• facebook
  • twitter
Sunday, 27 April, 2025

টিম গঠনেই মোহনবাগান এসজি টেক্কা দিল : তনুময় বসু

প্রাক্তন ভারতীয় দলের গোলকিপার তনুময় বসু মোহনবাগান সুপার জায়েন্টসের লিগ-শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের দল গঠনের দূরদর্শীতাকে উল্লেখ করলেন।

প্রাক্তন ভারতীয় দলের গোলকিপার তনুময় বসু মোহনবাগান সুপার জায়েন্টসের লিগ-শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের দল গঠনের দূরদর্শীতাকে উল্লেখ করলেন। ধারাবাহিকভাবে দলের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে,সেসব জায়গায় ভারতীয় দলের ফুটবলারদের নিজেদের দলে যোগদান করিয়েছে। ফলে দলের গভীরতা অনেক বেড়েছে। এবছরের শুরুতেই স্টপার আনোয়ার আলীর দল ছেড়ে যাওয়াযতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, চটজলদি বিদেশি স্টপার এনে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস তাদের রক্ষনের শূন্যতাকে পূরণ করেছে। জোসে মলিনা এবছর মোহনবাগান এসজি’র দায়িত্ব নেওয়ার পরে দল ডুরান্ড কাপে ও আইএসএলের প্রথম তিনটি ম্যাচে আশানুরূপ খেলতে পারেনি। সেসময় নানা সমালোচনার মুখোমুখি হয়েও কোচ মলিনা কোনো কথা বলেননি। আস্তে আস্তে নিজের টিমকে গঠন করে নিয়েছেন। একটা দুটো ম্যাচে কোন অঘটন ঘটলেও,মোহনবাগান এসজি এখন ভারতবর্ষের অপ্রতিরোধ্য টিম হয়ে উঠেছে। দলে এত ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ফুটবলার আছে যে,টিমের কঠিন সময়েও তারা মাঠে নেমে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। ওড়িশা এফসি’র বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দিমিত্রি পেট্রাটোসের গোল করে টিমকে জেতানো, সেকথা প্রমাণ করে। এছাড়া মোহনবাগান এসজির এবছরের রিজার্ভ বেঞ্চ অত্যন্ত শক্তিশালী। ফরওয়ার্ড, মাঝমাঠ,কিংবা রক্ষণে একাধিক বিকল্প ফুটবলার আছে। কোচ মলিনা খুব দ্রুততায় তার প্রথম একাদশ যেমন বেছে নিয়েছেন, তেমনি রিজার্ভ বেঞ্চকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তার সুচিন্তিত পরিকল্পনা প্রতিটি ম্যাচে প্রয়োগ করেছেন। দীপেন্দু বিশ্বাস ও সুয়েল ভাটের মত টিমের জুনিয়র ফুটবলারদের তিনি একাধিক ম্যাচে খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন। মাঝমাঠের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার অনুরুধ থাপা চোট পেলেও, আব্দুল সামাদ ও দীপক ট্যাংরির মতন জুনিয়র ফুটবলারদেরও তিনি সঠিকভাবে প্রয়োগ করেছেন।

