• facebook
  • twitter
Thursday, 15 May, 2025

রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করার অভিযোগে ২ চিনার পরিচয় প্রকাশ্যে আনল ইউক্রেন

আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধ যখন চরমে উঠেছে, তখন বেজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় করার চেষ্টা করছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।

কিছুদিন আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি দাবি করেন, উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনের মতোই চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এবং রাশিয়ার হয়ে লড়তে সেনা পাঠাচ্ছেন। এমনই দুই চিনা যোদ্ধাকে গ্রেপ্তারির কথাও জানান তিনি। এবার সেই দুই চিনা সেনাকে প্রকাশ্যে এনেছে ইউক্রেন সরকার। প্রকাশ্যে আনা হয়েছে তাঁদের পরিচয়ও। এদিকে দুই সেনার পরিচয় এভাবে প্রকাশ্যে আনায় ক্ষুব্ধ বেজিং।

দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে ২ জন চিনাকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি ইউক্রেনের। কিয়েভের দাবি, রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছিল এই দুই চিনা। গত সপ্তাহেই বিষয়টি জানিয়েছিলেন জেলেনস্কি। এবার ওই দুই চিনা নাগরিকের পরিচয় প্রকাশ্যে এনেছে ইউক্রেন।  প্রশ্ন উঠেছে, ইউক্রেনের কি এটি কোনও রাজনৈতিক চাল ?

আমেরিকা এবং চিনের মধ্যে শুল্ক যুদ্ধ যখন চরমে উঠেছে, তখন বেজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় করার চেষ্টা করছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে চিনের ভূমিকা নিয়ে কিয়েভ এক ভাবমূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, ১৫৫ জন চিনা নাগরিক রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছে বলে কিয়েভের কাছে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। জেলেনস্কি বলেন, ‘চিনা বিষয়টি গুরুতর। ১৫৫ জনের নাম, পাসপোর্ট ও অন্যান্য তথ্য আমাদের হাতে এসেছে যারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আমাদের বিশ্বাস, এই সংখ্যা আরও বেশি।’ এই আবহে ধৃত দুই চিনাকে প্রকাশ্যে আনল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির প্রশাসন। একই সঙ্গে তারা অভিযোগ করেছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে চিন। তিনি আরও দাবি করেন, বেজিং এই বিষয়ে অবগত ছিল।

যদিও বেজিং ইউক্রেনের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। চিন সবসময় তার নাগরিকদের সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়ে এসেছে।’ চিনের পালটা অভিযোগ, যুদ্ধবন্দিদের নাম, পরিচয় প্রকাশ্যে এনে আন্তর্জাতিক বিধি ভেঙেছে ইউক্রেন।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধৃত দুই চিনা নাগরিককে যখন সংবাদমাধ্যমের সামনে আনা হয় তখন তাঁদের পরনে ছিল সেনার পোশাক। তাঁদের সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতিও দেওয়া হয়। তাঁদের পাশে একজন অনুবাদক দাঁড়িয়েছিলেন, যিনি বন্দীদের প্রশ্নগুলিকে অনুবাদ করছিলেন। পাহারায় ছিল সশস্ত্র ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা বাহিনী।

এঁদেরই একজন জানিয়েছেন, কোভিড মহামারীর সময় চাকরি হারানোর পর তিনি টাকা রোজগারের উপায় খুঁজছিলেন। রাশিয়ায় প্রতি মাসে আড়াই লক্ষ রুবেল (প্রায় ৩,০০০ ডলার) আয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তিনি বলেন, অতীতে তাঁর চিকিৎসা পুনর্বাসনের প্রশিক্ষণ ছিল, যা তিনি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যখন তিনি মস্কোতে পৌঁছন, তখন তাঁকে জোর করে যুদ্ধ প্রশিক্ষণে যোগ দিতে বলা হয় এবং তাঁকে যুদ্ধের কাজে নিযুক্ত করা হয়। উভয় যুদ্ধবন্দীই বলেছেন, তাঁদের ভাষাগত সমস্যা ছিল এবং তাঁদের দেওয়া সমস্ত নথিপত্র রুশ ভাষায় থাকায়, তাঁরা কিছু বুঝতে পারেননি।

প্রসঙ্গত, গত অক্টোবরে আমেরিকার তরফে জানানো হয়েছিল, রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করতে অন্তত ১০ হাজার সেনা পাঠিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম। পরবর্তী সময়ে কুর্স্ক অঞ্চলে যুদ্ধে হত কয়েক জন উত্তর কোরীয় সেনার দেহ উদ্ধার করেছিল ইউক্রেন ফৌজ। গত বছর সিঙ্গাপুরে একটি প্রতিরক্ষা সম্মেলনে বক্তৃতায় জেলেনস্কি বলেছিলেন, “চিনের তরফে রাশিয়াকে মদত দেওয়া হচ্ছে। আর সেই কারণেই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ইউক্রেনের এই দাবিই ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।