অরুণ চট্টোপাধ্যায়
ইন্দুর ছোটমাসি যে এত সুন্দর গান গায় তা স্বদেশ জানত না। কোনোদিন জানার সুযোগ পেত না যদি না আজ এই অসময়ে এসে পড়ত। ইন্দু তার ছাত্র। মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে আগামী বার। স্বদেশ ফিজিক্সের ছাত্র ছিল। এখন অবশ্য অফিসে চাকরি করে। কিন্তু চিরকাল অঙ্ক আর বিজ্ঞানে ভাল ছাত্র ছিল। তাই ইন্দুর ছোটমাসি প্রিয়া তাকে রেখেছে যাতে অঙ্ক আর ফিজিক্যাল সায়েন্সে একটু জোর পায় বোনপো।
ইন্দুর বাবা মা কেউ নেই। সেই ছোটবেলাতেই হারিয়েছে। দাদু তাকে নিয়ে গিয়েছিল নিজের কাছে। ভদ্রলোকের ছেলে নেই শুধু দুটো মেয়ে। এদিকে ভদ্রলোক নিজেও নিজের বৌকে মানে ইন্দুর দিদাকে হারিয়েছেন। তাই ইন্দুর মাসিকেই ইন্দুর দায়িত্ব নিতে হয়েছে। মামার বাড়ি নাম হলেও এটা আসলে ইন্দুর মাসির বাড়ি।
—আপনি বিয়ে করেননি কেন?
কথাটা বলেই বেশ লজ্জিত হয়ে পড়েছিল স্বদেশ। সত্যিই তো এমন প্রশ্নে প্রিয়া যদি কিছু মনে করে কিংবা রাগ করে? হয়ত খুব অশালীন প্রশ্ন ভেবে বসতে পারে। তাড়াতাড়ি সামলে নিয়ে বলল, না মানে আমার এমনি কৌতূহল আর কী। প্লিজ কিছু মনে করবেন না। আমি কিছু ভেবে বলিনি।
পড়া হয়ে গিয়েছিল ইন্দুর। এবার স্বদেশের ফেরার পালা। ফিরতেই যাচ্ছিল। এমন সময় প্রিয়া ঢুকল। আজ চা দিতে একটু দেরি হয়ে গেছে প্রিয়ার। সামান্য লজ্জার হাসি হেসে বলেছিল, আজ চা দিতে একটু দেরি হয়ে গেল স্যার।
অগত্যা বসতেই হল। আজ চা করতে সত্যি দেরি হয়েছে প্রিয়ার। কারণ অন্যদিন তো স্বদেশ পড়ানো শেষ করার মধ্যেই সে চা এনে হাজির করে। এই চাটুকু না পেলে একটু উসখুস করে অবশ্য সে। চায়ের মধ্যে কী একটা যেন মিশে থাকে বলে তার মনে হয়। কিন্তু কী যে মিশে থাকে সেটা সে কাউকে কেন নিজেকেও বোঝাতে পারে না।
চা খাচ্ছিল স্বদেশ। তাড়াহুড়ো নয়। বেশ ধীরে ধীরে। খেতে খেতে আড়চোখে তাকাচ্ছিল প্রিয়ার দিকে। বিরাট সুন্দরী না হলেও লাবণ্যের তেমন কোনও ঘাটতি নেই তার শরীরে। তবে কেমন একটা ক্লান্তির ছাপ। একটা পনের ষোল বছরের ছেলে আর বাহাত্তর বছরের বয়স্ক লোকের সব ভার মেয়েটির কাঁধে। নিজের বাবা আর বোনপো।
তাই হয়ত বিয়ের কথা ভাবেনি। মনে মনে এটাই ভেবে নিয়েছিল স্বদেশ। কিন্তু তার কৌতূহল বড় বেশি। প্রশ্নটা করেই ফেলল। আর করেই বেশ লজ্জিত হয়েও পড়ল। অস্বস্তির মুখখানা যেন চায়ের কাপে ডুবিয়ে দিল।
প্রিয়া সামান্য হাসল। বলল, কুন্ঠিত হওয়ার মত অশালীন প্রশ্ন কিছু করেননি আপনি। আসলে সে কথা ভাবার সময় পাই নি। হয়ত এটা আমাকে ভাবার মত কেউ নেইও।
