ব্রিকসে যোগ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ব্রাজিলে মোদীর থাকর সময়ই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, যে দেশ ব্রিকসের আমেরিকা বিরোধী নীতির সঙ্গে যোগ দেবে তাদের ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ আমেরিকা বিরোধী নীতির সঙ্গে যোগ দিলে মার্কিন পণ্য কেনার ক্ষেত্রে বাড়তি ১০ শতাংশ কর গুণতে হবে। সোমবার থেকেই হোয়াইট হাউসের তরফে এ বিষয়ক নথি বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন শনিবার। ব্রাজিলে থাকার সময়ই ট্রাম্পের এই শুল্ক বিষয়ক ঘোষণায় কারণে জোর চর্চা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। শুধু ভারত নয়, ব্রিকসের মঞ্চে যে সব দেশ আমেরিকা বিরোধী নীতির সঙ্গে যোগ দেবে তাদের ক্ষেত্রেই বাড়বে ১০ শতাংশ শুল্ক।
Advertisement
রিও ডি জেনেইরো অনুষ্ঠিত এবারের ব্রিকসের সম্মেলনে যোগ দেননি চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নিজেরা উপস্থিত না থাকলেও ব্রাজিলে প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল দুই দেশ। তবে দুই শক্তিশালী দেশের রাষ্ট্রপ্রধান যোগ না দেওয়ায় ব্রিকসের সম্মেলন কিছুটা হলেও গুরুত্ব হারিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন ও দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে ব্রিকস গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। পরে সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ইরান ব্রিকস গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়।
Advertisement
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে একাধিক দেশের ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলাল্ড ট্রাম্প। ভারতের উপর চাপানো হয়েছিল ২৬ শতাংশ কর। যদিও তিন মাসের জন্য এই শুল্ক স্থগিত রাখা হয়েছিল। আগামী ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিতাদেশের সময়সীমা। কমানোর বদলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরপর ভারতের ক্ষত্রে শুল্ক আরও বাড়ান কিনা সেটাই এখন দেখার।
পাশাপাশি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাড়তি ১০ শতাংশ কর চাপানোর হুমকির পর মুখ খুলেছে চিন। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং জানিয়েছেন, অন্য দেশের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য শুল্ককে ব্যবহার করার এই পন্থা মেনে নেওয়া যায় না। শুল্ককে এভাবে ব্যবহার করলে কারোরই কোনও লাভ হবে না বলে তোপ দাগে বেজিং। অন্য দেশের উপর এই জোরজবরদস্তি মেনে নেওয়া যায় না বলেও প্রতিক্রিয়া চিনের।
চিন এবং রাশিয়ার পাশাপাশি ভারতও ব্রিকসের অন্যতম সদস্য। রবিবার ব্রাজিলে ব্রিকসের সম্মেলনে বক্তৃতা করেন মোদী। পরে ওই আন্তর্জাতিক জোট একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে। সেখানে সরাসরি আমেরিকার নাম উল্লেখ না করলেও শুল্ক ব্যবস্থার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্রিকসের অবস্থান জানানো হয়। এর পরেই ভারতীয় সময় অনুযায়ী সোমবার সকালে সরাসরি ব্রিকসকে নিশানা করেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার পর কড়া তোপ দেগেছে চিন। সে দেশের বিদেশমন্ত্রকের তরফে বলা হয়, ‘এইভাবে শুল্ক চাপানোটা কারোর পক্ষেই ভালো নয়। প্রথম থেকেই এই অবস্থানে অনড় থেকেছে চিন।’ তবে ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের পালটা কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা এখনই ভাবছে না ব্রিকস। নিংয়ের কথায়, ব্রিকস কোনওরকম সংঘাত চায় না। তবে চিন স্পষ্ট জানিয়েছে, যেভাবে বিশ্বের একের পর এক দেশের উপর ট্রাম্প জোর করে শুল্ক চাপাচ্ছেন তা জুলুমের সমান।
আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য আলোচনার মধ্যেই শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারি। চিনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেললেও ভারতের সঙ্গে চুক্তি এখনও চূড়ান্ত হয়নি ট্রাম্প প্রশাসনের। প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল পারস্পরিক শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভারতের উপর ২৬ শতাংশ, চিনের উপর ৩৪ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর ২০ শতাংশ, জাপানের উপর ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প।
Advertisement



