ব্যাটে বলে দূরন্ত সাকিবের সামনে সব আফগান প্রতিরােধ ভেঙে পড়লাে

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে সােমবার টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ সাত উইকেটে ২৬২ রান করে।

Written by SNS Southampton | June 25, 2019 3:30 pm

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে ব্যাটে বলে সমান দক্ষতায় বাংলাদেশকে জেতালেন সাকিব আল হাসান (Photo Credit: Twitter/@cricketworldcup)

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে সােমবার টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ সাত উইকেটে ২৬২ রান করে। বাংলাদেশের পক্ষে সােমবার সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম এই দু’জন পঞ্চাশাের্ধ্ব রান পাওয়ায় মাশরাফি মাের্তাজার দল ২৫০ রানের গন্ডি পেরােতে পারল।

গত শনিবার আফগানদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের যে হাল হয়েছিল তারই প্রতিচ্ছবি যেন ফিরে এল দু’দিন পর। যদিও আফগানিস্তানের প্রধান ভরসা স্পিনার রশিদ খান ৫২ রান দিয়েও কোনও উইকেট পাননি কিন্তু মুজিবুর রহমান ও ভুলবাদিন নবি অনেকখানি বেঁধে রেখেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের।

লিটন দাস এবং তামিল ইকবাল বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করার পর ২৬টি বল খেলা হতেই লিটন দাস মুজিবুর রহমানের বলে মাত্র ১৬ রান করে হাসমাতুল্লার হাতে ধরা পড়ে যান। ২৩ রানে প্রথম উইকেট চলে যাওয়ার পর তামিল ইকবাল ও সাকিব অল হাসান জুটি দ্বিতীয় উইকেটে ৫৯ রান জুড়ে দিয়েছেন।

১২.৪ বল খেলেই শাকিব বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসমান হিসেবে বিশ্বকাপে ১ হাজার রান পাওয়ার নজির তৈরি করে নিজের ৫১ রান আউট হয়ে গেলেও বিশ্বকাপের ইতিহাসে ১৯তম ব্যাটসম্যান হিসেবে তার এই কৃতিত্ব স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বাঁ হাতি শাকিব নিজের ৩৫ রানে পৌছানাের পরই হাজার রান পূর্ণ করে ফেলেন। বাংলাদেশের প্রথম চারটি ম্যাচে সাকিব দুটি অর্ধশত এবং দুটি শতরানের ইনিংস খেলেছেন আগেই। ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১২১ ও ১২৪ রানের ইনিংস দুটির সহায়তায় শাকিব সােমবার চলতি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নারকে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের নিরীখে টপকে গিয়েছেন।

ওয়ার্নার যেখানে ছটি ম্যাচে ৪৪৭ রান করেছেন, সেখানে সাকিবের রান দাঁড়িয়েছে ছয়টি ম্যাচে ৪৭৬। সাকিব যখন আফগানিস্তানের পেসার মুজিবুর রহমানের একটি ইনসুইংগারে এলবিডব্লু হয়ে যান ৬৯ বলে ৫১ রান করে তখন বাংলাদেশের রান দাঁড়িয়েছিল তিন উইকেটে ১৪৩।

ইনিংসের বাকি ১২২টি বলে বাংলাদেশ যে ২৬২ রানে পৌঁছতে পেরেছে তার সব কৃতিত্ব মুশফিকুর রহিমের। উইকেটরক্ষক রহিম ৮৭ বলে ৮৩ রান করেন চারটি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা সহ। সৌম্য সরকার রহিমকে সহায়তা না দিতে পারলেও মহমদুল্লা এবং মুসাদেক হােসেন এই দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে সমানতালে লড়াই চালিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ইনিংসের দু ওভার বাকি থাকতেই ২৫০ রানে পৌঁছে গিয়েছিল।

রহিম যখন আফগান পেস বােলার দাওয়াত জাদরানের বলে মহম্মদ নবির হাতে ধরা পড়েন তখন বাংলাদেশের রান ছয় উইকেটে ২৫১। ইনিংসের শেষ বলে মুসাদেখ হােসেন ৩৫ রান করে নবির বলে বােল্ড হন। ২৪ বলে করা এই রানে চারটি বাউন্ডারি ছিল।

আফগানিস্তানের পক্ষে পেস বােলার মুজিবুর রহমান ৩৯ রানে তিনটি, জারদান ৬৪ রানে মহম্মদ নবি ৪৪ রানে একটি করে উইকেট পেয়েছে। ভুলবদিন নাইব ৫৬ রানে দুই উইকেট নেন।

আফগানিস্তান যখন ব্যাটিং শুরু করে সূচনা দেখে মনে হয়েছিল শনিবার ভারতের বিরুদ্ধে তাদের জয় ফসকে গেলেও এদিন হয়তাে আফগানিস্তান বিশ্বকাপে তাদের প্রথম জয় পেতে চলেছে। অধিনায়ক তথা ওপেনার ভূলবদিন নাইব ও রহমত শাহ বাংলাদেশের বােলারদের বিন্দুমাত্র পরােয়া না করে প্রথম ৬৫ বলে ৪৯ রান তুলে নেন।

তারপরই রহমত শাহ শাকিব অল হাসানের বলে তামিম ইকবালের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরে যাওয়ার পরই আফগানিস্তানের রান সংগ্রহের চেষ্টায় ভাঁটা পড়ে। রহমত শাহ ৩৫ বলে ২৪ রান করেছেন। হাসমাতুল্লা শাহিদি আসার পর তার ও অধিনায়ক ভুলবদিনের জুটিতে দশ ওভারে ৩০ রান ওঠে।

হাসমাতুল্লা স্পিনার মােসাদেক হােসেনের বলে এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্প আউট হয়ে যান মাত্র এগারাে রান করে। অধিনায়ক ভুলবদিন আজগর আফগানকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ২৫ রান যােগ করার পর সাকিব তাঁর দ্বিতীয় উইকেটটি তুলে নেন। ভুলবদিন লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ধরা পড়েন ৭৫ বলে ৪৭ রান করে।

মহম্মদ নবি এসে মাত্র দুটি বল ক্রিজে ছিলেন। শাকিব তাকে শূন্য বােল্ড করে দেওয়ায় আফগানিস্তান ১০৪ রানে চতুর্থ উইকেটটিও হারায়।

আফগানিস্তান যে জয়ের পথ থেকে ছিটকে গিয়েছে ম্যাচের এই অবস্থায় সেটা পরিষ্কার হয়ে যায়। আজগর আফগান যখন কুড়ি রান করে শাকিব অল হাসানের বলে পরিবর্ত ফিল্ডার শাৰ্বির রহমানের হাতে ধরা পড়েন আফগানিস্তানের রান দাঁড়ায় পাঁচ উইকেটে ১১৭।

শাকিব এদিন তাঁর যথার্থ অলরাউন্ডার হিসেবে পরিচিতি নতুন করে তুলে ধরলেন প্রথমে ব্যাটে ও বল হাতে তাঁর বিধ্বংসী বােলিংয়ের আফগান প্রতিরােধ ভেঙে পড়ে।