ইরানের পরমাণু কেন্দ্র এবং সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। অন্তত ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে ইরানের বিভিন্ন এলাকায়। ইরানের রাজধানী তেহরানে তো বটেই, সংলগ্ন এলাকাতেও আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। ইরানের শীর্ষ সেনা কর্তার পাশাপাশি প্রাণ হারিয়েছেন পরমাণু কেন্দ্রের ৬ বিজ্ঞানী। এই হামলার পিছনে আমেরিকার হাত রয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে সেই ইঙ্গিতই মিলেছে। যদিও ইজরায়েলের এই হামলার সঙ্গে আমেরিকার কোনও যোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইরানে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। আমরা এই হানার সঙ্গে যুক্ত নই। ওই অঞ্চলে থাকা মার্কিন সেনাবাহিনীকে সুরক্ষিত রাখাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। ইজরায়েল জানিয়েছে, আত্মরক্ষার স্বার্থে এই বিমানহানা জরুরি ছিল। আমাদের বাহিনীকে রক্ষা করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসন সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে।’ একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ইরানে ইজরায়েলি হামলার বিষয়ে আগে থেকে জানতেন ট্রাম্প। সম্ভবত সেই কারণেই পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে মার্কিন আধিকারিকদের সরিয়ে নেয় ওয়াশিংটন।
এক মার্কিন সংবাদপত্রের দাবি, ইরানের কয়েকটি পরমাণু কেন্দ্র মাটির অনেক গভীরে রয়েছে। সেখানে হামলা চালানোর জন্য বিশেষ বোমার প্রয়োজন। তাতেই আমেরিকার সাহায্য দরকার। এদিকে রবিবার ওমানে পরমাণু বৈঠকে বসার কথা আমেরিকা এবং ইরানের। আমেরিকা চায় না ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাক। ওই বৈঠকে থাকার কথা ওয়াশিংটনের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের। অবশ্য ইরান আগেই দাবি করেছে, তারা কোনও পরমাণু বোমা তৈরি করছে না। ফলে সেদিনের বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়, তার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে।
ইরানের রাজধানী তেহরান সহ বিভিন্ন এলাকায় আকাশপথে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। হামলার পর তেহরান-সহ একাধিক শহরের বিমান বন্দরে উড়ান ওঠানামা বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ইজরায়েলি হানায় মৃত্যু হয়েছে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল মহম্মদ বাগেরির।
ইজরায়েলের হামলায় মৃত্যু হয়েছে ইরানের রেভলিউশনারি গার্ডের প্রধান কমান্ডার জেনারেল হোসেন সালামি এবং ডেপুটি কমান্ডার জেনারেল ঘোলামালি রশিদের। ইজরায়েলি হানায় প্রাণ হারিয়েছেন ইরানের ছ’জন পরমাণু বিজ্ঞানীও। নিহত বিজ্ঞানীদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রাক্তন প্রধান ফেরেউদুন আব্বাসি। ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ প্রত্যেকের মৃত্যুর খবরই স্বীকার করে নিয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথম এত বড় হামলার সম্মুখীন ইরান।
ইজরায়েলের হামলার পরেই প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই একটি বিবৃতি দিয়ে ইজরায়েলকে ‘কঠোর শাস্তি’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, খারাপ পরিণতির জন্য ইজরায়েল যেন প্রস্তুত থাকে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে অন্তত ১০০টি ড্রোন ছুঁড়েছে ইরান। তবে সেগুলি আপাতত নিষ্ক্রিয় করছে ইজরায়েলি সেনা। অন্যদিকে জর্ডনের জাতীয় মিডিয়া জানিয়েছে, ইরানের বেশ কিছু ড্রোন এসেছে তাদের আকাশসীমাতেও। সেগুলি গুলি করে নামানো হয়েছে। বিধ্বংসী হামলার আশঙ্কায় ভুগছে ইজরায়েলও। ইতিমধ্যেই ইজরায়েলে ‘স্টেট অফ ইমার্জেন্সি’ বা জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তেহরানের তরফে লাগাতার পরমাণু হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেটা যতদিন পর্যন্ত না নির্মূল করা যায় ততদিন চলবে এই হামলা। আপাতত আগামী কয়েক ইরানের উপর হামলা চলবে বলেই জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। তীব্রতর এই হামলার কারণে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্তজ বলেন, ‘ইরানের হামলা রুখতে আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।’