শেখ হাসিনাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার লক্ষ্যে একের পর এক আন্তর্জাতিক আইনি পথ খুঁজছে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যেই ভারত সরকারের কাছে প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা হয়েছে এবং ফের ইন্টারপোলের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে। এবার আলোচনায় উঠে এসেছে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসিতে যাওয়ার বিকল্প পথ। আর এখানেই তৈরি হয়েছে বড়সড় বিতর্ক ও জল্পনা।
বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল উপদেষ্টামণ্ডলীর বৈঠকের পর জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর মন্তব্যের পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন এমন পদক্ষেপের কথা ভাবছে সরকার?
Advertisement
কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞমহলের বক্তব্য, ২০০২ সালে চালু হওয়া এই আদালত যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার মতো গুরুতর অপরাধে বিচার করে, যখন কোনও সদস্য দেশ নিজেই বিচার করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি একেবারেই উল্টো। ঢাকা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতিমধ্যেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে। অর্থাৎ দেশ নিজেই বিচার করেছে, সাজাও ঘোষণা করেছে।
Advertisement
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে আইসিসিতে যাওয়ার ভাবনা কেন? এ প্রসঙ্গে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে— এর একটাই লক্ষ্য, ভারতকে চাপে ফেলা। ‘ভারত সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরাচ্ছে না’ — এই বার্তা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরাই নাকি উদ্দেশ্য।
এর আরও একটি রাজনৈতিক দিক রয়েছে। আদালতের রায় ঘোষণার পর দিনই শেখ হাসিনা মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলে হেগের আদালতে তা দেখাক।’ আওয়ামী লিগও বারবার ঢাকার ট্রাইব্যুনালের বিচারকে ‘অবৈধ’ বলে দাবি করেছে। সেই প্রেক্ষিতে আইসিসির পথে হাঁটার এই তৎপরতার মধ্যে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করারই একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আইসিসির ভূমিকা যে কতটা প্রভাবশালী হতে পারে, তা স্পষ্ট রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ও ইজরায়েলের বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে নিয়ে নেওয়া সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতেই এই দুই রাষ্ট্রনেতার আন্তর্জাতিক সফর কার্যত সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
কূটনৈতিক মহলের প্রশ্ন, বাংলাদেশ কি ভারতের উপর সেই একই চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে? কারণ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। ভারতকে আন্তর্জাতিকভাবে অস্বস্তিতে ফেলার পাশাপাশি দেশীয় রাজনীতিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানকেও তুলে ধরার চেষ্টা চলছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এখন দেখার, কথা থেকে কাজে কতদূর এগোয় ঢাকা। বিশ্বের নজর এখন দুই প্রতিবেশী দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েনের দিকে।
Advertisement



