পর রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ইউক্রেনের সঙ্গে যে কোনও ধরনের শান্তিচুক্তির জন্য আগে দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করা দরকার। তবেই দীর্ঘস্থায়ী শান্তি নিশ্চিত হবে।
আগামী নভেম্বরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করবেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকদের মতে, তার আগে পূর্ব ইউরোপের যুদ্ধ নিয়ে কিছুটা সুর নরম করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। রবিবার এয়ার ফোর্স ১ বিমানে ট্রাম্পকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেখানেই তিনি ডনবাস অঞ্চলটি ভাগ করে নেওয়ার কথা বলেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে থেকে তিনি দাবি করেছিলেন, ক্ষমতায় এলে এই যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন। কিন্তু এরপরও দফায় দফায় পুতিন ও জ়েলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পরও ফল মেলেনি। সমঝোতার জায়গায় আসতে পারেনি এই দুই দেশ।
Advertisement



