• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

যুদ্ধবাজ ট্রাম্প

ট্রাম্পকে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষ থেকে। সেই পাকিস্তান ইরানের ওপর মার্কিন হামলার দ্ব্যর্থহীন নিন্দা করেছে।

ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে এবার সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে নামল আমরিকা। ২১ জুন গভীর রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করলেন, ইজরায়েলকে পাশে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন সরাসরি লড়বে ইরানের বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, হোয়াইট হাউসের নির্দেশে ইরানের নাতাজ, ইসফাহান ও ফরডো— এই তিনটি প্রধান পরমাণু কাঠামোয় হামলা চালানো হয়েছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ’সবকটি হামলা ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে। ইরানের মূল পারমাণবিক এনরিচমেন্ট সাইট ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

ইরানের কাছে এখন দুটো রাস্তা আছে, হয় শান্তির পথে এসো, নয়তো কঠিন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হও। ওরা যদি অন্যথা কিছু করার চেষ্টা করে, এরকম আরও কাঠামো আমরা একের পর এক ধ্বংস করে যাবো।’ ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই অভিযানে ব্যবহৃত হয়েছে ৩০ হাজার পাউন্ড বোমা, ছ’টি ‘বাঙ্কার ব্লাস্টার’ এবং অন্তত ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র। কিন্তু ইরান বলছে, বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। ইরানের রাষ্ট্রীয় ও সামরিক সূত্র জানিয়েছে, ফরডো-সহ কোনও পরমাণু কেন্দ্রই ধ্বংস হয়নি। এমনকি আন্তর্জাতিক পরমাণু নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইআইএ জানিয়েছে, ফরডো কেন্দ্রের আশেপাশে কোনও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। স্যাটেলাইট চিত্রেও সেই দাবির সমর্থন মিলেছে।

Advertisement

পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইরানও। ইরান যখন তেল আভিভের উপর হামলার ছবি ও তথ্য সামনে আনছে, তখন বিপর্যয় ধামাচাপা দিতে ইজরায়েলে আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করছে সেদেশের সেনা ও পুলিশ। বহু বিদেশি সংবাদকর্মীকে আটক করা হয়। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই পদক্ষেপ আসলে ইজরায়েলের তথাকথিত ‘অপ্রতিরোধ্যতা’র মুখোশ খুলে যাওয়ার প্রমাণ।
তবুও ইরানের ওপর আমেরিকার হামলার নিন্দা করতে পারলেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসৌদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মোদী। নিজের এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন—অবিলম্বে উত্তেজনা প্রশমণ, আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার পথ বের করতে হবে আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার জন্য।

Advertisement

একটি স্বাধীন, সর্বভৌম দেশ যে বারে বারে বলছে, তার পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে না। এমনকি ট্রাম্প সরকারও চলতি বছরের শুরুতেই জানিয়েছিল ইরান এমন কিছু করছে না, তারপরও ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রের উপর হামলার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা জানাতে পারলেন না প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাঁর বিবৃতিতে শুধুই ‘গভীর উদ্বেগ’, ‘সাম্প্রতিক উত্তেজনা’ ইত্যাদি শব্দবন্ধনী। কেন উত্তেজনা, কে হামলা করলো সেটুকু বলারও হিম্মত দেখাতে পারেননি মোদী।

দীর্ঘদিন ধরে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। এরপর তারা হামলা শুরু করেছে ইরানের ওপর। এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা প্রশমনের ভূমিকা নেওয়ার বদলে নিজেই হামলা চালালো ইরানের ওপর। ট্রাম্প প্রশাসনের এই একতরফা আক্রমণের নিন্দায় সরব হয়েছে বহু দেশ। কয়েকদিন আগেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে ডেকেছিলেন ট্রাম্প। সেই ট্রাম্পকে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষ থেকে। সেই পাকিস্তান ইরানের ওপর মার্কিন হামলার দ্ব্যর্থহীন নিন্দা করেছে। সেদেশের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে যথেষ্ট কড়া শব্দও ব্যবহার করা হয়েছে। মোদী সরকারকেও মার্কিন-পন্থী, ইজরায়েল-পন্থী বিদেশনীতি ছেড়ে যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বব্যাপী উদ্যোগে সামিল হতে হবে।

Advertisement