• facebook
  • twitter
Wednesday, 9 July, 2025

পথ দুর্ঘটনা কমাতে বাসচালকদের মনোচিকিৎসক দিয়ে কাউন্সেলিংয়ের প্রস্তাব পরিবহনমন্ত্রীর

চিকিৎসা চলাকালীন কর্মীদের ভাতা দাবি সংগঠনের

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

রাস্তায় দুটি বাস বা অন্য গাড়ির রেষারেষি, বাস চালকদের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয়, পথচারী ও যাত্রীদের প্রতি দায়িত্ববোধের অভাব, ব্যক্তিগত আচার-ব্যবহার এবং নীতিবোধের অভাবে পথ দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। আর এই পথ দুর্ঘটনা কমাতে বিশেষ চিন্তাভাবনা করছেন রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। বুধবার রাজ্যে তিনদিনের বাস ধর্মঘট বন্ধে বেসরকারি বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক হয় পরিবহন দপ্তর ও প্রশাসনের। সেই বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমাধানসূত্র বের করার পাশাপাশি, রাজ্যে পথ দুর্ঘটনা কীভাবে কমানো যাবে সেই বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। সেই আলোচনাতেই উঠে আসে মনোচিকিৎসক দিয়ে বাসচালকদের কাউন্সেলিংয়ের প্রসঙ্গ। কারণ এই বাস চালক এবং কন্ডাক্টরদের কিছু ভুল চিন্তাভাবনার জন্যই পথ দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। বেঘোরে প্রাণ যাচ্ছে বহু মানুষের। কিন্তু বাস চালকদের কিছু সুঠাম চিন্তাভাবনা, দায়িত্ববোধ ও পারস্পরিক সমন্বয় সেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দিতে পারে।

এই মনোচিকিৎসক দিয়ে বাসচালকদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য তিনি বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠনগুলিকেই দায়িত্ব নিতে বলেছেন। কারণ সরকারি উদ্যোগে একসঙ্গে সব বাসচালকের মনোচিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। সেটা করতে গেলে রাজ্যের পরিবহন ব্যবস্থা স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে। সেজন্য বাস মালিক সংগঠনগুলিকেই উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। তার অর্থ এই নয় এব্যাপারে রাজ্য সরকার নিজের ঘাড় থেকে দায়িত্ব পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলে দিচ্ছে। এই ধরনের শিবিরের আয়োজন করার সময় রাজ্য পরিবহণ দপ্তর সহযোগিতা করবে বলে পরিবহণমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পথ দুর্ঘটনা কমাতে শুধুমাত্র পরিবহন দপ্তর, বাসমালিকেরা কিংবা ট্রাফিক পুলিশ ও প্রশাসন উদ্যোগী হলে হবে না। আগে বাস চালকদের সচেতন হতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের কাউন্সেলিং করালে তাঁরাও যেমন উপকৃত হবেন, তেমনই উপকৃত হবেন পথ চলতি মানুষ।’

তবে বাস চালকদের এই মনোচিকিৎসা বা কাউন্সেলিং-এর প্রসঙ্গে প্রথম আলোচনায় এসেছিল গত ৭ মে। ওইদিন কলকাতার মহাজাতি সদনে অল বেঙ্গল বাস ও মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই সংগঠনের তরফে সংগঠনের তরফে মনোচিকিৎসক দিয়ে বাসচালকদের মনোচিকিৎসা বা কাউন্সেলিং করার বিষয়টি উঠেছিল। সেই সভায় পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী ছাড়াও হাজির ছিলেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, পরিবহণসচিব সৌমিত্র মোহন ও খড়্গপুর আইআইটির পথদুর্ঘটনা বিষয়ক গবেষক ভার্গব মৈত্র। ওই সভায় বাসচালকদের কেন মনোচিকিৎসার প্রয়োজন, সে বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

এই সভায় সংগঠনের নেতা রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, তাঁরা একমত যে, পথদুর্ঘটনা রুখতে বাসচালকদের কাউন্সেলিং প্রয়োজন। তবে সবার আগে জেলায় জেলায় পরিবহন দপ্তরের আরটিও, এআরটিও ও ট্রাফিক পুলিশ বিভাগকে তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে।

সেই সঙ্গে যেহেতু বাস চালকদের ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ অবস্থা, সেহেতু বাস চালক সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এই মনোচিকিৎসা বা কাউন্সেলিং চলাকালীন সময়ে তাদের একটি ভাতা দাবি করা হয়েছে। সিটি আরবান সার্ভিসের নেতা টিটু সাহা বলেন, তাঁরা পরিবহনমন্ত্রীর ইচ্ছাকে মান্যতা দিচ্ছেন। কিন্তু শহরাঞ্চলে এই ধরনের উদ্যোগ যেন প্রত‍্যেক ডিসি পর্যায়ে করা হয়। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট তাঁদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন। কিন্তু আরও একটি বিষয় হল, বাস বসিয়ে রেখে কাউন্সেলিং হলে চালকেরা আগ্রহ দেখাবেন না। কারণ, তাঁরা রোজের ভিত্তিতে রোজগার করেন। তাঁদের কাজ থেকে এক দিন বসে যাওয়ার অর্থ তাঁদের উপার্জন বন্ধ। তাই কাউন্সেলিংয়ের দিন রাজ‍্য সরকার বাসচালকদের ভাতা দিলে তাঁদের বিষয়টিতে আগ্রহ থাকবে।