• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

এনআরসি ও এসআইআর আতঙ্ক মুর্শিদাবাদের ‘পঞ্চবটী’ গ্রামে

কানুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মেহের শেখ বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও কোনও মহল থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ-১ ব্লকের কানুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে রয়েছে ‘পঞ্চবটী’ গ্রাম। তবে এই ‘পঞ্চবটী’ গ্রামে রাম-সীতার বনবাসস্থল ‘পঞ্চবটী’ বনের মতো রাবণের হামলার আতঙ্ক না থাকলেও রয়েছে এনআরসি ও এসআইআর আতঙ্ক। ছায়ানিবিড় এই গ্রামটির বহু বাসিন্দা এখন এই আতঙ্কে কাঁটা হয়ে আছেন।

এই পঞ্চবটী এবং মীরের গ্রাম এলাকায় মোট ভোটারের সংখ্যা ১৩২৬ জন। ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য প্রভাস হালদার বলেন, পঞ্চবটী গ্রামে মূলত হালদার, দাস এবং ঘোষ পদবীর পরিবারের লোকেরা বসবাস করেন। তাঁরা মাছ ধরা এবং মাছ বিক্রির কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ব্যক্তি এনআরসি-র নোটিস পাচ্ছেন। এর পাশাপাশি বিহারে ‘এসআইআর’ তৈরির সময় প্রচুর লোকের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার বাংলা ভাষায় কথা বলার অপরাধে এই রাজ্যের বেশ কিছু বাসিন্দাকে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে প্রতিবেশী দেশে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়েছে। তারপর থেকেই গ্রামের বহু বাসিন্দা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। প্রচুর গ্রামবাসী ভয় পাচ্ছেন, আগামী দিন এই রাজ্যে এনআরসি বা বিশেষ সংশোধনী ভোটার তালিকা তৈরির কাজ শুরু হলে তাঁদের নিজেদের নাম না বাদ যায়। অনেকের আশঙ্কা আগামীদিনে হয়তো তাঁদের অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।

Advertisement

পঞ্চায়েত সদস্য প্রভাস হালদার আরও বলেন, ২০০০ সালে এই এলাকায় ভয়ানক বন্যা হয়েছিল। সেই সময় প্রচুর লোকের পুরনো নথি জলে ভেসে গিয়েছে। সেগুলো উদ্ধার করা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। তবে ওই গ্রামের বেশ কিছু বাসিন্দা এ বিষয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। তাঁদের দাবি, নিজেদের এবং বাবার ভারতীয় হওয়ার প্রমাণপত্র রয়েছে। তবে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে এই গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দাই তাঁদের দাদু বা আগের পূর্বপুরুষরা কোথায় জন্মেছিলেন বা কী করতেন, তা জানেন না।

Advertisement

উল্লেখ্য, কানুপুর পঞ্চায়েতে পঞ্চবটী গ্রাম কবে গড়ে উঠেছিল কেউ সঠিকভাবে বলতে না পারলেও অনেকেই দাবি করেন পাঁচ জায়গা থেকে লোক এসে এই গ্রাম গড়ে উঠেছিল বলে এর নাম ‘পঞ্চবটী’। এই গ্রামের অনেক বাসিন্দার পূর্বপুরুষ এক সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা ছিলেন বলে জানা যায়। দেশভাগ এবং একাত্তরের যুদ্ধের সময় উদ্বাস্তু হয়ে তাঁরা মুর্শিদাবাদ জেলায় এসে এই গ্রামে বসবাস করতে থাকেন। আজ তাঁদের মধ্যে অনেকের বংশধররাই এই গ্রামে থাকেন। পঞ্চবটী গ্রামের শতাধিক পরিবার মূলত মাছ ধরে এবং চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সম্প্রতি প্রতিবেশী বিহার রাজ্যে প্রায় ৬০ লক্ষ লোকের নাম বাদ গিয়েছে এসআইআর প্রস্তুতের সময়। আবার এই সময়ে উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু বাসিন্দার কাছে অসম সরকারের ‘এনআরসি’ নোটিশ এসেছে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চবটী গ্রামের বাসিন্দারা এনআরসি আতঙ্কে তাঁরা এখন চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের একটাই প্রশ্ন, রাজ্যে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনী প্রক্রিয়া চালু হলে তাঁদের কি আদৌ ভারতের নাগরিকত্ব থাকবে?

কানুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মেহের শেখ বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও কোনও মহল থেকে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ওই গ্রামের মানুষদের সমস্যা নিয়ে আজ আমরা বিশেষ বৈঠকে বসতে চলেছি। আবার রঘুনাথগঞ্জ-১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি গৌতম ঘোষ বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা ”ভাষা আন্দোলনে” নামছি। পাশাপাশি পঞ্চবটী গ্রামের মানুষদের বিরুদ্ধে যে গোপন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে আমরা তারও প্রতিবাদ করছি।’ তিনি বলেন,’বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার, নির্বাচন কমিশনকে সামনে রেখে যে গোপন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, তা আমরা সফল হতে দেব না। তৃণমূল কংগ্রেস ওই গ্রামের সমস্ত মানুষের পাশে থাকবে।’

Advertisement