আর দেরি করেনি। চা খেয়ে তাড়াতাড়ি চলে গিয়েছিল স্বদেশ। এ বিষয়ে আর কোনও প্রশ্ন করেনি। যেন মুখটা লুকোতে পারলেই বাঁচে। মনে একটা আশঙ্কা ছিল যদি একটা রূঢ় কিছু উত্তর আসে। প্রিয়া যদি মনে করে তার ব্যক্তিগত পরিসরে ঢোকার এটা স্বদেশের একটা প্রচেষ্টা? তবে প্রিয়া বড় সুন্দর মনের মেয়ে বলে মনে হয়েছিল তার।
আজ অফিসের একটা কাজে বাইরে গিয়েছিল সে। বস বলেই দিয়েছিল, তোমার কাজ হয়ে গেলে তুমি বাড়ি চলে যেতে পারো। কাজ তাড়াতাড়ি মিটে গেল। ইন্দুর একটা রেফারেন্স বই কেনার ছিল। প্রিয়া সে ভার তার মাস্টার মশায়ের হাতেই সঁপেছিল। হয়ত সে নিজে তেমন বাইরে বেরোয় না তাই। মনে পড়ে গেল সেটা। বইটা খুব দরকার তার ছাত্রের। কিন্তু স্থানীয় জায়গায় কোথাও পাচ্ছে না। অর্ডার দিয়ে আনাতেও যে সময় লাগবে ততক্ষণে তার প্রয়োজনই হয়ত ফুরিয়ে যাবে। অন্তত এবারের মত।
বইটা কলেজ স্ট্রিট থেকে কিনে নিয়েই সে ফিরল ভদ্রেশ্বরে। তখন বেলা সাড়ে তিনটে হবে। এই দুপুরে আবার ইন্দুদের বাড়ি যাবে? একটু সংকোচ হওয়াই স্বাভাবিক। দুপুরে একা এই বয়েসের মেয়ের কাছে যাওয়াটা কি ঠিক? অথচ কাল আর পরশু দুদিন অফিস বন্ধ। অফিস থেকে ফেরার পর সে টোটোয় করে ইন্দুদের বাড়ি এসে পড়িয়ে যায়। এই সাড়ে পাঁচটা বা ছটায়। সোম আর বেস্পতি। তারপর আবার টোটোয় করে জিটি রোডে এসে বাস ধরে। চন্দননগরে গঙ্গার ধারের দিকেই থাকে সে। অন্যদিন অফিস থেকে সোজা চলে যায় ট্রেনে। কিন্তু ইন্দুকে পড়াবার এই কটা দিন সে ভদ্রেশ্বরে নেমে পড়িয়ে বাস ধরে বাড়ি ফেরে। সেটাই সুবিধের।
আজ শুক্কুরবার। আজ না গেলে সেই সোমবার সন্ধেবেলা পাবে বইটা। শনি রবি তার নিজের অফিসের ছুটি। মঙ্গলবার থেকে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। আজ পৌঁছে দিলে দুটো তিনটে দিন তবু পড়তে পারবে ছেলেটা। অনেক কাজে লাগতে পারে ছাত্রের।
সেই ভেবে সে টোটোয় উঠে জিটি রোডে যাওয়ার বদলে নেমে পড়ল মাঝখানে। নেমে এগিয়ে গেল ছাত্রের বাড়ির দিকে। ইন্দু এখনও স্কুলে। বাড়িতে একা প্রিয়া আর তার বুড়ো বাবা। হয়ত কাজ সেরে ঘুমুচ্ছে তারা। স্বদেশ এই সামান্য কারণে গেলে বেশ অখুশি হতে পারে। হয়ত ভেবে বসতে পারে এটা তার কোনও দুরভিসন্ধি। একটা সন্দেহের ছোঁয়া লেগে থাকতে পারে তার চোখেমুখে।
কিন্তু এই অসময়ে না এলে এই চমৎকার জিনিসটা জানা হত না স্বদেশের। বাড়ির বেশ একটু দূর থেকে গান ভেসে আসছে। চমৎকার রবীন্দ্রসঙ্গীত। টিভিতে নয়, তাহলে সঙ্গে বাজনা থাকত। একেবারে খালি গলায়। গলাটা প্রথমে ঠিক চিনতে পারল না। অনেক সময় কথার স্বর আর গানের সুর বেশ একটু আলাদা হয়। পদার্থবিদ্যার লোক তাই সুর আর স্বরের পার্থক্য ভালো বোঝে।
