একেই বলে ক্রিকেট মাঠে বন্ধু। ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা যেদিন টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নিচ্ছেন বলে ঘোষণা করেন, সেদিনই বিরাট কোহলিও টেস্ট ক্রিকেট থেকে ছুটি নেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের কর্মকর্তারা যখনই জানতে পারেন, বিরাট কোহলিও অবসর নিতে চলেছেন, তখনই তাঁর কাছে অনুরোধ আসে এখনই অবসর নেওয়ার কথা ভাববেন না। গত ৭ মে ভারতের বীর সৈনিকরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করেছিলেন। সেই সময় কোহলি তাঁদের সাফল্য কামনা করে অবসর থেকে বিরত থাকেন।
১৪ বছরের টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর সাফল্য এবং সবার ভালোবাসা বিরাটকে সবসময় এগিয়ে রেখেছে। তাই গত সোমবার অবসর নেওয়ার পরেই বিরাট কোহলি বলেছেন, আমার প্রতি ক্রিকেট ভক্তদের যে আন্তরিকতা, তা কোনওদিনই ভুলতে পারব না। বোর্ড কর্মকর্তারা অনুরোধ করেছিলেন ভারত-পাকিস্তানের যে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এই সময় তোমার অবসর নেওয়াটা সঠিক সময় হবে না। এমনকি কর্মকর্তারা বারবার অনুরোধ করেছিলেন তিনি যেন এই মুহূর্তে অবসরের কথা না ভাবেন। তবে কোহলি তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে কোনওসময়ের জন্য পিছুটান নেননি। অনড় বিরাট কোহলি যে মুহূর্তে জানতে পারলেন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে, তখনই তিনি সবাইকে অবসরের কথা জানিয়ে দিলেন।
পরিবারের সঙ্গে তিনি কথা বলে বেশ কয়েক বছর ধরেই কোহলিকে দেখা গিয়েছে ইংল্যান্ডে বার বার যেতে। এমনকি ইংল্যান্ডেই তাঁর সন্তান জন্মগ্রহণ করেছেন। স্ত্রী অনুষ্কা শর্মা ইংল্যান্ডে থাকেন। তাই স্ত্রীর সঙ্গে সময় অতিবাহিত করার জন্য কোহলিকে বারবার ছুটে যেতে হয়েছে। ১৪ বছরের আগে প্রথম টেস্ট ক্রিকেটের নীল ব্যাগি টুপিটা পরেই তিনি অবসরের কথা ঘোষণা করেন। তিনি টেস্ট ক্রিকেটে নানা পরীক্ষার সামনে মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু কখনওই তিনি দুর্বলতা প্রকাশ করেননি। বরঞ্চ আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে যেভাবে ব্যাট করেছেন ভারতের সাফল্যের জন্য, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। নিজেকে তৈরি করেছেন একাগ্রতার মধ্য দিয়ে। দেশ তাঁর কাছে অনেক বড়, তা সবসময় তাঁর খেলার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। ভারতের জয় কীভাবে আনতে হবে, তার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে তিনি কীভাবে এগিয়ে যাবেন, তা প্রথম জীবনে সেইভাবে অনুভব করতে না পারলেও তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে কীভাবে তৈরি করেছেন, তা নিজেই উদাহরণ। হয়তো সেই কারণেই তরুণ প্রজন্মরা কোহলিকে দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। কোহিলর জীবন তাঁদের কাছে একটা শিক্ষা হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। তাই বিরাট কোহলি সবসময়ই তরুণদের কাছে আদর্শ ক্রিকেটার।
বিরাট কোহলির টেস্ট ক্রিকেট খেলায় বেশকিছু টুকরো টুকরো কথা রয়েছে, সেই সব কথাগুলি অনেককেই এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিয়েছে। নিজেও শিক্ষা নিয়েছেন। কোহলি সবসময়ই বলতেন, একজন বড় ক্রিকেটারও তাঁদের ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। কোহলির অভিমত, অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া বেশ কঠিন। খুব সহজেই এই সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয় না একজন খেলোয়াড়ের। যে কোনও ফর্ম্যাট থেকে সরে আসতে গেলে তার একটা প্রক্রিয়া তৈরি করতে হয়। সেখানে নিজেকে বার বার জিজ্ঞাসা করতে হয়, এই সময়টা কি উপযুক্ত? এর উত্তর যদি পাওয়া যায়, তাহলেই অবসরের কথা ভাবা উচিত যে কোনও খেলোয়াড়ের। আবার এটাও মনে রাখা উচিত, এমন একটা সময়ে খেলা থেকে সরে দাঁড়াতে হয়, যখন ক্রিকেট ভক্তরা তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারেন। কোহলি আবার বলেছেন, ভারতের ক্রিকেট ভক্তদের কাছে আমি চিরদিনই ঋণী হয়ে থাকব। বিরাট কোহলি তাঁদের জন্যই পরিচয় পেয়েছেন। আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। সেই কারণেই হাসিমুখে বিরাট নিজে টেস্ট জীবনের প্রতিটা দৃশ্যের দিকে ফিরে তাকিয়ে থাকবেন। হয়তো সেই কারণেই ২৬৯ নম্বর টুপিটার দৌড় থমকে গেল।
এদিকে টেস্ট ক্রিকেটে অবসরের পরে মঙ্গলবার বিরাট কোহলি স্ত্রীকে নিয়ে বৃন্দাবনের আশ্রমে হাজির। প্রথমে কোহলিকে মুম্বই বিমানবন্দর ও দিল্লি বিমানবন্দরে দেখা গিয়েছিল। সেখান থেকে তিনি সোজা মথুরায় চলে যান। বৃন্দাবনে শ্রীপ্রেমানন্দ গোবিন্দ শরণজি মহারাজের আশ্রমে পৌঁছন। সেখানে স্ত্রী অনুষ্কাও ছিলেন। ধর্মীয় গুরুর সামনে হাজির হয়ে হাতজোড় করে বসে পড়েন। প্রেমানন্দ মহারাজ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন তোমরা কি খুশি? কোহলি একগাল হেসে মাথা নাড়েন। অনুষ্কার মুখেও দেখতে পাওয়া যায় মিষ্টি হাসি। সেখানে স্ত্রীকে নিয়ে কোহলি বেশ কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করেন। অবশ্য এই আশ্রমে তিনি প্রথম নন, আগেও বেশ কয়েকবার এসেছিলেন। বর্ডার-গাভাসকার ট্রফির পরে দেশে ফিরে এসে বিরাট ও অনুষ্কা মহারাজের আশ্রমে গিয়েছিলেন। মনে হয় জীবনে কোনও একটা বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে শান্তির খোঁজে আশ্রমে যাওয়া বিরাট কোহলির।