রনজিৎ দাস
অ্যান্থনি অ্যান্ড্রুজ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের মহিলা ফুটবল দলের কোচ নির্বাচিত হওয়ার সময় তাকে নিয়ে বাংলার ফুটবল মহলে বিশেষ আলোচনা হয়নি। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ভারতীয় মহিলা লিগ জয়ের পর অ্যান্হনি অ্যান্ড্রুজকে নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা হচ্ছে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পুরুষ দলের ব্যর্থতার সময়কালে মহিলা দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে কোচ অ্যান্থনি অ্যান্ড্রুজ আরোও বিশেষভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন। মাত্র ২৯ বছরের অ্যান্থনি অ্যান্ড্রুজ এখন ভারতীয় মহিলা ফুটবলের সবচাইতে সফল কোচ।
বাংলার ফুটবলের মতন মিডিয়ার এত প্রচার ভারতবর্ষের অন্যকোন রাজ্যের ফুটবলে নেই। মিজোরামের চানমারি এফসি এবার আইলিগের দ্বিতীয় বিভাগ থেকে রার্নাস হয়ে আইলিগের মূলপর্বে প্রমোশন পেল। কোচ দীপাঙ্কুর শর্মা যখন মেঘালয়ের চানমারি এফসির কোচ নির্বাচিত হলেন,তখন মেঘালয়ের ফুটবলে ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে তোলপাড় চলছিল। কম বাজেটের চানমারি এফসিকে প্রধানত যুব ফুটবলারদের উপর ভরসা করে কোচ দীপাঙ্কুর শর্মা সাফল্য তুলে আনলেন। মেঘালয়ে ফুটবলের উন্মাদনা থাকলেও মিডিয়ার প্রচার বাংলা মতন ছিলনা। ফলে ৩৪ বছরের দীপাঙ্কুরকে নিয়ে তেমন প্রচার হয়নি।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের মহিলা ফুটবল দলের কোচ অ্যান্থনি অ্যান্ড্রুজ ও চানমারি এফসির কোচ দীপাঙ্কুর শর্মা দুজনেই বয়সে যথেষ্ট তরুণ বলা যায়। কিন্তু দেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ লিগে, দুজনের সাফল্য সকলের নজর কেড়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগে তার সুফলকে সাফল্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে নবীন বা প্রবীণ কোচের মধ্যে অগ্রাধিকারের প্রশ্ন কখনও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না।
ইন্ডিয়ান ওমেন্স লিগ জয়ী ইষ্টবেঙ্গলের মহিলা ফুটবলের তরুণ কোচের কথায়, ‘কঠিন পরিশ্রম ও খেলোয়াড়দের মধ্যে একাত্মতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে কাজ করায় নিশ্চয়ই বিশেষত্ব থাকে। ট্যাকটিক্যাল ও গেম স্টাইলেও এক কোচের সাথে অপর কোচের ভিন্নতা আছে। কিন্তু সাফল্য চাওয়া ও সকলকে সংগঠিত করে সেই সাফল্য তুলে আনার ক্ষেত্রে কোচিং প্রয়োগপ্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। দিনের শেষে সাফল্য পাওয়ার অর্থ, প্রতিটি প্ল্যানিংয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য নিশ্চয়ই থেকেছে। ক্লাব ম্যানেজমেন্ট ও কোচিং স্টাফদের লক্ষ্যপূরণে পৌঁছান সম্ভব হয়েছে। এবং ক্লাবের ঐতিহ্য কিংবা এত সমর্থকদের প্রত্যাশা রক্ষায় ফুটবলারদের মোটিভেশন করার প্রতিদিনকার চর্চা বা টিমওয়ার্ক কাজ করলে খুশি তো হওয়াই যায়। টিম গঠনের পর জুনিয়রদের ও লোকাল ফুটবলারদের তুলে আনার চিন্তা ভাবনা কাজ করে। লিগে শেষের বিশ্লেষণে তারা কতটা প্রাসঙ্গিক থাকলেন, তাও চ্যালেঞ্জিং। সুলঞ্জনা রউল, স্বাতী দেবনাথ, দেবলীনা ভট্টাচার্যদের প্রপার গাইড করতে পারাটাই বিবেচ্য।’
আইলিগে মূলপর্বে প্রমোশন পাওয়া চানমারি এফসির তরুণ কোচ দীপাকুঁড় শর্মার কথায়, ‘কোচিং করানোর প্রশ্নে সিনিয়র ও জুনিয়র কোচের মধ্যে কেউই সুবিধাজনক জায়গায় থেকে কাজ শুরু করেননা। তবে, সিনিয়রদের ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতাকে তো অস্বীকার করা যাবেনা। বিভিন্ন লেভেলের ফুটবলে বিভিন্ন দলকে পরিচালনা করতে হয়। রাজ্য লিগ, আইলিগের দ্ধিতীয় ও তৃতীয় বিভাগের প্রতিটি লেভেলই আলাদা আলাদা ভূমিকায় আছে। ভারতীয় ফুটবলারদের সংস্কৃতি ও বিদেশী ফুটবলারদের সংস্কৃতি কখনও এক হতে পারেনা। আবার দেশীয় ও বিদেশীয় ফুটবলারদের রাজ্য বা দেশভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি আছে। বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিগুলো একত্রিত করার দক্ষতা একেকজন কোচ একেকভাবে প্রয়োগ করেন। সাফল্য পাওয়াটা সকলের নিশ্চয়ই লক্ষ্য থাকে। কিন্তু সেই লক্ষ্যপূরণে ক্লাবের বাজেট ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, আমাদের লিগে দেখলাম একটা টিম খেলোয়াড়দের জিপিএস ব্যবহার করছে। সফটওয়্যার ব্যবহারে খেলোয়াড় থেকে টিমের গেম বিশ্লেষণে কোচিং স্টাফের একাধিক ব্যক্তির যুক্ত থাকার বিষয়টা অন্য আরেক ক্লাবের মধ্যে দেখেছি। বাজেটের জন্যই খেলোয়াড়দের সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা থেকে যায়। টিমকে এখন অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে ট্রাভেল করতে হয়। প্লেন বা ট্রেন ব্যবহারের পর প্র্যাকটিস সেশনের পরিবর্তন বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে। অতএব, নানাবিধ সমস্যাকে অতিক্রম করে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে একের সাথে অপরের অমিল থাকেই। আমি ভাগ্যবান আমার টিম আইলিগের মূলপর্বে উঠতে পেরেছে। আমাকে কিন্তু ১২/১৩ বছর অপেক্ষার পর এই সাফল্য পেতে হয়েছে। যুব দল থেকে রির্জাভ দলকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্লাবে কোচিং করিয়েই উঠে আসতে হয়েছে। তাই ধৈর্য ধরে রেখে কঠিন পরিশ্রম করে যেতে হবে।’
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কোচ অ্যান্হনি অ্যান্ডুজ এএফসি লিগে খেলায় পরিকল্পনা তৈরিতে ক্লাবের সাথে আলোচনার অপেক্ষায় আছেন। চানমারি এফসির কোচ দীপাকুঁড় শর্মা পরবর্তী মরশুমে আরও চ্যালেঞ্জিং কাজের অপেক্ষা করছেন।