প্রাক্তন ফুটবলার তনুময় বসু বর্তমানে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টসের জুনিয়র ও সাব জুনিয়র দলের দায়িত্বে রয়েছেন। মোহনবাগান সুপার জায়েন্টসের সিনিয়র দল সদ্য আইএসএল লিগ-শিল্ডে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মোহনবাগান সুপার জায়েন্টসের জুনিয়র দলগুলোও ইতিমধ্যে প্রাথমিক পর্যায় থেকে ফাইনাল রাউন্ডে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেছে। প্রতি বিভাগেই তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মোহনবাগান সুপার জায়েন্টসের সিনিয়র দল যেমন দুটো ম্যাচ বাকি থাকতেই লিগ-শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তেমনি মোহনবাগানের সাব জুনিয়র ও জুনিয়র দলও,দুটো ম্যাচ বাকি থাকতেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।মোহনবাগান জুনিয়র দলের জন্য বাঁশবেড়িয়া স্পোটিং ক্লাব ও বাঁশবেড়িয়া কিশোর সংঘ মাঠ দুটোকে নেওয়া হয়েছে। অনূর্ধ্ব ১৫ জুনিয়র দল আট ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট অর্জন করেছে।প্রতিটি খেলায় তারা জিতেছে। এবং ৪১ টা গোল করে মাত্র ছটি গোল খেয়েছে।৮ম্যাচে ২০টি গোল করে রাজদীপ পাল ইতিমধ্যেই সকলের নজর কেড়েছে। দলের অপর ফরওয়ার্ড রোহিত বর্মন ইতিমধ্যে ৯টি গোল করে ফেলেছে।অনূর্ধ্ব ১৩ সাব জুনিয়র দল ইতিমধ্যে আট ম্যাচে ২২পয়েন্ট পেয়েছে। এবং ৩৪ টি গোল করে মাত্র ৭টি গোল খেয়েছে। দলের সাগ্নিক কুন্ডু ও রাজ মোদি,দুজনেই ৮টি করে গোল করেছে।অনূর্ধ্ব ১৭ দল ১০ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট পেয়ে ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছে গেছে। প্রসঙ্গত বলা যায়,মোহনবাগান এসজি গত মরশুমেও ও অনূর্ধ্ব ১৫ ও অনূর্ধ্ব ১৭’র ফাইনাল রাউন্ডের খেলায় যোগ্যতা অর্জন করেছিল।

জুনিয়র দল সম্পর্কে তনুময় বসু বললেন, ‘আমাদের বিপক্ষ দল প্রথমার্ধের কিছুটা লড়াই করলেও, কোন ম্যাচেই দ্বিতীয়ার্ধে আর আমাদের সাথে খেলায় পেরে উঠছে না। ১১ থেকে ১৫ বছরের প্রায় ৮০জন ফুটবলার নিয়ে গত দু’বছর ধরে আমাদের এই অনূর্ধ্ব ১৩ ও ১৫ দলের অনুশীলন হচ্ছে। গত মরশুমের ৭জন ফুটবলার এবার অনূর্ধ্ব ১৫ থেকে অনূর্ধ্ব ১৭’র দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে। তেমনি অনূর্ধ্ব ১৩’র ৮জন ফুটবলার অনূর্ধ্ব ১৫ দলে খেলার সুযোগ করে নিয়েছে। অর্থাৎ মোহনবাগান এসজির সাপ্লাইলাইন তৈরি হচ্ছে। একটা সম্পূর্ণ সেটআপ তৈরি করতে অন্তত পাঁচ/ছয় বছর সময় লাগে। এই সুযোগটা পেলে মোহনবাগানের এসজি’র সাপ্লাইলাইন শক্তিশালী হয়ে উঠবে।’
আক্ষেপের সুরে তনুময় বসু বললেন,”বাংলায় প্রচুর প্রতিভাবান ফুটবলার আছে। একাগ্রতা ও ধৈর্যের অভাবে তারা পিছিয়ে পড়ছে। বাংলায় কোয়ালিটি ফুটবলারের অভাব নেই। কিন্তু একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার মধ্যে এরা থাকতে পারছেনা বলেই নিজেদের ফোকাস হারিয়ে ফেলছে।’

ভারতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার তনুময় বসু মনে করেন, ‘আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মোহনবাগানের জুনিয়র দল থেকে সিনিয়র দল পর্যন্ত প্রতিটি বিভাগেই একাধিক বাঙালি ফুটবলার উঠে আসবে। কলকাতা লিগ কিংবা আরএফডিএলে ভবিষ্যতে বাঙালি ফুটবলাররা আধিপত্য দেখাবে।’ মোহনবাগান এসজি’র সিনিয়র কিংবা জুনিয়র দলগঠনের পারদর্শিতাই দলকে সাফল্য এনে দিচ্ছে।