• facebook
  • twitter
Tuesday, 29 April, 2025

ধরাই

শেষ একটা সপ্তাহ সেরকমই একটা সময়। সকালের জলখাবারে পম্পাই’এর অমনোযোগ। সরাসরি প্রশ্ন করি, কী ব্যাপার, খেতে ভাল লাগছে না?

কাল্পনিক চিত্র

মানসশুভ্র সরকার

এক সপ্তাহ হল পম্পাই চুপ মেরে গেছে। এমনিতেই কম কথা বলে, বললেও প্রয়োজনের বাইরে নয়। ইংলিশ মিডিয়াম কালচার ওকে অন্য কিশোরদের থেকে বাড়তি গম্ভীর করেছে। আমার, মানে ওর দাদুর সঙ্গে তো নয়ই। ক্লাস টেনে পড়ে। কারোর এরকম ব্যক্তিত্ব আমার না-পছন্দ।

অবশ্য পম্পাই আসবেই বা কেন! সে চায় ‘গ্যাজেটেড’ পৃথিবীর গল্প, আমি বলি, পঞ্চতন্ত্র আর রূপকথার। আর বলি এই শহরের কথা। মুখ কুঁচকে সামনে থেকে উঠে চলে যায় পম্পাই। ছেলে, ছেলের বউ দু’জনেই মালটিন্যাশনাল। নাতির হাতে উঠে এসেছে স্মার্ট ফোন আর ল্যাপটপ। নেটের সুদৃশ্য অথচ অদৃশ্য কারসাজি। আমি ডড’র অবসরপ্রাপ্ত রাজ্যসরকারী। নাতি আনন্দে মশগুল দেখলে ভাল লাগে।

শেষ একটা সপ্তাহ সেরকমই একটা সময়। সকালের জলখাবারে পম্পাই’এর অমনোযোগ। সরাসরি প্রশ্ন করি, কী ব্যাপার, খেতে ভাল লাগছে না?
—না।
জলখাবারের আয়োজন রান্নার লোকের। পম্পাই’এর বাবা-মা রোজ সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ টা নিরুদ্দেশ থাকে।
আমিই বলি, —কেন?
—তুমি বুঝবে না।
—তুই বুঝিয়ে দিলেই বুঝব।
পম্পাই বেরিয়ে গিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়ায়। আমি ওর পেছনে। আজ বিশ্বকর্মা। আকাশে দু’একটা ঘুড়ি। নাতি মাথা নিচু করে রেলিং– এ ঠেস দিয়ে।
—তাহলে তোর ফেসবুক খুলে বসলেই একটু হয়। মনটা ভাল হয়ে যেত। ওর পিঠে এবার হাত রাখি।
—ভাল লাগছে না।
—সেটাই তো। কেন?
—বললে বুঝবে? স্কুলে ইংলিশে প্রজেক্ট দিয়েছে। করতে পারছি না।
—কেন, তোর স্যর?
—ওয়ান উইক ছুটিতে আছেন।
এক সেকেন্ড চুপ করে জিজ্ঞাসা করি, কী প্রজেক্ট?
—কী হবে শুনে!
আহা বল না—
—প্রায়, ১০০০ শব্দে লিখতে হবে, ‘যদি আমি উড়তে পারতাম….’ ….‘ইফ আই কুড ফ্লাই….’
—তা সমস্যাটা কোথায়?
—সমস্যা! চেষ্টা করছি…. আই ক্যান হাউলি ইমাজিন….
—আচ্ছা। তুই থাক। আমি একটু আসছি। বেরিয়ে যাই বাজারে।

ছাদে এখন আমি আর পম্পাই। চমৎকার হাওয়া। দূর থেকে কোথাও বক্সের গানের দমক।
এক রাশ নীল মুগ্ধতা নিয়ে পম্পাই বলেছে, এত পলিউশন, তাও কী বিউটিফুল না?
আমি হাসি, নে এবার লাটাইটা হাতে নে।
ও বলে, —আমি যে পারি না।
বললাম, —পারতে হবে না। আকাশ দ্যাখ। ঘুড়ি ওড়ানো তো বাহানা। আসলে দু’জনে আকাশ দেখব। এই এক দিন অন্তত।
আমি ঘুড়ি ধরে সুতো টান টান করে বলি, —আমি ঘুড়িটা ছাড়লেই তুই শুধু লাটাই গুটাবি আর ছাড়বি…. হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।
এক বারেই পেরে গেল ছেলেটা। কী তাড়াতাড়ি শিখে ফেলল।
উত্তেজনায় পম্পাই ফুটছে। ঘুড়ির সাথে উড়েই চলল …. উড়তেই থাকল….
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ঘুড়ি যেন এক বিন্দু। লাটাই ওর হাতে ঘুরছে, আর পম্পাই সুতো ছেড়েই যাচ্ছে….
বললাম, —একদম গুটোবি না। ছাড়তে থাক। যত পারিস ছাড়তে থাক।