জানলা দিয়েই ভেসে আসছে গানটা। বারান্দার পরে ডাইনিং রুমে গান গাইছিল প্রিয়া। ডাইনিং রুমের দরজা খোলা। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে বেশ। ডাইনিং রুমে কী একটা করতে করতে হালকা চালে গানটা গাইছে সে। গেটের পাশে ঝপ করে একটু আড়ালে লুকিয়ে গেল স্বদেশ। প্রিয়ার গানটা পুরো শুনতে চায় সে। দাঁড়িয়ে মন দিয়ে শুনছিল। মোহিত হয়ে গিয়েছিল একেবারে। প্রিয়ার গলা এত সুন্দর? এত অপূর্ব গান করতে পারে সে? কলিং বেল বাজাতে মন চাইল না। গানের রেশ কেটে যাবে। কেউ না হলেও এমনকি প্রিয়া নিজে না হলেও একজন নিশ্চয় অভিযোগ করবে। জানলার বাইরের এই বাতাসটা, সেও যে একমনে শুনছে প্রিয়ার গান। উপভোগ করছে নিজের শরীরে বয়ে নিয়ে যাওয়া অনুরণন। সত্যি কথা বলতে কী, সেই তো এমন সুন্দর সুর ভাসিয়ে নিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে স্বদেশের কানে।
কলিং বেল বাজাতে হল না। গান থামিয়ে নিজেই বারান্দায় চলে এল প্রিয়া। বোধহয় গান গাইতে গাইতেই তার চোখে পড়ে গেছে বাইরের কিছু। বেরিয়ে এসেই দেখতে পেয়েছে স্বদেশকে।
—ওমা আপনি? বেশ সুন্দর করে হেসে কথাটা বলল সে। অসময়ে গান ভঙ্গ হবার বিরক্তি এতটুকু নেই চোখেমুখে। বরং একটা খুশির ঊজ্জ্বলতা। কেউ একজন যে লুকিয়ে শুনছে তার গান এটাই হয়ত খুশির কারণ।
—এই ইন্দুর বইটা দিতে। আপনি কিনতে বলেছিলেন। কুন্ঠা জড়ানো গলায় বলল স্বদেশ, অফিস থেকে ফেরার পথে কলেজ স্ট্রিট থেকে কিনেছি। অফিসের কাজ আগে শেষ হয়ে গেল। তাই এই দুপুর বেলায়—
প্রিয়া সঙ্গে সঙ্গে বলল, সংকোচ করবেন না। আসুন। সত্যিই তো বইটা আজ পেলে ইন্দুর খুব ভাল হবে। এই দু’দিন সে অনেকটা পড়ে ফেলতে পারবে। খুব ভাল কাজ করেছেন।
গেট খুলে এক পাশে সরে দাঁড়িয়েছে প্রিয়া। ভদ্রতার খাতিরে ভেতরে গিয়ে বসতেই হল। ডাইনিং আর কিচেন একসঙ্গেই। ডাইনিং টেবলের একপাশে বসার ব্যবস্থা। পর্দা ফেলার ব্যবস্থা আছে। এখন অবশ্য পর্দা তোলা। চা করছে প্রিয়া। ওভেনের টেবিল এদিকে। তাই এদিকে ফিরেই চা করছে প্রিয়া। ছিমছাম চেহারা খানা ছিমছাম শাড়ি ব্লাউজে বেশ আকর্ষণীয় লাগছে। চা করতে করতে শরীর যে সামান্য দুলছিল তা যেন খানিক আগে গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরেই দুলছে বলে মনে হল স্বদেশের। মুগ্ধ হয়ে দেখছিল সে প্রিয়াকে।
ধূমায়িত চা এনে হাজির করল প্রিয়া। এবার তার সেই চেহারাটা আরও একবার যেন নেশা ধরিয়ে দিল স্বদেশের। মনে হল যেন প্রিয়ার তনুখানি সেই সঙ্গীতের ঘোর এখনও কাটাতে পারেনি। সে যেন সেই সুরে এখনও দোল খেয়েই চলেছে।
চায়ে চুমুক দিয়ে স্বদেশ বলল, আপনি এত সুন্দর গান করেন?
লজ্জা পেল প্রিয়া, কী যে বলেন। একা একা থাকি। বুড়ো বাবা আর কত সঙ্গ দিতে পারে? তাই এই গানই আমাকে সঙ্গ দেয়। অমন করে লজ্জা দেবেন না প্লিজ।
কিন্তু এত মোহিত হয়েছিল স্বদেশ যে তার মনে হল, একা এই গান উপভোগ করার চেয়ে আর কাউকে শোনালে আনন্দ যেন খুব বেশি হবে তার। একদিন প্রিয়াকে না জানিয়ে সেই দুপুর সাড়ে তিনটের সময় বন্ধু নীলোৎপলকে সঙ্গে নিয়ে এল। ভাবল এই সময় তো প্রিয়া গান করে। তাই যদি তাকে না জানিয়ে বন্ধুকে শোনানো যায়। নীলোৎপল একটা কালচারাল ফার্ম কাম মিউজিক প্লেয়ারের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। স্বদেশের মনে হল এই গান তো ভীষণ ভাবে ব্যবসায়িক সাফল্যও আনতে পারে। আর প্রিয়ার গলার সুরেরও বিস্তার লাভ ঘটতে পারে।
বেশ কিছুক্ষণ জানলার পাশে দাঁড়িয়ে থেকেও শোনা গেল না কোনও গান। অবশেষে কলিং বেল বাজাতেই হল। ঘুম চোখে হাই তুলতে তুলতে উঠে এল প্রিয়া। কাঁচা ঘুম ভাঙার জন্যে বিরক্ত হল কিনা কে জানে।
—ওমা আপনি? বলে গেট খুলে দিল প্রিয়া।
—এই বন্ধুকে আনলাম আপনার গান শোনাতে। চেয়ারে বসতে বসতে বলল স্বদেশ।
আজ ডাইনিং-কিচেনের ডিভাইডার পর্দা পুরো টেনে দিল প্রিয়া। হয়ত নীলোৎপল অচেনা বলে। তাই চা করতে করতে প্রিয়ার শরীরের কম্পন দেখতে পেল না স্বদেশ। এই মেয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে রয়েছে সুর আর ছন্দ সেটা বন্ধুকে ব্যাখ্যা করে বোঝাবার সুযোগ পেল না। তারপর ভাবল, এ ভালই হয়েছে। হয়ত অতটা সমীচীন হত না।
চা এনে প্রিয়া হাসল সামান্য, কী যে বলেন মাস্টারমশাই। আমার ওই বাথরুম সং শোনাতে লোক ডেকে এনেছেন? আপনি দেখছি আপনার ছাত্রের থেকেও ছেলেমানুষ।
আজ কিছুতেই গান করতে রাজি হল না সে। অনেক অনুরোধ উপরোধেও না। বলল, আপনি কি পাগল হয়েছেন নাকি? এদিক ওদিক দেখুন কত প্রতিভা অবহেলায় গড়াচ্ছে। তাদের একটু সাহায্য করলেই তো বর্তে যায় বেচারিরা।
চা খেয়ে চলে গেল দু’জনে। একদিন নীলোৎপল বলল, একটা গানের কম্পিটিশন আছে। দেখ যদি তোর ছাত্রের মাসিকে রাজী করাতে পারিস।
কিন্তু কম্পিটিশনের কথায় একেবারে সিঁটিয়ে গেল প্রিয়া, দূর দূর কী যে বলেন মাস্টারমশাই। আমার এই বাথরুম
সং-এ যে লোক হাসবে আর আপনার মত মানী লোকেরও মুখ পুড়বে।
—আপনাকে এবার আর কারোর সামনে গান গাইতে হবে না। শুধু একটা রেকর্ডিং করে দিলেই হবে। আপনার স্মার্ট ফোনেও হবে। ওতেও রেকর্ডার থাকে।
কিছুতেই তা দিতে রাজি হল না প্রিয়া। বলল, আমি কারোর কাছে গান শিখিনি মাস্টারমশাই। যা পেরেছি নিজেই একটু চর্চা করি। আমি গাই শুধু আমার নিজের জন্যেই।
ঠিক একমাস পরে আবার এসে হাজির স্বদেশ। হাসিমুখে প্রিয়াকে বলল, আজ একটু ভাল করে চা করুন দেখি। বেশ ভালো খবর আছে।
প্রিয়া তো অবাক। তবু কৌতূহল চেপে চা করতে গেল। আজ আর ডাইনিং-কিচেনের পর্দা পুরো ঢাকা নেই। খুব সুন্দর লাগছে প্রিয়াকে। আজ স্বদেশের মন বড় ভাল। একটু পরেই সেই সুখবর শোনাবে প্রিয়াকে যার কৃতিত্ব যেন প্রিয়ার থেকেও নিজের কাছে বেশি বলে মনে হলো। আর তাই তার মনে হলো এই অবহেলিত সৌন্দর্য বড় মধুর। দু’চোখ ভরে দেখার মতো।
সেই কম্পিটিশনের খবর। খবরটা ফলাফলের। প্রথম হয়েছে প্রিয়ার গাওয়া গান। প্রিয়া তো অবাক। তার এই বাথরুম সং বাথরুমের বাইরে গেল কীকরে?
—এই প্রতিযোগিতায় কাউকে স্পটে বসে গাইতে হয়নি। বাড়িতে গাওয়া গান সাবমিট করতে হয়েছে।
স্বদেশের কথায় চমক আর কৌতূহল দুই-ই একলাফে অনেকটা বেড়ে গেল প্রিয়ার। বলল, কিন্তু আমি তো—
—জানি। স্বদেশ বলল, নিজে যখন দিলেন না তখন চুরি করতেই হল।
—চুরি! মানে?
মানেটা জানতে পেরে অবাক হবে না খুশি হবে, নাকি লজ্জা পাবে ভেবেই পেল না প্রিয়া। এ কাজে ছাত্রকে জড়িয়ে ফেলতে হয়েছে স্বদেশকে। সেদিন ছিল ছুটির দিন। ইন্দু খাওয়ার পরে ঘুমোয়। কিন্তু আজ ঘুমোয়নি। এদিকে প্রিয়া তার বোনপোকে লজ্জা পায় না। তার সামনে স্বাভাবিক ভাবেই গায়। ইন্দু লুকিয়েই টেপ করেছিল সেটা তার ছোট্ট রেকর্ডিং মেশিনে।
সেই রেকর্ড করা গান ভরা গ্যাজেট দিয়েছিল স্বদেশের হাতে। স্বদেশ সেটাই সাবমিট করেছিল। প্রতিযোগিতা ছিল খালি গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার। শুধু রেকর্ডিং সাবমিট করলেই হবে।
তিনমাস পরের কথা। প্রিয়ার গাওয়া ছ’টা রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে নীলোৎপলের প্রতিষ্ঠানে একটা অ্যালবাম বেরিয়ে গেল। প্রিয়া নিজে স্টুডিওতে গিয়ে গেয়েছে। স্বদেশ তাকে নিয়ে গিয়েছিল। লজ্জা ভেঙে গেছে তার। মনে সাহস এসেছে। নিজের বাথরুম সং-কে আর নিজের বাথরুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি প্রিয়া। পৌঁছে দিতে চেয়েছে সকলের মনের দুয়ার প্রান্তে।
সুন্দর হেসে স্বদেশকে শুধু একবার সে বলেছিল, কী যেন হয়ে গেল— আপনি কী যে করলেন!